রোমেলা খাতুন, বয়স মাত্র ১০,অভাব অনটনের সংসার রোমেলাদের। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর ইউনিয়নের গোটেংরা গ্রামের রোমেলার বাবা মো. ইয়াজ উদ্দিন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রোমেলা সবার ছোট। অভাবের সংসারে সন্তানদের ঠিকমতো খাওয়াতে-পরাতে পারেন না রোমেলার বাবা ইয়াজুদ্দিন।
তাই সন্তানের শুধু দু বেলা খাওয়ার দিকে তাকিয়ে পাশের গ্রামের এক লোকের পিড়াপীড়িতে রোমেলার বাবা রোমেলাকে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহেদ আলীর বাসায় কাজের জন্য দেন। শাহেদ আলী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় কর্মরত। এরপর এসআই শাহেদ ৯ মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে তাকে নিয়ে আসে চট্টগ্রামে।
সেই যে মেয়েটা মা-বাবা থেকে চলে গেল, তারপর থেকে রোমেলার বাবা বারবার যোগাযোগ করেও মেয়ের কোন খোঁজ নিতে পারছিলেন না। এ আট মাসে মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে তাদের মাত্র একবার কথা হয়েছে।
মোবাইল ফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হতো ‘আপনার মেয়ে ভালো আছে, এখন কথা বলা যাবে না। ’
কিন্তু দু বেলা পেট ভরে খাবে এই আশায় যে রোমেলাকে বাবা ইয়াজুদ্দিন তুলে দিয়েছিল এই শিক্ষিত ভদ্রলোক নামের দুই পশু এসআই সাহেদ আলী এবং তার স্ত্রী সুইটির হাটে তারা সেখানে রোমেলাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মাত্রারিক্ত দৈনন্দিন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়। এতটুকুন এই বাচ্চা, হটাত নতুন পরিবেশে এসে কাজের ক্ষেত্রে সামান্য ভুল হলেই তার ওপর চালানো হয় অসহনীয় নির্যাতন।
এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের দু’দিন আগে সামান্য একটি কাচের প্লেট ভাঙার অপরাধে শিশুটিকে বেদম নির্যাতন করে এসআই শাহেদের স্ত্রী সুইটি বেগম। তার সারা শরীরে গরম খুন্তির ছেঁকা দেওয়া হয়, সারা শরীর পুড়ে ঘা হয়ে যায়।
এছাড়া তাকে কয়েকবার গরম পানি ও গরম তরকারি ঢেলে ঝলসে দেয়া হয়েছেও বলে জানায় সে। এখন রোমেলার পুরো শরীরে ক্ষত। মাথার চুল উঠে গেছে। মুখ, পিঠ ও ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা সৃষ্টি হয়েছে। কি পিছন আর কি সামনে, শিশু রোমেলার শরীরের আর কোন জায়গা ক্ষত হবার জন্য অবশিষ্ট নেই।
তার দিকে তাকালে যে কারো হৃদয়ে হাহাকার করে উঠবে, চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা হবে এই কোন বাংলাদেশে আছি আমরা??
এরপরেও জানোয়াররূপী মানুসগুলো রোমেলাকে ফেরত দেয়নি। কিন্তু কোরবানির ঈদে এসআই শাহেদ আলী পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বেড়াকোলা গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন জানতে পেরে গত ৯ নভেম্বর রোমেলার পিতা ইয়াজ উদ্দিন সেখানে গিয়ে মেয়েকে আহত অবস্থায় দেখতে পান। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইলে এসআই শাহেদ প্রথমে বাধা দেন। একপর্যায়ে আত্মীয়দের চাপে এসআই শাহেদ আলী রোমেলাকে তার বাবার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন। পরে ইয়াজ উদ্দিন তার শিশুকন্যাকে বাড়িতে আনার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রোমেলার বাবা ইয়াজ উদ্দিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে সাঁথিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। এ অভিযোগে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আয়ুব আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর। পরে এসপির নির্দেশে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করে তা সীতাকুণ্ড থানায় পাঠিয়ে দেয়। আশা করি এই ডায়রী সেখানে কোনকালেও পৌঁছাবেনা, আর পৌঁছালেও এইসব জানোয়ারদের কিছুই হবেনা। কারন সব যে এখন জানোয়ারদের দখলে।
মানুষ যখন পশুর মত আচরন করে তখন মানুষ আর পশুর মাঝে কোন পার্থক্য থাকেনা, এ ধরেনর পশুদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা উচিত......তবে বিচার কে করবে?? আমাদের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী টুকু সাহেবের বাড়িও পাবনার সাথিয়ায়, তিনি কি এ ব্যাপারে ভুমিকা রাখবেন?? সে ক্ষমতা কি উনার আছে?? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি মেয়েটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিবেন?? কারন মেয়েটাতো তারই প্রজাতন্ত্রের এক কর্মচারীর নিষ্ঠুরতার শিকার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।