শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
আমি রান্না করতে ভালোবাসি, তবে খুব কমই রান্না করা হয়। মূলত ইচ্ছের অভাব। ঈদ কিংবা কোন উৎসবের দিনগুলোতে কখনো সখনো ঢুকে পড়ি রান্নাঘরে।
আজকেও ঢুকে পড়েছি। ঈদ উপলক্ষে আমিও একটা আইটেম রান্না করছি।
করছি যখন, তখন সবাইকে খাওয়াতে পারলে ভালো লাগে! কিন্তু সেটা যখন সম্ভব নয়, রেসিপিটাই শেয়ার করি। আপনারা না হয় রেঁধে খেলেন!
ভাল কথা। এই রেসিপিটা কিন্তু অল-ভাইয়া'জ রেসিপি। মানে আপুরা এটা বানাতে পারেনই। এটা হচ্ছে ব্লগার ভাইয়াদের জন্য মেড ইজি রেসিপি।
তো আজকের রেসিপি হচ্ছেঃ গ্রীল চিকেন।
কি????? চিকেন!!!!!! কুরবানীর ঈদে??
জ্বী! কুরবানীর ঈদেই চিকেন গ্রীল। গরু আর খাসীর হাই ফ্যাট মাংশ খেতে খেতে অবস্থা যখন কেরোসিন, কোলেস্টেরল লেভেল যখন উর্ধ্মুখী, তখন চিকেন হতে পারে ভালো অল্টারনেটিভ! আর তাছাড়া মুরগী আমার অলটাইম ফেভারিট
তো আসুন দেখে নিই কী কী লাগবে??
১। মুরগী একটা (ব্রয়লার হলে ভালো) আস্ত, চামড়া সহ বা ছাড়ানো (যেমন আপনার খেতে ভেলো লাগে)
২। সয়াবিন তেল ২৫০ মিলি।
৩। টক দই ১/২ কেজি।
৪। গুড়া মরিচ ৩-৪ চা চামচ (আপনি কেমন ঝাল খেতে চান সেটার উপর নির্ভর করে)
৫। লবণ স্বাদ মতো
৬।
চিকেন সিজোনিং পাউডার (না পেলে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করতে পারেন) ১ চা চামচ।
৭। গোলমরিচ দিতে পারেন। গুড়ো হলে ভাল। ভাল একটা ফ্লেভার আসবে।
৮। গ্রীলটা যদি একটু মিষ্টি মিষ্টি খেতে চান, তাহলে একটু চিনিও দিতে পারেন। যদিও আমি এটা প্রিফার করিনা!
এভাবে কেটে নিন মুরগী
আর লাগবে গ্রীল করার জন্য ওভেন। আশা করছি আপনার বাসায় একটা গ্রীল ওভেন আছে (মাইক্রোওয়েভ না কিন্তু)।
প্রণালীঃ
আস্ত মুরগী নিয়ে তার গলা এবং মাথা কেটে নিন।
মুরগীর নাড়ি-ভূড়ি, কলিজা ইত্যাদি বের করে নিন। এবারে মুরগীটা ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। শুকানোর আগে দেখে নিন, ভেতরে রক্তটক্ত থেকে গ্যালো কিনা। শুকানো হয়ে গেলে সয়াবিন তেল নিয়ে মুরগীতে ভালো ভাবে মাখিয়ে নিন। এতে মুরগীটা বেশ রসালো থাকবে।
একটা বাটিতে টক দই নিন। এতে দুটো ডিম ফেটে দিতে পারেন। অন্যরকম স্বাদ পাবেন। টক দইতে গুড়া মরিচ, সিজোনিং পাউডার, ভিনেগার (ইচ্ছে হলে দিতে পারেন। সাদাটা না কিন্তু), গোলমরিচের গুড়া, লবণ দিয়ে ভালমত ফেটে নিন।
এখন আগে থেকে শুকিয়ে রাখা মুরগীটা এই মিশ্রণে ভালমত মাখান। পুরোপুরি মাখানো হলে গেলে মিশ্রণ সহ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। এই ফাকে আপনি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আসতে পারেন। চাই কি একটা মুভিও দেখে আসতে পারেন। কতক্ষণ রাখতে হবে? এই ২-৩ ঘন্টা! বেশি রাখলে আরো ভালো।
ম্যারিনেট হয়ে গেলে আর তেমন কোন কাজ নেই। মুরগীটাকে গ্রীল ওভেনের শিকটায় গেথে ফেলুন (একটা শিক থাকার কথা)। স্ক্রূ গুলো দিয়ে শিকের কাঁটা গুলো দুদিকে ভালমত আটকে নিন। ভালো কথা, ওভেনে দেবার পর গ্রীল চিকেনের নিচে একটা ট্রে অবশ্যই দিয়ে দেবেন, সাধারণত ওভেন গুলোতে থাকেই। ওটা বের করে ফেলবেন না আবার।
মুরগী রান্না হবার সময় যে রস ঝড়বে সেগুলো ওভেনের নিচের দেয়ালে পড়ে আগুন লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু! চিকেনটা ওভেনে ২০০-২২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ ঘন্টা রাখুন। কম সময় ও লাগতে পারে। দেখুন মাংসের রঙ ধরে এল কিনা। বাদামী রঙ হবার কথা। সাথে একটা সুঘ্রাণ ও পাবেন।
রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে যেরকমটা পাওয়া যায়। না পেলে আবার ভাববেন না রান্না হয়নি! বেশিক্ষণ ওভেনে রেখে দিলে পুড়ে যাবে। রঙ ধরে এলে ওভেন বন্ধ করে দিন। (পোস্টের শুরুতে যে ছবিটা আছে ওরকম। ওর চেয়ে বেশি রঙ হলে পুড়ে যাবে।
ওভাবে বেধেও নিতে পারেন ওভেনে দেয়ার আগে। সুবিধে হবে। ) তখনি ভুলেও ওভেন খুলে গ্রীল বের করতে যাবেন না আবার! তাহলে এবারের ঈদে বাম হাত দিয়েই খেতে হবে! ঠান্ডা হতে দিন মিনিট পাচেক। তারপর (গ্লাভস পড়ে নিতে পারেন, পুড়ে যাবার ভয় থাকবে না) গ্রীল চিকেন বের করে নিন। ডেকোরেশন? অত সময় আছে নাকি রে ভাই! ঝাপিয়ে পড়ুন ওটার উপর।
তবে আগে সবাকে খাইয়ে দেখিয়ে দিন আপনিও পাকা শেফ! সসের সাথে গ্রীল চিকেন কিন্তু দারুণ। বাজারে বার-বি-কিউ সস পাওয়া যায়। পারলে একটা কিনে ফেলুন। এটা দিয়ে গ্রীল চিকেন খেলে মুখ থেকে স্বাদ যাবেই না! আর যদি বার-বি-কিউ সস না পান তবে চিলি সস দিয়েও খেতে পারেন। খারাপ লাগবে না।
(আমার রান্না করা গ্রীল চিকেনের ছবি কই? ছবি তোলার সময় পেলে তো! বের করেই তো খেয়ে ফেলেছি )
ভাল কথা! গ্রীল চিকেন কিন্তু বার-বি-কিউ তেও রান্না করা যায়। আমি কখনো করিনি। আপনারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আর আপুদের অভিযোগ ভাইয়ারা শখে একদিন রান্না করতে এসে রান্নাঘর এত অগোছালো আর নোংরা করেন যে পরিস্কার করতে মাথা ব্যথা হয়ে যায় তাদের। এই অভিযোগের কারণ আবার হয়ে যাবেন না।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টা খেয়াল রাখুন।
ঈদ মুবারক! ভাল কাটুক ঈদ, অনেক শুভকামনা রইল আপনাদের সবার জন্য ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।