ভাল মন বর্তমান এ সমাজ ব্যবস্থায় আজও পারিবারিক পছন্দ মেনে নিয়েই বিয়ের মত বড় সিদ্ধান্ত গ্রহনে মেয়েরা বাধ্য হয়। সাংসারিক জীবন পার হয় সুখের ছায়ায় কিন্তু সুখতো আমাকে ছুতেই পারল না। হতে পারত বেদনায়ই আমার জীবনের সমস্ত সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সব আছে তবুও আমরা সুখি নই। এরকমই একটি ঘটনা আজ আমরা জানবো।
হঠাৎ করেই আমাকে দেখতে আসল এক সরকারী চাকুরীজীবি ছেলের পরিবার। ছেলেও সাথে এসে পছন্দ করে বিয়ে করে নিয়ে এল আমায়। ঈদের ছুটিতে এসছিল বলেই এত তারাহুরো। ছেলে অতি ভাল হওয়ায় আমার পরিবার আমাকে হঠাৎ করে খুব জোরতারনায় বুঝিয়েই বিয়ে দিয়ে দিল। আমি তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি।
আমি আমার প্রেমের কথা তাদের বলেও পাত্তা পেলাম না। তাছাড়া আমার বাবা এগুলো একেবারেই পছন্দ করে না। আমার পরিবার প্রেম-ভালবাসায় এলার্জি আছে। বিয়ের আগের একটা ছেলের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকতেই পারে তাই বলে, বেকার, অযোগ্য ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে? আসলে যোগ্যতা বলতে ওর তেমন কিছু ছিলনা। ইন্টার মিডিয়েট পাস, পারিবারিক অবস্থাও তেমন ভাল না।
অনেকদিন ধরেই কিছু একটা করবে বলে চেষ্টা করে কিন্তু হচ্ছিনা। তবে জমিজমা যা আছে, বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করছিল। ২ বছর ধরে আমরা চুটিয়ে প্রেম করি। বলতে পারে, সে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা। ও আমাকে খুব ভালবাসে, দুজন দুজনকে খুব ভালবাসি আজও।
অনেক জায়গায় বেড়িয়েছি, পুরণ করেছি অনেক স্বপ্ন, বুনেছি অনেক নতুন নতুন ধুম্র জাল। ভালবাসার এমন কোন প্রকারভেদ নেই যা আমাদের আলোচনার বাহিরে ছিল। সাক্ষাতে কথা বলেও যেন আমাদের সাধ মিটতো না, কথা চলত ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা রাতের পর রাত। এত ভালবাসা ফেলে রেখে আমি অন্যজনের সাথে সংসার কাটাচ্ছি। ঐ রাতে বাবা-মা তাদের জীবনকে অস্ত্র করে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে।
আমিও সামাজিকতায় ও কন্যা দায়িত্ব পালনে বাবা-মাকে সুখি করতে স্বামীর সাথে ভালবাসার লুকোচুরিতে ব্যস্ত। আমার স্বামীর মত সহজ সরল ও সৎ মানুষ আমার পরিচিত আত্নীয়স্বজন , বন্ধুবন্ধবের মধ্যে দুষ্প্রাপ্য। আমার প্রেমিকের চেয়ে সুন্দর, মজার, হাসিখুশি, আদর্শ স্বামী, প্রকৃত স্ত্রী প্রেমী। ও আমাকে খুব ভালবাসে। আমি নিজেকে প্রশ্ন করে যতটা জেনেছি এবং ওর সকল কথাবার্তা পর্যালোচনা করে যতটা বুঝেছি।
ও আমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনও ভালবাসেনি, এক কথায় আমার প্রেমে মগ্ন। আমার মতই বই পড়ুয়া, গল্প বলতে পারে অনেক সুন্দর করে। তবুও প্রতিদিনই করি নিজের সাথে নিজে নাটকীয় অভিনয়। যেভাবে আমাকে অভিনয় করতে হয়....
#বিশেষ দিন গুলিতে গোলাপ ফুল দেয়, আমার স্বামী প্রেমিকের বঙ্গীতে, হাসিমাখা মুখে, রোমিওর মত কথাবার্তা বলে।
#প্রতিদিনই আমার সৌন্দর্যে মগ্ন হয়ে প্রসংশায় পঞ্চমুখ, মুখে কবিতা আওড়ায়।
#প্রতিদিনই বলে সে I Love You, আমি তোমাকে ভালবাসি, সাক্ষাতে এবং ফোনে কথা বলা শেষে।
#হঠাৎ করে অবাক করা কিছু উপহার দেয়, যা আমার পছন্দ অথবা, সাধারণ কিছু হলেও অনেক পছন্দের।
#আমার যে কোন কথা রাখে, সব কিছুকে অবজ্ঞা করে, সে যে আমার কোন আদেশ পালনে বেশি খুশি।
#ড্রেস উপহার দেয় যে কোন উৎসবে, কেমনে যেন সে আমার পছন্দগুলো জেনে ফেলেছে। বেড়াতে নিয়ে যায় আমার ইচ্ছে হলেই যখন তখন।
#আমার পছন্দগুলোই যেন ওর পছন্দ, এখন ওর অনেক অপ্রিয় জিনিস আমার পছন্দের কাছে হার মেনে প্রিয় হয়ে গেছে।
#শেষ কথা, আমাকে সুখি রাখতে যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত, সিনেমার ডায়লগের মত বলতে হয় “সে আমার জন্য জীবন দিতে পারে”
বিয়ের পরে প্রেমিকের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ, এতকিছু সত্বেও আমি কোন কিছুতেই শান্তি পাই না, সব কিছুই আমার কাছে পুরাতন মনে হয়। স্বামীর উপরের প্রতিটি ঘটনা বা কাজই যেন আমার জীবনে আগেই ঘটে গেছে। ফুল দেয়া, প্রসংশা, ড্রেস দেয়া, গুরুত্ব দেয়া, ভালবাসার কথা বলা, প্রেমালাপ, কবিতা, ভালবাসার গভীরতা সবই আমার কাছে অন্য চেহারায় যেন পুনরায় উপস্থিত হচ্ছে। আমার প্রেমিক আর স্বামী মাঝে শুধু চেহারায় যেন একজন ! ওদের আবেগ, কথা প্রায় সবই মিলে যায়।
আসলে আমি আমার জীবনে দুজন মানুষকেই ভালভাবে জানি ও চিনি। এরা দুজনেই আমাকে তাদের প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসে তা আমি বুঝতে পারি। আমার স্বামীই আমার প্রেমিক, আমার প্রেমিকই আমার স্বামী। তারপরও একই কাজের পুনরাবৃত্তিই যেন আমাকে বিষিয়ে তুলেছে। আমি যেন অবাক হয়ে, বিস্মিত কন্ঠে স্বামীর কোন কিছুই গ্রহণ করতে পারি না।
কেন যেন বারেবারে মনে হয়, আমার প্রেমিক আমার স্বামী হলে, ওর কাছ থেকে আমি প্রতিদিনই নতুন কোন কিছু পেতাম। আমার ভালবাসায় প্রেমিকই সব থেকে বেশি গভীর আবেগ, প্রেম জাগিয়ে তুলতে পারত। আমি আমার স্বামীকে প্রেমিকরুপে গ্রহণ করেও শান্তি খুজে পাচ্ছি না, অনেকদিন ধরে আমার চেষ্টা অব্যহত রেখেও দেখছি, প্রতিদিনই আমার স্বামী কথা, প্রেমিকের প্রথম পাওয়া কথার পুনরাবৃত্তি। কেন এমন হয়? আমিতো আমার প্রেমিককেই অন্য ছেলের মাঝে স্বামী রুপে ভালবাসতে চাইছি। কেন পারছি না? কেন প্রতিদিনের স্বামীর আচরনেই আমার প্রেমিককে মনে পড়ে? নতুন মনে হয় না? মনে হয় এযেন আগেই শুনেছি!!
সূত্র:...................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।