আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিডনি রোগ : কিছু ভুল ধারণা

ভালকে সমর্থন এবং খারাপকে বর্জন করতে শিখুন । কিডনির অনেক ধরনের রোগ আছে। কিন্তু কিডনি, কিডনির রোগ এবং এর চিকিত্সা নিয়ে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণাও রয়েছে। এমন কিছু ভুল ধারণা দূর করতে এই রচনা। ভুল : কিডনি দান করা নিরাপদ নয় সঠিক : ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নয়, এমন যে কোনো ব্যক্তি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, তাহলে তার জন্য কিডনি দান করা কোনো ঝুঁকির বিষয় নয়।

ভুল : কিডনি বিকল মানে একটি বা দুটি কিডনি বিকল সঠিক : কিডনি সংক্রান্ত রোগে একটি কিডনি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুব কমই ঘটে। বিশেষ করে কিডনি বিকল বলতে দুটি কিডনিই বিকল বোঝায়। কারণ, যখন একটি কিডনি বিকল হয় তখন শরীরে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও কোনো পার্থক্য ধরা পড়ে না। শরীরে যখন কিডনি রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে, তখন দুটি কিডনিই আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

বিশেষত কিডনি বিকলের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সত্য। ভুল : ডায়ালাইসিস শুরু করলে তা স্থায়ীভাবে করতে হবে সঠিক : রক্ত পরিশোধনের একটি আধুনিকতম প্রক্রিয়া হচ্ছে ডায়ালাইসিস। কিডনি যখন অতিমাত্রায় বিকল হয়ে পড়ে, তখন এটি করতে হয়। যখন ডায়ালাইসিস করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন রোগীর চিকিত্সার জন্য কিডনি সংস্থাপন ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় থাকে না। এ অবস্থায় রোগীকে বাঁচানোর জন্য ডায়ালাইসিস করতে হয়।

কাজেই একবার ডায়ালাইসিস শুরু করলে পরবর্তী সময়ে সেটি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তখন ডায়ালাইসিস না করা মানে অকালে মৃত্যুর প্রহর গোনা। কাজেই এখানে ডায়ালাইসিস শুরু করার মধ্যে কোনো ভুল নেই। তবে আকস্মিকভাবে কিডনি বিকল হয়ে গেলে তখন যদি কারও ডায়ালাইসিস দরকার হয়, সেটি হবে সাময়িক। কিডনি সঠিকভাবে কাজ শুরু করার পর আর ডায়ালাইসিস করার দরকার পড়ে না।

ভুল : বিয়ার পান কিডনির জন্য ভালো সঠিক : বিয়ার পান করলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে কিন্তু বিকল কিডনির কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে এই পদ্ধতি কোনো কাজে আসবে না। অন্যদিকে বিয়ার খেয়ে প্রস্রাব বাড়ানোর মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ানোও সম্ভব নয়। ভুল : পানি বেশি খেলে কিডনি ভালো থাকে সঠিক : বরং কিডনির জন্য কখনই অতিরিক্ত পানি ভালো নয়। পর্যাপ্ত পানি গ্রহণই হচ্ছে সঠিক কাজ। শুধু কিডনিতে খুব ছোট কোনো পাথর থাকলে তখন সেটিকে পানি প্রবাহের তোড়ে বের করে আনার জন্য একটু বাড়তি পানি পান করতে বলা হয়।

তবে কিডনি রোগ হলে বরং পানি পানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করাই ভালো। ভুল : কিডনিতে পাথর হওয়া বিরল ঘটনা সঠিক : না, কিডনিতে পাথর হওয়া কোনো বিরল ঘটনা নয়। বরং এটি কিডনির সবচে সচরাচর ঘটনা। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস-এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রায় ১০ ভাগ আমেরিকানের তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

ভুল : কিডনিতে পাথর হওয়ার সঙ্গে কিছু খাবারের সম্পর্ক আছে সঠিক : সব সময়ে এটি ঠিক নয়। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের বেলায় এটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সুস্থ-স্বাভাবিক লোকের বেলায় নয়। এ বিষয়ে একজন আমেরিকান কিডনি বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, যারা অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করেন তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ, বাড়তি আমিষের ফলে শরীর থেকে বাড়তি ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়। এর ফলে প্রস্রাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি ঘটে।

আর এটা কিডনিতে পাথর তৈরিতে সহায়ক। আবার অনেকের ধারণা, যেহেতু বেশির ভাগ কিডনির পাথরই ক্যালসিয়ামের তৈরি, তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে কিডনিতে পাথর হবে না। সাম্প্রতিক গবেষণায় এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বরং কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ শরীরে অন্যান্য বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই স্বাভাবিক মাত্রার ক্যালসিয়াম খেতে হবে।

তবে যাদের ইতোমধ্যে কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে, তারা কম পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ কখনই কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমায় না। ভুল : কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট মানে কিডনি রিপ্লেসমেন্ট সঠিক : অনেকেরই মনে করে থাকেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট মানে আক্রান্ত কিডনিকে ফেলে দিয়ে সেখানে নতুন একটি কিডনি জুড়ে দেওয়া বা রিপ্লেসমেন্ট করা। বিষয়টি মোটেও তা নয়। বরং কিডনি বিকল হওয়া রোগীকে কিডনি রিপ্লেসমেন্টের সময় বিকল কিডনিকে আগের স্থানেই রেখে দেওয়া হয় এবং বিকল কিডনি দুটির সঙ্গে নতুন সুস্থ আরেকটি কিডনি জুড়ে দেওয়া হয়।

এটিই হচ্ছে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা কিডনি সংস্থাপন বা সংযোজন। বিকল কিডনিকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। ভুল : কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করলেই কিডনি নিয়ে আর কোনো দায়িত্ব নেই সঠিক : অনেকেই মনে করেন, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার পর রোগীর সুস্থ জীবনযাপনে আর কোনো বাধা নেই। এ ধারণা একদম ঠিক নয়। কারণ কিডনি সংস্থাপনের পর কিডনিটি যাতে শরীরের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে, অর্থাৎ কিডনিটি যাতে শরীর থেকে বিয়োজিত হয়ে না যায় সেজন্য রোগীকে সারা জীবন বিশেষ কিছু ওষুধ গ্রহণ করতে হয়।

এই ওষুধ গ্রহণ করা অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে থাকে। এছাড়া রোগীর যাতে সহসা কোনো ইনফেকশন না হয় সেজন্য রোগজীবাণু থেকে দূরে থাকতে হয়। এগুলো না বুঝলে সংযোজিত কিডনি কোনো কাজে না-ও আসতে পারে। সুত্র: লিংক  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.