‘দল আমাকে কোরবানি দিয়েছে, জবাই করেছে। এবার আমার জয়ী হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা ধূলিসাত্ হয়ে গেল। গত প্রায় এক মাস ধরে আমার নেতা-কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সেখানে নির্বাচনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে এখন নেতাকর্মীদের চোখের পানি মুছতেই আমি ব্যস্ত। আমাকে কোরবানি করে দল যদি উপকৃত হয় তাহলে সেটিই হবে আমার পরম পাওয়া।
এটুকুই এখন আমার সান্ত্বনা। গতকাল রবিবার দুপু্র আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জের মাজদাইরে নিজ বাসায় ইত্তেফাককে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। গতকাল সারাদিন তিনি বাসায় কাটিয়েছেন। একবারের জন্যও বাইরে যাননি, নিজের ভোটও দেননি। তার স্ত্রীও ভোট দেননি।
তৈমুর জানান, তার আপন ছোট ভাই মাকসুদ আলম খন্দকার খোরশেদ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন, তাকে পর্যন্ত ভোট দিতে যাননি তিনি। এমনকি সারাদিন নির্বাচনের কোনো খোঁজ-খবরও নেননি।
তৈমুর আলম বলেন, আমি ‘দেশনেত্রীর’র (খালেদা জিয়া) প্রতি অনুগত। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা মেনেই শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এর আগেও আমি দলের সঙ্গে কখনো বিদ্রোহ করিনি।
এবার বিএনপিসহ চারদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য ছিল আমার পক্ষে। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারলাম না। এজন্য নারায়ণগঞ্জের লোকজনও ব্যথিত। তারা আমাকে ভোট দেয়ার জন্য উত্সাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, যে কারণেই হোক নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে ‘মজলুম জননেতা’ বলেন।
এবার যে কারও চেয়ে আমি শক্তিশালী প্রার্থী ছিলাম। যখন দলে ছিলাম না, তখনো আমার একক ডাকে এই নারায়ণগঞ্জে সফল হরতাল হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাউকেই আমার পক্ষ থেকে ভোট দেয়া না দেয়ার জন্য কোনো বার্তা দেয়া হয়নি। সবাই যার যার সিদ্ধান্তে কাজ করেছেন। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে তার সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতা কাজী মনিরুজ্জামান ও এটিএম কামালও উপস্থিত ছিলেন।
এই দুজনও জানান, তারাও ভোট দিতে যাননি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান সকালে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের বলেছেন ‘জামায়াতের বুদ্ধির কাছে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। জীবিত অবস্থায়ই তার দাফন হয়েছে। ’ এ ব্যাপারে তৈমুর বলেন, আমার দাফন হয়েছে একথা স্বীকার করি। তবে কারও বুদ্ধিতে আমাকে দাফন করা হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই।
সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়ায় বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে। কিন্তু সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন হল। তাহলে কি বিএনপির অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতা পাবে? এই প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট তৈমুর বলেন, আমরা যখন আন্দোলন-সংগ্রাম করি, যখন পুলিশ আমাদের পেটায়, তখন কি সেনাবাহিনী এসে আমাদের রক্ষা করে? সেনাবাহিনী আসা না আসা কোন বিষয়ই নয়। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি তো বয়কট করেছে। কিন্তু পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়নি।
প্রচারণা আছে শামীম ওসমানকে ঠেকাতে এবং আলোচিত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর জয় নিশ্চিত করতেই বিএনপি শেষ মুহূর্তে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতে চাইলে তৈমুর বলেন, বিএনপির মতো শক্তিশালী দল এই ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত হতে পারে এটি আমি বিশ্বাস করি না। বিএনপির সিদ্ধান্তের কারণে অন্য কোনো প্রার্থী বাড়তি সুবিধা পেয়েছে, এটি আমি চিন্তাও করিনি।
তৈমুর আলম বলেন, নিজ দল কেন আমাকে কোরবানি দিল তা বুঝতে পারলাম না। দল কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি। শনিবার রাত বারটার দিকে দলীয় অফিস থেকে আমাকে ফ্যাক্সে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
সেটিই আমি পরে সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠ করেছি। কেন বিএনপি এই সদ্ধান্ত নিয়েছে তা দলই বলতে পারবে।
নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কারণে আর্থিক ক্ষতি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এটুকু বলতে পারি গত এক সপ্তাহে আমার শরীরের ওজন কমেছে ১০ কেজি। আর আর্থিকভাবে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তা তো সবাই বুঝতেই পারেন। আমি জমি বিক্রি করে টাকা খরচ করেছি।
[/sb
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।