প্রতি বছর ঈদ আসে এক নতুন আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদের এই আনন্দ মানুষকে শিক্ষা দেয় সহমর্মিতা, শেখায় ত্যাগের মহিমা। পারস্পরিক সহযোগিতা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে সদৃঢ় করে প্রতি বছর ঈদ আসে এক নবতর সৌন্দর্যে। ত্যাগের মহিমায় প্রজ্জ্বল ঈদুল আযহা আমাদেরকে কুরবানীর মাধ্যমে আমাদের পশুত্বকে দমন করে মনুষ্যত্বকে পুনরুজ্জীবিত করে। কুরবানীর এই ত্যাগ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে আমাদের আশপাশের মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্রতী হতে।
এই সামান্য সহানুভূতি সমাজের অবহেলিত মানুষগুলিকে অনাহারক্লিষ্ট জীবন থেকে মুক্ত করে যেমন তাদের ভবিষ্যত জীবনকে আনন্দময় করতে পারে তেমনি, দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা। ঈদের এই আনন্দময় দিনে কুরবানীর তাৎপর্যে নিজের জীবনকে রঙ্গীন করে আমরা কি পারি না সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে বিজয়ী করে বাংলাদেশের ট্যুরিসম সেক্টরকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতি নির্ভরশীল দরিদ্র মানুষগুলোর সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে? আমরা কি পারি না একটি ছোট্ট এসএমএস এর মাধ্যমে সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্যুরিজম ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করার মধ্য দিয়ে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে আনন্দময় জীবনের ঠিকানা দিতে? অন্ততঃ ঈদের দিনে আমাদের উচিৎ এই সহানুভূতিটুকু দেখিয়ে সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যে একটি করে এসএমএস পাঠানো। আমাদের প্রতিটি এসএমএস হতে পারে বাংলাদেশের জন্য নতুন অভিযাত্রার এক একটি সম্ভাবনাময় পদক্ষেপ; হতে পারে অর্ধাহারে অনাহারে থাকা সুন্দরবনের প্রতি নির্ভরশীল সংগ্রামী মানুষগুলোর জীবনকে উন্নততর করার একটি সার্থক প্রয়াস।
স্রষ্টার এক অকৃপন, আবারিত সুন্দর উপহার বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন “সুন্দরবন” বাংলাদেশের মোট সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় অর্ধেক। বনের আকাশ ছোয়া সবুজ গাছগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নাম না জানা পাখির সুর, মায়াবী হরিণের নিস্পলক তাকিয়ে থাকা, ভয়ংকর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন, আর বনের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা নদী অথবা খালগুলোর অন্তহীন সৌন্দর্যের সাথে নানা ঐতিহাসিক আর পৌরাণিক কাহিনীর মেলবন্ধন সুন্দরবন ভ্রমন পিপাসুদের কাছে যেমন এক আশ্চর্য সৌন্দর্যের আঁধার তেমনি নৃতত্ববিদ আর প্রকৃতিপ্রেমী বিশেষজ্ঞদের কাছেও রীতিমত এক বিস্ময়।
খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার গর্ব এই সুন্দরবনে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ আর ১৩ প্রজাতির বিরল অর্কিডের পাশাপাশি ৩৭৫ এর অধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণি। সুন্দরী, গরান, পশুর, গোলপাতা আর গেওয়া গাছের ছায়ায় সবুজ হয়ে থাকা এই বনের প্রায় ৪৪০ টির মত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে রয়েছে ২৯১টির মত মৎস্য প্রজাতি। জীববৈচিত্রের এই বিপুল সম্ভার সুন্দরবনকে তাই ১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ইউনেস্কো বিশ্বের একটি ঐতিহ্য ফলক হিসাবে চিহ্নিত করে। বিশ্বের এই স্বীকৃতিকে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সুন্দরবনকে বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের যে সূযোগ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে তা অর্জনের দায়িত্ব আমাদেরই। ইন্টারনেটে অথবা মোবাইলে আমাদের দেওয়া একটি ভোটই পারে সুন্দরবনকে বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের অন্তর্ভুক্ত করতে যেটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে।
আর এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রতি সম্পূর্নভাবে নির্ভরশীল মানুষগুলোর (যেমন জেলে, মধু, গোলপাতা ও কাঠ সংগ্রহকারী) বিপদসংকুল অনিশ্চিত জীবনকে একটু হলেও উন্নত জীবনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ঈদের আনাবিল আনন্দ সবার মাঝে আনন্দ সঞ্চারিত করার প্রত্যয়ে তাই আমাদের উচিত সুন্দরবনকে ন্যুনতম একটি ভোট প্রদান করে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বঞ্চিত মানুষগুলোর ভাগ্য উন্নয়নে ব্রতী হওয়া।
লেখকঃ প্রভাষক, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ, খুলনা পাবলিক কলেজ, খুলনা। ই-মেইলঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।