বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
প্রাচীন ভারতের মানচিত্রে মগধের অবস্থান। প্রাচীন ভারতের পূর্বকোণে একটি রাজ্য মগধ । সেই নগরের রাজধানী রাজগৃহ নগরে ছিল মুক্তমনা দার্শনিকদের পদচারণা।
যে কারণে রাজগৃহ নগরটিকে প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স নগরের সমকক্ষ মনে করা যায়; কেননা, রাজগৃহ নগরে দার্শনিক মহলে তৎকালীন প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ বেদকে উপেক্ষা করে স্ফূরণ ঘটেছিল স্বাধীন চিন্তার । এবং এই সব দার্শনিকদের পাশাপাশি রাজগৃহ নগরে ধর্মপ্রচার করতেন গৌতম বুদ্ধ এবং জৈনধর্মের মর্ধমান মহাবীর। যদিও এই ধর্ম দুটি যতটা ধর্মীয় চিন্তায় আচ্ছন্ন, তার চেয়েও বেশি দার্শনিক ভাবাপন্ন এবং পরম মানবিক।
প্রাচীন ভারতের মানচিত্রে মগধ রাজ্যটির অবস্থান
রাজগৃহ নগরের অন্য নাম হল ‘গিরিব্রজ’’। পরবর্তী কালে অবশ্য মগধের রাজধানী রাজগৃহ থেকে সরিয়ে পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত করা হয়।
তার আগে মগধ রাজ্যটি শাসন করতেন শৈশুনাগ এবং হর্যঙ্ক বংশের রাজারা । ৬৮৪ খ্রিস্টপূর্ব হর্যঙ্ক বংশ মগধে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করে এবং এই বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন বিম্বিসার। জীবনানন্দ দাশ এঁকে অমর করে রেখেছেন তাঁর ‘বনলতা সেন’ কবিতায়:
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে ...
বৌদ্ধগ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকয়-তে প্রাচীন ভারতের ষোলটি মহাজনপদের কথা উল্লেখ রয়েছে । এই ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে অন্যতম ছিল মগধ । বর্তমান দক্ষিণ বিহারের পাটনা ও গয়া জেলায় অবস্থিত ছিল প্রাচীন মগধ।
(বাংলার একটি লোকগীতিতে গয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে এভাবে: আমি গয়া গেলাম কাশী গো গেলাম/ সঙ্গে নাই মোর বৈষ্ণবী। এতে বোঝা যায় প্রাচীন মগধের ভাব-দর্শনের সঙ্গে বাংলার বাউলগানের কিছু একটা সর্ম্পক রয়েছে) ... সে যাই হোক। মগরের রাজা বিম্বিসার -এর পুত্র অজাতশক্র তার বাবাকে কারাগারে অন্তরীণ করে রেখেছিলেন। বিম্বিসার কারাকক্ষে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ, বিম্বিসার মানুষ হিসেবে ছিলেন উদার।
এবং তিনি অহিংস বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নিয়মিত দানধ্যান করতেন। তাঁর এমন করুন মৃত্যু কাম্য ছিল না। অজাতশক্র এর স্বভাব ছিল যুদ্ধং দেহী। তিনি গঙ্গনদীর উত্তরে ‘সম্মিলিত কৌমরাজ্য’ আক্রমন করেছিলেন।
এতে পূরণ কশ্যপ নামে রাজগৃহ নগরের একজন দার্শনিক উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। বুদ্ধও প্রচন্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন। যাই হোক। প্রাচীন মগধের এসব স্বার্থসংঘাত সত্ত্বেও রাজগৃহ নগরের অভূতপূর্ব সমৃদ্ধির কথা জানায় যায়। বিশেষ করে নগরটির দার্শনিক মহলের চিন্তার জগৎ অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল।
তার মানে নগরের সুশীল সমাজে এক মাত্র সত্য বলে বলপূর্বক বৈদিক মত চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।
এর কি কারণ?
‘ ভগবান বুদ্ধ’ বইতে ধর্মানন্দ কোসম্বী এর এক গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কোসম্বী লিখেছেন,‘বুদ্ধের সময় মগধ ও কোসল, এই দুই দেশের অবিরত শ্রীবৃদ্ধি হইতেছিল ; আর উভয়রাজ্যই সম্পূর্ন একচ্ছত্র শাসনের অধীন ছিল। মগধের রাজা বিম্বিসার ও কোসলের রাজা পসেনদি (প্রসেনজিৎ), উভয়ই উদার-হৃদয় ছিলেন বলিয়া, তাঁহাদের একাধিপত্য প্রজাদের সুখাবহ হইয়াছিল। তাঁহার উভয়েই যাগযজ্ঞে (অর্থাৎ বৈদিক প্রথা) উৎসাহ দিতেন সত্য, কিন্ত তাঁহাদের রাজ্যে শ্রমণদের (পরিব্রাজকদের) স্বীয় ধর্ম প্রচার করার পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল।
’ (পৃষ্ঠা, ১২) বুদ্ধের সময় বৌদ্ধধর্ম বাদেও আরও ছোটবড়ো এই রকম ৬২টি শ্রমণসংঘ (School of thoughts) বিদ্যমান ছিল। ধর্মানন্দ কোসম্বী শ্রমণদের ‘পরিব্রাজক’ বলে উল্লেখ বলেছেন।
প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকেরাও তো পরিব্রজক ছিলেন।
অন্তত সোফিস্টরা (sophists) ...
প্রাচীন গ্রিসের পরিব্রাজক দার্শনিকদের সম্বন্ধে Internet Encyclopedia of Philosophy লিখেছে: The growing demand for education in 5th century BCE. Greece called into existence a class of teachers known as sophists. They were a professional class rather than a Greek school or a category of Greek philosophy, and as such they were scattered over Greece and exhibited professional rivalries. The educational demand was partly for genuine knowledge, but mostly reflected a desire for spurious learning that would lead to political success. They wandered about Greece from place to place, gave lectures, took pupils, and entered into disputations. For these services they exacted large fees, and were, in fact, the first in Greece to take fees for teaching wisdom.
সোফিস্ট দার্শনিক প্রোটাগোরাস। ( খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০-৪২০)
...বাক্যের পার্টস অভ স্পিচ সম্বন্ধে ধারণা ইনিই প্রথম দিয়েছিলেন।
সম্ভবত রাজগৃহ নগরের দার্শনিকরা জ্ঞানের বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করতেন না। অর্থাৎ তাঁরা প্রাচীন গ্রিসের সোফিস্টদের মতো পেশাদার দার্শনিক ছিলেন না । তাঁরা জ্ঞান চর্চা করতেন নির্মল আনন্দের জন্য। আমি আগেই বলেছি বুদ্ধ এবং মহাবীর রাজগৃহ নগরে ‘ধম্ম’ প্রচার করতেন। তাঁদের পাশাপাশি অজিত -কেশকম্বলী, মস্করী (বা মখখলি) গোশাল, পূরণ কশ্যপ, প্রক্রুধ কাত্যায়ণ এবং সঞ্জয় বৈরট্টিপুত্র তাঁদের স্বাধীন মত প্রচার করতেন।
যা অনেক সময় ছিল প্রচলিত সামাজিক বিশ্বাস বা মূল্যবোধের ঘোর বিরোধী। প্রাচীন গ্রিসের সোফিস্টদের মতামতও ছিল বিপদজনক। এ প্রসঙ্গে একজন লেখক লিখেছেন: Some of the Sophists were quick to point out that laws, in the legal sense, were human contrivances, frequently enacted in the interest of influential groups.
যেমন অজিত -কেশকম্বলী নাস্তিক চার্বাক দর্শনে বিশ্বাস করতেন, । প্রাচীন ভারতের নিরেশ্বরবাদী চিন্তাকে বলা হয় চার্বাক। চার্বাক মতকে লোকায়ত মতও বলা হয়।
চার্বাক একজন না অনেকজন সে বিষয়ে বির্তক রয়েছে। কারও কারও মতে "চারুবাক" থেকে চার্বাক শব্দের উৎপত্তি। চার্বাকরা সম্ভবত মিষ্টি মিস্টি কথা বলত, মানের রসের কথা বলত। "কী হবে সাধনা করে-একটাই যখন জীবন-তখন যতটুকু পার সুখভোগ করে নাও না কেন!" ...মনে করা হয় যে বৃহস্পতি নামে একজন নিরেশ্বরবদী দার্শনিক চার্বাক মতবাদের প্রবক্তা। বৃহস্পতির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০।
বৃহস্পতি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। বিশ্বাস করতেন না বেদ-এ। মানতেন না বৈদিক যাগযজ্ঞ।
কেন? কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন-এ জগতে কিছুই অমর না। এমন কী মানবজাতিও।
সবই যখন মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে তখন সুখভোগই মুখ্য হোক না কেন জীবনে? বিস্তারিত দেখুন
অজিত -কেশকম্বলী চার্বাক মতাবলম্বী ছাড়াও উচ্ছেদবাদী ছিলেন। তাঁর মতে, ‘দান যজ্ঞ হোম-এইগুলির মধ্যে কিছুই নাই। ভালোমন্দ কোনো কর্মেরই ফল বা পরিণাম নাই; ইহলোক,পরলোক,মাতাপিতা অথবা ঔপপাতিক (দেবতা অথবা নরকবাসী) প্রাণী নাই;ইহলোক ও পরলোক ঠিক ঠিক ভাবে জানিয়া ও বুঝিয়া যিনি অন্যকে তাহার সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে পারেন, এমন তত্ত্বজ্ঞ ও সত্যপথের জ্ঞাতা শ্রমণ ব্রাহ্মণ এই পৃথিবীতে নাই। মানুষ চারিটি ভূতে গড়া। সে যখন মারা যায়, তখন তাহার শরীরের পৃথিবী ভূতটি পৃথিবীতে, জল ভূতটি জলে, তেজ ভূতটি তেজে এবং বায়ূ ভূতটি বায়ূতে মিশিয়া যায়: আর ইন্দ্রিয়গুলি আকাশের মধ্যে ঢুকিয়া যায়।
মৃত মানুষকে খাটিয়ার ওপর শোয়াইয়া, চার ব্যাক্তি শশ্মানে লইয়া যায়। সেখানে তাহার গুণ ও দোষ সম্বন্ধে লোকে চর্চা করে; কিন্তু তাহার অস্থি সাদা হইয়া ভস্ম হইয়া যায়। দানের মাহাত্ম মূর্খ লোকেরাই বাড়াইয়াছে। যাহারা শাস্ত্রের দোহাই দিয়া, পরলোক আছে, এইরূপ বলে, তাহাদের এ-সব কথা একেবারে মিথ্যা ও বৃথা। শরীর নষ্ট হইয়া গেলে, বুদ্ধিমান ও মূর্খ, উভয়েরই উচ্ছেদ হয়, তাহাদের বিনাশ হয়।
মৃত্যুর পর তাহাদের আর কিছুই অবশেষ থাকে না। ’ (ধর্মানন্দ কোসম্বী রচিত ‘ভগবান বুদ্ধ’; পৃষ্ঠা, ১২১)
ভারতের বিহার রাজ্যের একটি বুদ্ধমূর্তি। বুদ্ধপ্রচারিত ধর্মকে ‘দর্শন’ মনে করলেই প্রাচীন রাজগৃহ নগরের দার্শনিকদের মধ্যে একমাত্র বুদ্ধই বিশ্বময় পরিচিতি লাভ করেছেন।
রাজগৃহ নগরের দার্শনিকদের মধ্যে মস্করী গোশাল ছিলেন নিয়তিবাদী । ইনি মখখলি গোশাল নামেও পরিচিত ছিলেন।
মখখলি গোশাল আজিবিক ধর্মসম্প্রদায়ের প্রবক্তা ছিলেন। বেদবিরোধী প্রতিবাদী ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে আজিবিক ধর্মসম্প্রদায় অন্যতম। সাধারণ পরিবারে জন্ম হয়েছিল। জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীর বন্ধু ছিলেন। পরে দুজনের মতাবিরোধ দেখা দিলে দু-জনের পথ ও মত পৃথক হয়ে যায়।
সে যাই হোক। গোশাল ছিলে একাধারে নিরেশ্বরবাদী এবং নিয়তিবাদী । মানুষ সৎ অথবা কঠোর পরিশ্রম করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রন করতে পারে-গোশাল এমনটা ভাবতেন না। তিনি ভাবতেন সমগ্র বিশ্ব এবং সামান্যতম বস্তুও নিয়তির দ্বারা পূর্বনির্দিষ্ট। এ কারণে মানুষ খুব অসহায়।
মখখলি গোশাল মনে করতেন- ভালো-মন্দ কিছুতেই কিছু হয় না। সংসারের সবগুলি চক্রের ভিতর দিয়ে যাবার পরই দুঃখের অন্ত হবে। দুঃখ থেকে মুক্তিলাভের জন্ম মানুষকে বহুবার জন্ম নিতে হবে।
একালের ভারতীয় শিল্পীর তুলিতে মগধের রাজা বিম্বিসার এবং গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধ সন্ন্যাসব্রত গ্রহন করে রাজগৃহে এসেছিলেন।
পান্ডব পাহাড়ের পাদদেশে রাজা বিম্বিসার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। রাজা বিম্বিসার বুদ্ধকে মগধের সৈন্যদলে উচ্চপদ গ্রহন করবার জন্য অনুরোধ করেন। উত্তরে বুদ্ধ বলেন, আমি ধ্যানের জীবন বেছে নিয়েছি।
পূরণ কশ্যপ ছিলেন অক্রিয়বাদী। তাঁর মতে- পাপপূণ্য বলে কিছু নেই।
কর্মফল বলে কিছু নেই। তিনি বিশ্বাস করতেন,‘যদি কেহ কিছু করে, কিংবা কাহাকেও দিয়া করায়,কিছু কাটে কিংবা কাটায়, কাহাকেও কষ্ট দেয় কিংবা দেওয়ায়, শোক করে কিংবা করায়, যদি কেহ যন্ত্রণা পায়, অথবা দেয়, যদি কাহারো ভয় হয়, কিংবা সে অন্যকে ভয় দেখায়, যদি সে কোনও প্রাণিকে হত্যা করে, যদি চুরি করে, ঘরে সিঁধ দেয়, ডাকাতি করে, যদি অতর্কিতে কাহারো গৃহে হানা দেয়, রাস্তায় দস্যুবৃত্তি করে, পরস্ত্রীগমন করে, কিংবা মিথ্যা কথা বলে, তবু তাহার গায়ে কোনও পাপ লাগে না। যদি কেহ খুব ধারালো চক্র দিয়া পৃথিবীর প্রাণিকূল বধ করিয়া মাংসের স্তূপ নির্মান করে, তবু তাতে কোনও পাপ নাই। উহাতে কোনো দোষই হয় না। গঙ্গানদীর দক্ষিণতীরে গিয়া যদি কেহ নরহত্যা করে, কাহাকেও কাটিয়া ফেলে, কিংবা কাটায়, কষ্ট দেয় কিংবা দেওয়ায়, তবু তাহাতে কোনো পাপ নাই।
যদি কেহ গঙ্গার উত্তর তীরে গিয়া দান দেয় অথবা দেওয়ায়, যজ্ঞ করে অথবা করায়, তবু তাহা হইতে কোনো পূণ্য হয় না। দান, ধর্ম সংযম, সত্যভাষণ এই গুলি দ্বারা পূণ্য লাভ করা যায় না। ” (ধর্মানন্দ কোসম্বী রচিত; ‘ভগবান বুদ্ধ’;পৃষ্ঠা ১২০)
হয়তো এ রকমই দেখতে ছিলেন পূরণ কশ্যপ
রাজগৃহ নগরের আরেকজন দার্শনিক হলেন প্রক্রুধ কাত্যায়ণ। ইনি ছিলেন অন্যোন্যবাদী। তিনি মনে করতেন, পৃথিবী জলবায়ূ তেজ, সুখদুঃখ ও জীবন অচল ও কূটস্থ পদার্থ।
এদের কেউ নষ্ট করতে পারে না। প্রক্রুধ কাত্যায়ণ এর মতে, ‘নি¤œলিখিত সাতটি পদার্থ কেহ করে নাই, করায় নাই, নিমার্ণ করে নাই, কিংবা নিমার্ণ করায় নাই; ইহারা বন্ধ্য,কূটস্থ ও নগরতোরণের স্তম্ভের মতো অচল। ( নগর-তোরণের উপর যাহাতে হাতি আসিয়া সোজাসুজি আক্রমন করিতে না পারে, এইজন্য উহার সম্মূখে একটি সুদৃঢ় স্তম্ভ তৈয়ার করা হইত। পালি ভাষায় ইহার নাম ইন্দখীল। ) তাহারা নড়ে না, বদলায় না, পরস্পরের বিরোধীতা করে না এবং পরস্পরের সুখদুঃখ উৎপন্ন করিতে পারে না।
ঐ সাতটি পদার্থ কি? সেই গুলি হইতেছে, পৃথিবী,জল, তেজ, বায়ূ, সুখ,দুঃখ ও জীব। যে ইহাদিগকে মারে, মারায়, শুনে, বলে, জানে অথবা বর্ণনা করে, এমন কেহ নাই। যে ধারলো অস্ত্র দিয়া কাহারও মাথা কাটে, সে তাহাকে হত্যা করে না। শুধু এই সাতটি পদার্থের ভিতর যে ফাঁকা জায়গা আছে, তাহারই মধ্যে অস্ত্রটি প্রবেশ করে, এইরকম বুঝিতে হইবে। ” (ধর্মানন্দ কোসম্বী রচিত ‘ভগবান বুদ্ধ’;পৃষ্ঠা।
১২১) প্রক্রুধ কাত্যায়ণ- এর দার্শনিক মত আমাকে Steady State theory-র কথা মনে করিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, In cosmology, the Steady State theory (also known as the Infinite Universe theory or continuous creation) is a model developed in 1948 by Fred Hoyle, Thomas Gold, Hermann Bondi and others as an alternative to the Big Bang theory (known, usually, as the standard cosmological model).
মগধ এখন ...
সঞ্জয় বৈরট্টিপুত্র ছিলেন অজ্ঞেয়বাদী। সোফিস্ট দার্শনিক Gorgias (খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৫-৩৯০) এর মতো তিনি বিশ্বাস করতেন, Nothing really exists, that if anything did exist it could not be known, and that if knowledge were possible, it could not be communicated. অজ্ঞেয়বাদী হওয়াতে সঞ্জয় বৈরট্টিপুত্র বলতেন: ‘পরলোক আছে কি? আমাকে এইরূপ জিজ্ঞাসা করিলে, যদি আমার মনে হয় যে তাহা আছে, তাহা হইলে আমি বলিব যে, পরলোক আছে। কিন্তু আমার সেরকম মনে হয় না। পরলোক নাই, এই রকমও মনে হয় না।
ঔপপতিক প্রাণী আছে অথবা নাই, মরণের পর তথাগত থাকেন কিংবা থাকেন না, এই সব কিছুই আমার মনে হয় না। ” (ধর্মানন্দ কোসম্বী রচিত ‘ভগবান বুদ্ধ’;পৃষ্ঠা: ১২১)
রাজগৃহ নগরের দার্শনিকরা একাধারে মগধের রাজশক্তি এবং বেদকে উপেক্ষা করে দর্শনের চর্চা করেছেন। এখানেই তাঁদের মাহাত্ম। তারা রাজা বিম্বিসারের মতো একজন উদার রাজার আনুকূল্য যেমন লাভ করেছেন, তেমনি রাজা অজাতশত্রুর সামরিক অভিযান তাঁদের আত্মাকে বিদির্ণ করেছে ...
পরিশেষে উল্লেখ করি যে, প্রাচীন ভারতে সাংখ্য, যোগ, মীমাংশা, বেদান্ত, ন্যায়, এবং বৈশেষিক নামে যে ৬টি দার্শনিক মত ছিল, তার সবগুলিই চর্চা হত রাজগৃহ নগরে। এদের মধ্যে বৈশেষিক দর্শনের প্রবক্তা কণাদ ছিলেন পরমাণুবাদী।
বৈশেষিক দর্শন অবশ্য বৌদ্ধধর্মের চেয়েও অনেক প্রাচীন বলে কেউ কেউ মনে করে থাকে । অবশ্য বৈশেষিক দর্শন-এরও চেয়েও প্রাচীন হল দার্শনিক কপিল প্রচারিত সাংখ্যদর্শন। রাজগৃহনগরে সাংখ্যদর্শনের চর্চাও হত বৈ কী। উদার রাজা বিম্বিসারের পৃষ্ঠপোষকতায় এসব বিভিন্ন ধারার ধর্মসম্প্রদায়ের তর্কবির্তকে প্রাচীন রাজগৃহ নগরটি মূখর ছিল । যেমন উদার শাসক প্লেরিক্লিসের (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫-৪২৯) আমলে দার্শনিক আলোচনায় মূখর ছিল এথেন্স নগর।
এই পোস্টের সহায়ক গ্রন্থসমূহ
সুনীল চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ( প্রথম খন্ড)
বাণী বসু: মৈত্রেয় জাতক
ধর্মানন্দ কোসম্বী : ভগবান বুদ্ধ
Surendranath Dasgupta: A History of Indian Philosophy ( প্রথম খন্ড)
Click This Link
http://www.iep.utm.edu/sophists/
Click This Link
Click This Link
উৎসর্গ: বিহারের পাটনাবাসী (প্রাচীন মগধ) দীপঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায় । কি কারণে যেন সে আমাকে "বাউল দাদা" বলে ডাকে। যার বাংলাদেশের বিক্রমপুর নিয়ে গভীর আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।