বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব প্রতিষ্ঠানের নাম সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় বা বিপিএসসি। হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এরা সব সময় একটা তামাশা করে। সরকার দলীয় অযোগ্য, কম মেধাবী, দলীয় পোলাপাইনদের নিয়োগ দেয়াই তাদের একমাত্র কাজ। এই কাজে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই একই গোয়ালের গরু। আমি ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটি বিসিএস ক্যাডার পাওয়ার জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছিলাম, তার সিকি ভাগ না করেও আমার বন্ধুরা অনেকে এখন বড় বড় সরকারি আমলা।
আর কামলা দিয়ে আমাকে পেট চালাতে হয়। ১৭ তম, ১৮ তম ও ২০ তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিবারই আমি ভাইভা থেকে বাদ পড়ি। কারণ, আমার কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না। আমি তখন বিসিএস গাইড লিখে পেট চালাতাম। আমার লেখা গাইড পড়ে অনেকে আমলা হয়েছে।
আর আমার কামলার দিন শেষ হয়নি।
১৭ তম বিসিএসে আমি পিএসসি'র চেয়ারম্যান এস.এম.এ. ফায়েজ স্যারের বোর্ডে পড়েছিলাম। ৩৮ মিনিট আমাকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। ১৮ তম বিসিএসেও আমি পিএসসি'র চেয়ারম্যান এস.এম.এ. ফায়েজ স্যারের বোর্ডে পড়েছিলাম। আমাকে ২৯ মিনিট নানান প্রশ্ন করা হয়েছিল।
আর ২০ তম বিসিএসে আমি পড়েছিলাম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক গোলাম রসুল স্যারের বোর্ডে। আমাকে ৪৯ মিনিট নানান প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশাসন ক্যাডার বাদ দিয়ে ২০ তম বিসিএসে আমি প্রথম পছন্দ দিয়েছিলাম পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার। তাও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭ তম বিসিএসে বিএনপি দলীয় পোলাপাইন ঢুকলো।
১৮ তম তে ঢুকলো বিএনপি আর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে। আর ২০ তম তে বাবার আওয়ামী লীগের দলীয় পোলাপাইন এককভাবে ঢুকলো। আর আমরা তাই দেখে দেখে আঙুল চুশলাম।
পিএসসিতে চাকরি করে এমন পিয়নের মেয়েরও বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমাদের এক বন্ধুর কাজিনকে ভাইভাতে কয়েকটি শাড়ির নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
তার প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয়েছে। আর আমার সেই বন্ধু ১৮ তম, ২০ তম, ২২ তম, ২৪ তম তে না পেড়ে যুদ্ধে বন্ধ ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এমবিএ করে এখন পার্থে সেটেলড হয়েছে। আমাদের মতো গরিব ঘরের পোলাপাইন সরকারি চাকরির বয়স শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিসিএস যুদ্ধ টা চালিয়ে যায়। তারপর প্রাইভেট কোথাও চাকরি নেয়। আর বাকি জীবন হায় হুতাশ করে।
আর ছাত্র জীবনে যারা ব্যাক বেঞ্চার ছিল। পড়াশুনায় খারাপ ছিল, তারা দলীয় পরিচয়ে এসপি, এডিসি, টিএনও। এই হচ্ছে পিএসসি'র কার্যকলাপ।
সরকার দলের একজন কো-অরডিনেটর থাকেন। তিনি একটি তালিকা পাঠান পিএসসিতে।
সেই তালিকায় প্রিলিমিনারি ফেল করা পোলাপাইনও চাঞ্চ পায় দলীয় শক্তির জোড়ে। আর মেধাবী হয়েও আপনার যদি দলীয় পরিচয় না থাকে, বা বিরোধী দলীয় পরিচয় প্রকাশ পায়, তাহলে সব শেষ। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটে প্রতি বছর। এক শ্রেণীর দালাল বিজি প্রেসের মাধ্যমে টাকা হাতাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। এটা এখন একটা নিয়মিত খাসিলতে পরিনত হয়েছে।
কুত্তার লেজ নাকি ঘি দিয়ে টানলেও সোজা হয় না। পিএসসি'র অবস্থা হয়েছে তাই। কতো হাজার হাজার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে পিএসসি তালবাহানা করেছে দলীয় কুটক্যাচালে সেই ইতিহাস কোথাও লেখা হয় না। আমাদের চতুর্থ শ্রেণীর যোগ্যতার রাজনীতিবিদের মাথা মোটা গোয়ার্টুমির কারণে পিএসসি'র নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। দলীয় কেউ দালালী করলেই পিএসসির মেম্বর বা চেয়ারম্যান হওয়া যায় এদেশে।
আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলি। গণতন্ত্র রক্ষা করার কথাও বলি। আর নিজেদের অদক্ষতা, অপরিপক্কতা দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করি। এই হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের কেরামতি। গণতন্ত্রে দুষ্টু লোকের ভারী দাম।
মেধাবীদের ছিটকে পড়ার নিয়ম। আর কিছু পা চাটা বুদ্ধিজীবী আছেন যারা পাতা পাতলেই খাবার জন্য হন্যে হয়ে ছোটেন। এইসব মার্কা মারা বুদ্ধিজীবীরা দেশের বারোটা বাজিয়ে নিজেদের সকল স্বার্থ হাসিল করে বেড়াচ্ছে। ধামাধরা বুদ্ধিজীবীরা দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। তোষামোদ করতে করতেই এদের জীবন শেষ।
আর এদের ছেলেমেয়েরা দলীয় সুযোগ সুবিধার কারণে বাইরে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে বাপের প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আর দেশের মেধাবী ছাত্ররা যারা বাইরে যেতে পারে না, বিসিএস হয় না, তারা এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আর দলীয় হীনমন্য অদক্ষ মেধাশূণ্য বালকদের অধীনে চাকরি শুরু করে পেট বাঁচাতে। এভাবেই একটা দেশে সুপরিকল্পিত ভাবেই মেধাবীদের রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে রাখা হচ্ছে বিগত ৪২ বছর।
একজন ওবায়দুল কাদেরের কি যোগ্যতা যে সে একজন কেবিনেট মন্ত্রী? একজন দীপু মনি'র কি যোগ্যতা যে সে একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রী? একজন পিন্টু'র বা হাজী সেলিমের কি যোগ্যতা যে তারা দেশের এমপি নির্বাচিত হন? একজন শামীম ওসমান কি যোগ্যতা নিয়ে নারায়নগঞ্জের নবাব সেজে বসে আছেন? একজন তারেক রহমান বা কি যোগ্যতা নিয়ে আগামীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার? একজন জয়ের বায়োডাটা কি বলে? দেশের মানুষকে সে কতোটুকু চেনে যে সে একজন ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার। কথার পিঠে কথা বাড়ে।
একজন খালেদা জিয়ার কি এমন যোগ্যতা যা নিয়ে তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন? একজন শেখ হাসিনা কোন যোগ্যতায় দেশের দুইবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী? দেশের মেধাবীদের এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমরা তাদের আনুগত্য নিয়ে হাজার বছর দেশে মেধাশূণ্য গণতন্ত্রের তালবাহানা দেখব নাকি মেধাবীদের যোগ্য আসনে সুযোগ করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করব?
বাংলাদেশকে আগামী প্রজন্মের নতুন ছেলেমেয়েরা মেধাবীদের যোগ্য স্থানে বসিয়ে সম্মানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী সোনার বাংলা গড়ে তুলবে বলেই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি। আমরা এই বৈষম্যমূলক তালবাহানার গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রকে আর মেধা শূণ্য করতে দিতে নিশ্চয়ই চাইব না। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ওনার চারপাশে তো সব চোর। ভালো মানুষ তো একটা খুঁজে পাচ্ছেন না।
কথা সত্য। এখনো আমাদের মন্ত্রীসভায় আবুলরা মন্ত্রী আছেন। হাবুলরা সিনিয়র সচিব আছেন। কাবুলরা বিচারপতি আছেন। মাবুলরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আছেন।
আর মেধাবীরা আবদুল হয়ে ঘোড়ার ঘাস কাটছেন।
বিসিএস পরীক্ষায় কোটা যদি থাকে তাহলে তার প্রয়োগ হবার কথা তো চূড়ান্ত বাছাইয়ের সময়। প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষায় কিসের কোটা? আগে তো আপনাকে ভাইভা পর্যন্ত যেতে হবে। যে ভাইভা পর্যন্ত যেতে পারবে না, তার তো আসলে বিসিএস পাস করার যোগ্যতা নাই। আমি কিন্তু তিনবার বিসিএস পাস।
চূড়ান্ত বিবেচনায় আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে দেশের নষ্ট রাজনীতির কারণে। আমি কিন্তু ফেল করিনি ভাই। কিন্তু যাদের নাম বললাম, এদের কেউ যদি প্রিলিমিনারি পাস করতে পারে, আমি স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ থেকে নির্বাসনে যাবো। আমি চ্যালেঞ্চ ছুড়ে বলতে পারি, অনেক মেধাবী ছেলেমেয়েরা পিএসসি'র ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের ভাইভা নিলে তারা নিশ্চিত ফেল করবে। দুনিয়ার অনেক ঘটনা আছে যা আপনার জানার কথা নয়।
আমি চ্যালেঞ্চ দিয়ে বলতে পারি, দশটি প্রশ্ন করব, তারা নয়টি পারবে না। কিন্তু তারা যে সব প্রশ্ন করে আমাদের মেধার যোগ্যতা যাচাই করছে, সেখানেই গলদ। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন করা উচিত ভাইভা প্রথা বাতিলের দাবীতে। লিখিত পরীক্ষা যতো রকম আছে নাও, ভাইভা প্রথা তুলে দাও। কারণ, চূড়ান্ত বাছাইয়ে কেবল ভাইভা'র দোহাই দিয়ে আপনি কলতে পারেন না যে অমুক পারেই না।
বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত যারা যায় তাদের মেধার পার্থক্য ঊনিশ আর বিশ। আপনি পাঁচটা প্রশ্ন করে জীবন নিয়ে লটারি খেলতে পারেন না। আপনাকেও তিনটা প্রশ্ন করলে আপনি একটাও পারবেন না, এটা আমি জানি। সো, বিসিএস পরীক্ষায় কোটা বাতিলের পাশাপাশি আমি ভাইভা পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলনে সব সময় আছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।