মানুষ কিছু জানত না বলে সে জানার আগ্রহে ছিল ভরপুর,এখন মানুষ কিছু জানে বলেই সে অজানাকে পাঠিয়েছে বহুদূর [যুদ্ধ মানুষের মনে নানা ভাবে ধরা দেয়। কখনও মানুষ প্রতক্ষ করে যুদ্ধ,কখন গল্পে শিহরিত করে যুদ্ধ আবার কখনও কল্পনায় ধরা দেয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধ যে কতটা নির্মম হয় তা কেবল দেখেই যে বুঝতে হবে তা কিন্তু নয়। কখনও অন্যের কথায় আবার কখনও চিন্তা ভাবনায় ফুটিয়ে তোলা যায় যুদ্ধ নামক পাশবিকতার নির্মমতা। যুদ্ধ কখনও এক পক্ষের জন্য ভাল আবার অন্য পক্ষের জন্য খারাপ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক যে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে উঠে তার পিছনেও দায়ী এই যুদ্ধ। এটি শুধু যুদ্ধ নয়,এটা মুক্তিযুদ্ধ। মানুষের মুক্তি,নিজের স্বাধীনতার মুক্তি,নিজের মানষিকতার মুক্তি। বর্তমান যুগে আমরা আমাদের কল্পনার সীমায় মুক্তিযুদ্ধের যে ভয়াবহতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারি তা বাস্তবেও ঘটেছিল ১৯৭১ এ কোন এক মানুষের জীবনে কোন এক স্থানে। পশুর আরেক নাম যে মানুষও হতে পারে তা আমরা নিজের অজান্তেই বুঝতে পারি মুক্তিযুদ্ধের দ্বারা।
এই ছোট্ট গল্পে তেমনি এক পশু এবং তার স্বাধীনতা প্রত্যাশী বাবার মধ্যকার কথা তেমনি এক ভয়াবহতাকে তুলে ধরবে,এটা আমার কল্পনা প্রসূত গল্প,হয়ত ঘটেছিল সেই সব কালরাতে। ]
"জ্বলছে পুড়ছে ভাসছে সবাই,করছে জীবন প্রার্থনা
পাষান তারা আসছে ধেয়ে বাড়ছে মনের যন্রনা
ওরে মন শোন্রে শোন হোসনা অসহায়
বাঙ্গালী দেখ উঠছে জেগে,আসছে ধেয়ে নির্দিধায়"
স্লোগান্টি মনে যপতে যপতে থরথর করে কাপছিল বৃদ্ধটি। চারিদিকের ঠান্ডা বাতাস চারপাশে জেকে বসলেও তিনি ঘামছিলেন দরদর করে। কিন্তু স্বাধীন হবার আশায় তিনি তখনও চেয়েছিলেন পথপানে আর ভাবছিলেন কবে পশু ধারঙ্কারি পাকিস্তান বইবে পরাজয়ের ব্যার্থতা,কবে জাতী ফিরে পাবে নতুন জাতীর মর্যাদা। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই তাকে থেমে যেতে হল,দরজায় পরছে কড়া নাড়ার আঘাত।
হঠাত আওয়াজ করে খুলে গেল দরজাটি। মুখে হায়েনার হাসি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল সেই বৃদ্ধের রাজাকার ছেলে মজিদ।
মজিদঃ আব্বাজান,আপনে কেমন আছেন?আপনার শরীর স্বাস্থ ভাল তো?তা রাইতের বেলা খাওন দাওনের কোন প্রুব্লেম হয় নাই তো?আমি না সারা রাত্তর ঘুমাইতে পারি নাই। আপনার জন্য মনটা খালি আকুপাকু করতাছিল। তাইতো দেখেন না ভোর হইতে না হইতেই আপনার খোজ খবর নিতে ছুইটা আইছি।
বৃদ্ধঃ চুপ কর হারামজাদা। আমারে আব্বা ডাকার সাহস তোরে কে দিল?তোর লজ্জা করে না? মনুষ্যত্তের নাম কলঙ্কিত কইরা মুখে লাগাইছস পশুর ছাপ সেই মুখে আবার আমারে আব্বা কইয়া ডাক্তাছস। তোর মুখে আব্বা ডাক শোনার চেয়ে আমার মইরা যাওয়া অনেক ভাল
মজিদঃ আব্বা আপনে শুধু শুধু রাগ করতাছেন। আমার মুখে আপনার নাম শুইনা তো আপনার গর্ব করা উচিত। যাকগা এখন ওইসব কথা বাদ দ্যান।
সারারাইত আপনে কিছুই খান নাই। রাইতের খাবার যেমন দিয়া গেছিলাম এখন দেহি তেমনি আছে। কাল রাইতেও জোর কইরাও আপনের মুখে কিছু খাওয়াইতে পারি নাই। ন্যান এখন গোমড়া মুখে না থাইকা কিছু খাইয়া লন। আপনার লগে জরুলি কথা আছে।
বৃদ্ধঃ তরে একবার কইছি না পশুর হাতে বানানো খাবার আমি খামু না। নিয়া যা এগুলা আমার চোখের সামনে থিকা। তোর লগে আমার কোন জরুরী কথা থাকতে পারে না
মজিদঃ আইচ্ছা ঠিক আছে। আপনের খাওন লাগতো না। জরুলী কথাটা না শুনতে চাইলেও আপনেরে শুনতে হইব।
বাড়াবাড়া না কইরা কইয়া দ্যান মুক্তিরা সব কই ?কয়জন তারা,কখন থাইকা তারা এই গ্রামে আছে?ক্যাডা ক্যাডা আছে তাগো লগে?
বৃদ্ধঃ অরে নরাধম তুই ক্যামনে ভাব্লে যে তরে আমি অগো নাম কইয়া দিমু?তুই ক্যামনে ভাবলি যে দ্যাশ আমারে বড় করছে আমি তার লগে বেঈমানী করমু? তোরা তো ভীতুর দল,কাপুরুষ আহাম্মক,যে দ্যাশ তোগোরে খাওয়াইলো পড়াইলো সেই দ্যাশের মানুসগরে তোরা এম্নে মারতাছস
মজিদঃ আরে রাখেন আপনার এই দেশ ভক্তির আজাইরা প্যাচাল। দ্যাশরে ভালবাইসা প্যাট ভরানো যায় না। পাকরাই হচ্ছে আমাদের জীবনের আসল চালিকা শক্তি। দ্যাখেন না ক্যামনে তারা ধর্ষিতা মাইয়াগোর মতন দ্যাশরে চালাইতাছে? পাইবেন না আপনে আব্বা এমন সুযোগ আপনে পাইবেন না। অহন বাচতে চাইলে মুক্তিগো নাম কইয়া দ্যান।
পাক ভাইদের সন্তুষ্টি পাইতে হইলে এখনি নাম কইয়া দ্যান।
বৃদ্ধঃ নিকুচি করি তোদের এই সুখের,গালাগাল করি তোদের এই শান্তির। ভাই হইয়া যারা ভাইরে মারতে পারে এমন পশুগো আমি ধিক্কার করি। থু থু মারি তোদের এই পাশবিক মুখে,তোরা যে কত বড় চরিত্রহীনা,কত বড় অধম তোদের নির্মম মৃত্য তা বইলা দিব।
হঠাত বৃদ্ধ চিতকার করে উঠলোঃ "স্বাধীনতার লাগি আজ দেশ জাগিছে লইবে প্রতিশোধ
রাজাকার হয়তো পালাইয়া বাচিবে এরাইয়া মায়ার অবরোধ
হাসি পায় মোর দেখিয়া তোদের পরিহাসের করুন দশা
হ্যা বাঙ্গালী কোথায় তোমরা এই নড়কের কীটদের এবার খসা"
এই চিতকার সহ্য করতে পারলো না মজিদ।
তার হিংস্র মুখ আরো হিংস্র হয়ে উঠল। রাগের মাথায় বাপকে একটা লাথি মারলো। গলা টিপে ধরে দেয়ালে ঠেষ দিল এবং সজোরে মারতে থাকল।
মজিদঃ হারামির বাচ্চা কে দিছে তোর বুকে বাঙ্গাল কুত্তাদের মত সাহস?তোর এত বড় সাহস যে তুই পাক ভাইদের মুখে থু থু মারতে চাস? তাদেরকে বলতাছস নরকের কীট?অই দেখ অই ভাত মাংস। জানস অই মাংস কাদের?খুবলে খুবলে খাইছি প্রতিটি অঙ্গ,কোন মা বোনদেরকে রেহাই পাইতে দেই নাই।
ভালয় ভালয় বইলা দে মুক্তিদের ঠিকানা নইলে রাস্তার কুত্তাদের মত অভুক্ত রাখমু,কোন মানুষের মলও কপালে জুটতে দিমু না।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না বৃদ্ধ। থুথু মেরে বসল মজিদের মুখে। কোন মতে হাসতে হাসতে বলল
বৃদ্ধঃ অরে ও বেঈমান পাষন্ড,তোরা কি অন্ধ হইছস,স্বাধীনতা এখন ক্যাবল সময়ের ব্যাপার। যে মুক্তিগো লাইগা পাগল হইছস সেই মুক্তি একদিন আইসা চিরতরে তোগো মুক্তি দিব।
তোরা তো জানস না ভাষা শহিদগো বুকের রক্ত বইতাছে ওগো মনে। শুনে রাখ,ঊনসত্তুরের অভুত্থান হার মানবে,সমগ্র বাংলায় একদিন সংরাম ছড়াইবো,ধর্ষিত হবে তারা জাতীর বিবেকের কাছে।
হঠাত দূর থেকে শোনা যায় উল্লাস ধ্বনি,স্বাধীনতার জয়গান,সকল অপমান অত্যাচার,ত্যাগকে পিছনে ফেলে দেশ আজ স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে। ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে চিতকার করে উঠলো মজিদ। হার মানে রাজি নয় সে,তাই বাপের বুকে গুলি করে বসল।
তাকে ধুকে ধুকে মরতে দিয়ে কাপুরুষের ন্যায় পালিয়ে গেল সে। কিন্তু বেশিদুর যেতে পারলো না সে। একঝাক গুলির আওয়াজ মুছে দিল তার হুড়োহুড়ির শব্দ।
বৃদ্ধ মুখে হাসি ফুটিয়ে চোখ বুঝলো। তার প্রার্থনার সুর আজো ভেসে বেড়ায় প্রতিটি বাঙ্গালির হৃদয়েঃ
"হে আল্লাহ,মৃত্য আমার সার্থক হয়েছে জীবনের স্বাধীনতাকে ঘিরে
ক্ষমা কোরো না সেই অভুক্ত পাপিদের মানুষের প্রান যাদের খাবার
স্বাধীন দেশ দেখে বিদায় নিচ্ছি,প্রার্থনা আমার তোমার কাছে
স্বাধীন দেশেই তুমি আমায় জন্ম দিয়ো আবার"
[১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কল্পনাকেও হার মানায়]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।