শোয়াইব জিবরান
ভোরে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনে পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য। নানা জেলার বাঙলিরা একত্রিত হয়েছেন। তাদের বাত একই। নরসিংদীতে কাল ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে তাদের নেতা হত্যার প্রতিবাদে। আজ ট্রেন যেতে পারবে তো।
পত্রিকা কিনলাম কয়েক কিসিমের। তাদেরও এক রা। উত্তাল নরসিংদী। আমি ফুলপরিবার নিয়ে রওয়ানা দিয়েছি। আ-াবাচ্চা সাহায্য বালিকা নিয়ে সাড়ে চারজন।
এরমধ্যে একটি ট্রেন এল চট্টগ্রাম থেকে। তার মানে আসতে পেরেছে। কিন্তু ঢাকা থেকে সিলেটগামী আমার ট্রেন আসার নাম গন্ধ নেই। ৭টা দশে আসার কথা এখন আট টা দশেও নেই। ছোট বাথরুম লাগলো।
সবাই দেখি এখানে সেখানে সেরে নিচ্ছে। আমার উপায় নেই। গেলাশ যথাস্থানে। দুর্গন্ধ,পানির ব্যবস্থা নেই। কিন্তু পাঁচ টাকা মনে হল গলায় পা দিয়ে নিয়ে নিল।
এক সময় ট্রেনটি এল মানুষ বোঝাই হয়ে। নাম পারাবত। দেখতে মনে হল বাদুড়। দরোজার সামনে হুড়্হুড়ি। আমার কামরা ছ।
ছাগলের ছ। মোটা মোটা সাইজের এক চাচা-চাচি দরোজা আগলে রেখে চাচী দার্শনিকের মতো বললেন- এতো তাড়াহুড়ার কী আছে? ট্রেন সবাইকে নিয়ে যাবে। উঠে ভীড়ের ভেতর সিট খুঁজে পাই না। শেষে আবিষ্কার করলাম আমাদের নির্ধারিত আসনে দার্শনিক চাচা-চাচী আগে উঠেই সমাসীন হয়ে আছেন। যথারীতি প্রমাণপত্রসহ যুক্তিবিদ্যা প্রদর্শন করলাম।
চাচার যুক্তি আরেক কাঠি মানবতাবাদী। আমাদের টিকেট আছে তো কী হয়েছে। এই বুড়ো মানুষ দাঁড়িয়ে এ ভীড়ের মধ্যে কী করে যাবেন? তারা এই তো ব্রাহ্মণবাড়িয়া নেমে যাবেন। বললাম আপনার সিটে যান। তারা টিকেটই করেননি।
এই সামান্য রাস্তায় টিকেট লাগবে কেন? খুবই হক কথা। আমরা এবার একটু মানবিক যুক্তি দেখালাম। উনি বুড়ো মানুষ ঠিক আছে পাশে অন্তত আমার ছাও কে যেন বসতে দেন। যুক্তি ছাড়া উপায় নেই। উনারা আমার আগে নামবেন।
এর বাইরে ন্যায্য কিছু বলতে গেলে উনাদের স্টেশনে হয়ত আমাদেরও নামিয়ে নেবেন। পূর্বে এমন রীতিই দেখেছি। তথাস্তু। ট্রেন চলল কুইথ করে। নরসিংদীতে কেউ আগুন দিল না।
কিন্তু হঠাৎ হল্লা। একজনের পকেট থেকে ভীড়ের মধ্যে সাতাশ হাজার টাকা নিয়ে দু’জন নেমে পড়েছে। বেচারা কুরবানির টাকা হারিয়ে কুরবানির পশুর অবস্থা। তারমধ্যে তাঁর স্ত্রী বকতে লাগলেন। টাকা কেন তার কাছে না রেখে নিজের কাছে রেখেছিলেন।
আমার স্ত্রীও এর সাথে একমত আমার কাছে পোষণ করলেন। নিজেকে বুদ্ধিমান মনে হল। কেননা, আমি যে রেখেছি। ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পর আমরা আমাদের সিটের পূর্ণ দখল পেলাম। কিন্তু দরোজায় দেখি কয়েকটি তরুণ মিলে এটেন্টডেন্টকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
নীচে নামিয়ে দমাদম। মুখ ফুলিয়ে এটেনডেন্ট ছাড়া পেলে ট্রেন ছাড়ল। শুনলাম তাকে তার সহকর্মী জ্ঞান দিচ্ছেন-ছাত্রদের কাছে টিকেট চাইতে যাওয়া ঠিক হয়নি।
তারপর ট্রেন চলতে চলতে এক সময় তার তেষ্ঠা পেল। কিন্তু সে কোন জলাশয়ের পাশে না থেমে থামল পাহাড়ের মাঝখানে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এক সময় হয়ত ভুল বুঝতে পেরে আবার আন মনে চলতে লাগলো। দুপুর এগারোটার ট্রেন শ্রীমঙ্গল পৌঁছালো ২টায়। দেখা গেল স্বজনের মুখ। ঈদ মোবারক।
দিনলিপি ৩/১১/১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।