আমি আমাকে চিনি না হাদীস - ১.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, “যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বনকারী। ” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা এ সম্পর্কে প্রশ্ন করছি না। তিনি বললেন, “তাহলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন আল্লাহর নবী ইউসুফ, যার পিতা নবী (ইয়াকুব) যার দাদা নবী (ইসহাক) যার পরদাদা হলেন নবী ইবরাহীম খলীলুল্লাহ। ” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করছি না। তিনি বললেন, “তবে কি তোমরা আরবের বিভিন্ন বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? জাহেলিয়াতের যুগে যারা উত্তম ছিল ইসলামেও তারা উত্তম।
যদি তারা শিক্ষা লাভ করে। ”
বর্ণনায় : বুখারি ও মুসলিম।
হাদীসের কতিপয় শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
১- আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হল যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বনকারী। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেন,
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী। (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১৩)
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এ আয়াতের আলোকেই।
এর দ্বারা সে সত্যই প্রমাণিত হলো যে, তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলেন না।
“আর সে মনগড়া কথা বলে না। ” সূরা আন নাজম, আয়াত ৩
২- কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হল, যার মধ্যে তাকওয়ার পরিমাণ যত বেশি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সে তত বেশি প্রিয় ও সম্মানিত।
৩- ইউসুফ আলাইহিস সালামের পিতা ছিলেন নবী ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। তাঁর পিতা ছিলেন নবী ইসহাক আলাইহিস সালাম।
তাঁর পিতা হলেন নবী ইবারহীম আলাইহিস সালাম। তাঁর চার পুরুষ নবী, সে হিসাবে তিনি বিশাল সম্মানের অধিকারী।
৪- সাহাবায়ে কেরাম বংশ মর্যাদার দিক দিয়ে আরবের সম্মানিত বংশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উত্তর দিলেন তার অর্থ হল, বংশ মানুষকে সম্মানিত করে না। আবার বংশ মানুষকে লাঞ্ছিতও করে না।
মানুষকে সম্মানিত করে শিক্ষা। যে সঠিক শিক্ষা অর্জন করে, সে জাহেলি যুগের হলেও সম্মানিত হতে পারে। নিম্ন বংশের হলেও সম্মানিত হতে পারে। যদি কেউ সামাজিকভাবে সম্মানিত হতে চায়, তবে তাকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সাথে সাথে নেক আমল করতে হবে।
শিক্ষা ও নেক আমল ব্যতীত শুধু বংশ বা সম্পদের মাধ্যমে কেউ সামাজিকভাবে সম্মানিত হতে পারে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে কর্মে পিছনে পড়ে গেল বংশ তাকে অগ্রগামী করতে পারে না। ”
এ হাদীসে মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। সঠিক শিক্ষা ব্যতীত আদর্শ মানুষ হওয়া যায় না।
৫- জাহেলিয়াত ছেড়ে দিয়ে শুধু মুসলমান হলেই উত্তম মানুষ হওয়া যায় না।
উত্তম মানুষ হতে হলে তাকে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এই শর্তই করা হয়েছে আলোচিত হাদীসে।
৬- একজন মানুষ যে জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী কিন্তু ইসলাম সম্বন্ধে তেমন জানে না, তাকে জাহেলি সমাজের ভাল মানুষ বলা যায়। কিন্তু যদি সে ইসলামি জ্ঞান অর্জন করে তাহলে সে ইসলামি সমাজের সর্বোত্তম মানুষে পরিণত হয়ে যায়। এই মর্মেই এ হাদীসে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।