Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience বেসরকারি ফলাফলে প্রায় ৭০% ভোট প্রমাণ করে গণমানুষের জয়।
ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভি'র নারায়নগঞ্জের গণমানুষের নেত্রী হয়ে ওঠার গল্প:
ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভি রাজনীতিতে এসেছেন নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই। আট বছর নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসেবে কাজ করে সেলিনা হায়াৎ আইভি হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা।
কীভাবে সেলিনা হায়াৎ হয়ে উঠলেন গণমানুষের নেতা? নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হওয়ার পর এমন কী করলেন, যে কারণে তাঁকে একেবারে নিজেদের মানুষ মনে করল সাধারণ মানুষ?
এদিকেই একটু চোখ বোলানো যাক।
নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকার দর্জি হাজি মো. মুজিবুর রহমান বললেন, ‘উনি মানুষেরে কইছেন রাস্তা চওড়া করা লাগব।
পৌরসভার জায়গার ওপর ঘর তুলছেন, এইটা ভাঙতে হইব। মানুষজন পথম পথম বেজার হইছে। আইভি করছেন কী, আগে তাঁর মহল্লায় তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ভাঙছেন। প্রথমে ওয়ার্নিং দিছেন, তারপর বুলডোজার দিয়া ভাইঙ্গা দিছেন। লোকে তো দেখছে, উনি কাউরে মানেন না।
’
সেলিনা হায়াৎ তাঁর ডাক নাম ‘আইভি’ দিয়েই এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত।
তাঁর ব্যাপারে রিকশাচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘কেউ যদি বলছে, আমি আওয়ামী লীগ করি, ট্যাক্স দিমু না, তাইলে দুই গুণ জরিমানা হইছে, আর আইভির আত্মীয় কইয়া মাফ চাইলে তিন গুণ জরিমানা হইছে। ’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসদাইর এলাকার রাস্তাটা আগে বড্ড অপ্রশস্ত ছিল। এই পথ ধরেই শহরের সবচেয়ে বড় কবরস্থানে যেতে হয়। আগে কোনো একটা গাড়ি ঢুকলে রাস্তার ওপর মৃতদেহ নিয়ে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।
এখন আর সেই কষ্ট নেই। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। বড় বড় পাকা নালা হয়েছে শহরে।
খানপুর এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বললেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর কোনো ভাস্কর্য ছিল না। আইভি মেয়র হওয়ার পর পৌরসভার উদ্যোগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভাস্কর্য নির্মাণ করিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের পুরোনো অভিজাত এলাকা উত্তর চাষাঢ়ার গৃহবধূ পারভীন আক্তার জানালেন, আগে বৃষ্টি হলেই তাঁদের এলাকায় হাঁটুপানি জমে যেত, এখন পানি জমে থাকে না। এলাকার বেশ কয়েকজন নারী বললেন, আইভি নারায়ণগঞ্জের অন্য অনেক নেতার মতো গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ঘোরেন না। তাঁদের ভাষায়, আইভি খুবই সামাজিক, একান্ত আপনজন।
আইভির জনপ্রিয়তার রহস্যটা তাহলে এই! মানুষের কাতারে নেমে মানুষের দুঃখ-কষ্টের ভাগ নিয়েছেন এবং সেই কষ্ট দূর করার চেষ্টা করেছেন আইভি। ফলে সাধারণ মানুষের বন্ধু হিসেবেই পরিচিত হতে পেরেছেন তিনি।
বাবার দেখানো পথে
ফিরে যাই ২৭ বছর আগের সেই দিনে। ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ভোররাতে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা। নারায়ণগঞ্জবাসীর চোখের মণি ছিলেন চুনকা। বিদ্যুতের গতিতে সে খবর ছড়িয়ে গেল সবখানে।
নারায়ণগঞ্জের অলিগলিতে উড়ছে কালো পতাকা। রাস্তায় নেমে এসেছে শহরের সর্বস্তরের জনতা। বিকেলে ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় আনা হলো তাঁর মরদেহ। জানাজায় অংশ নিল হাজার হাজার মানুষ। গণমানুষের নেতা আলীআহাম্মদ চুনকা এলাকাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন।
আইভি তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী; আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি বড়। চুনকার মৃত্যুতে শুধু পরিবারেই শূন্যতার সৃষ্টি হলো না, শূন্যতা সৃষ্টি হলো নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনেও। চুনকা জনতার কাতারে থেকেই করেছেন রাজনীতি। আইভি মনস্থ করলেন, বাবার দেখানো পথেই চলবেন তিনি।
আলী আহাম্মদ চুনকা ভোরবেলা ফজরের নামাজ পড়েই দেওভোগ আখড়ায় ‘চাচার চায়ের দোকান’-এ বসতেন বড় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে।
মেয়েটা তখন চতুর্থ কি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন। সেই ভোরবেলায়ই এখানে হাজির হতেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাঁরা তাঁদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার গল্প করতেন আলী আহাম্মদ চুনকার সঙ্গে। সকাল সাড়ে আটটা-নয়টায় স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সঙ্গেই থাকতেন আইভি।
আলী আহাম্মদ চুনকা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বাধীনতার পর দুই-দুবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে আইভির কানে রাজনীতির টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসত। বাবা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়তে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো কেটে রাখতে বলেন মেয়েকে। শুধু যে নেতা-কর্মীরাই তাঁর বাড়িতে অতিথি হয়ে আসেন তা নয়, প্রতিদিন দুপুরে দুঃখী, খেটে খাওয়া মজুর—সবাইকে নিয়ে খেতে বসেন আলী আহাম্মদ চুনকা। রাতেও তা-ই। আইভির মা মমতাজ বেগম হাসিমুখে, নীরবে প্রতিদিন জনা পঞ্চাশেক মানুষের রান্নাবান্নার আয়োজন করেন।
অন্য কোনো দিকে তাকানোর সময় নেই তাঁর।
ওই জীবনেই ঘটল ছন্দপতন। বাবার লাশের পাশে মা ও চার ভাইবোনের মতো পাথর হয়ে গিয়েছিলেন সেলিনা হায়াৎ। দিনটি এখনো তাঁকে শোকে আচ্ছন্ন করে। সেই দিনটিই তাঁকে বাবার দেখানো পথে চলার সাহস জোগায়।
২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের মেয়রের পদে ছিলেন সেলিনা হায়াৎ। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সরকার সম্প্রতি সিটি করপোরেশন ঘোষণা করেছে। পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নগর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন প্রশাসকের হাতে। সেলিনা হায়াৎ আইভি আট বছর পর দাপ্তরিক কাজ থেকে ছুটি পেলেন।
এই অবসরে মন খুলে তিনি গল্প করেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
বলেছেন তাঁর জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠার গল্প।
পড়াশোনা
বাবার মৃত্যুর পর চুনকা-পরিবারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী)। তিনি সেলিনা হায়াৎকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আইভি তো চিকিৎসক হতে চান। একপর্যায়ে লজ্জা-সংকোচ ভুলে শেখ হাসিনাকে জানালেন, তিনি চিকিৎসক হতে চান।
একটা সুযোগও এসে গেল। ১৯৮৫ সালে আইভি বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে।
‘সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে কি আপনার স্বপ্নের কথা ভুলে গেলেন?’
‘এক মুহূর্তের জন্যও না। ’ ত্বরিত উত্তর আইভির। ‘প্রতিবছর আমি দেশে এসেছি।
গ্রীষ্মের ছুটিতে সবাই যখন রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বেড়াতে যেত, আমি দেশে আসতাম। নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে, আমার বাবার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করতাম। এলাকার খেলাধুলা, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠান, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান—সবকিছুতেই থাকতাম। ’
রাজনীতির শুরু
আইভি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় ফেরার পর, ১৯৯২ সালে। মিটফোর্ড হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সময় ওই বছরই নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
তত দিনে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভেতরকার দ্বন্দ্বও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরই রেশ ধরে আইভির এলাকার যুবলীগের নেতা আলম খুন হন, চার দিন পর খুন হন সোহেল। আইভি রাজনীতির এই কদর্য রূপের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। দ্বিধায় পড়ে যান তিনি। বলছিলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ছিল কারও কারও, কিন্তু তা ছিল আদর্শিক।
রক্তপাতের রাজনীতি তখন ছিল না। লেখাপড়া শিখে আমি হত্যাকাণ্ডের রাজনীতি করব? মন সায় দিল না। স্বামী কাজী আহসান হায়াতের সঙ্গে চলে গেলাম নিউজিল্যান্ডে। আবার পড়ালেখা শুরু করলাম, কিন্তু একটুও স্বস্তি পেলাম না। বারবারই মনে হতে লাগল, আমি কি পাশ কাটিয়ে গেলাম! কোথাও কি কোনো ভুল হয়ে গেল!’
এই দোটানায় কেটে গেল অনেক বছর।
জন্ম নিল প্রথম সন্তান কাজী সাদমান হায়াৎ। নিউজিল্যান্ডে ইমিউনোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ওপর স্নাতকোত্তর লেখাপড়ায় মন দিলেন আইভি। সন্তানের দেখাশোনা, পড়ালেখা—এই নিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল। লেখাপড়া প্রায় শেষের দিকে; কোল আলো করে এল দ্বিতীয় সন্তান কাজী সার্জিল হায়াৎ। শুধু ইনটার্ন করলেই চার বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটা পাবেন আইভি।
এরই মধ্যে একদিন বাড়ি থেকে ছোট ভাই আলী রেজার ফোন, ‘আপা, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হয়েছে, পরশু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। যদি নির্বাচন করতে চাও, এখনই চলে আসো।
একদিকে স্বামী-সন্তান, ক্যারিয়ার; অন্যদিকে বাবার স্বপ্নপূরণের হাতছানি—ত্রিশঙ্কু অবস্থা আইভির। সাহস জোগালেন স্বামী। এক দিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করে দিলেন।
চিকিৎসক থেকে মেয়র
এর পরের গল্পটা শুনুন সেলিনা হায়াতের বয়ানে, ‘২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সব নেতা গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। আমি একাই শুরু করলাম নির্বাচনী প্রচারণা। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে লাগলাম, কেন তাঁরা আমাকে ভোট দেবেন। একসময় দেখলাম, আমি নির্বাচনী জনসংযোগ করতে বাড়ি থেকে একা বেরিয়েছি, কিন্তু ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছেন অনেকে। ’
আইভির প্রচারণায় চার রঙা পোস্টার ছিল না, মোটরসাইকেলের বহর ছিল না, ছিল না জমজমাট কেন্দ্রও।
তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। সে সময় একনাগাড়ে তিন দিন নারায়ণগঞ্জে আইভির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালান আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ফারুক খান, সোহেল তাজ, আবদুস শহীদ, শাহজাহান খান প্রমুখ। ২০০২ সালের মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হলেন আইভি। আইভি জানালেন, আলী আহাম্মদ চুনকার জনপ্রিয়তা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
মেয়র পদে আট বছর
আইভি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি।
চেয়ারে বসেই তিনি পড়লেন মহা বিপদে। পৌরসভায় জমা আছে নয় লাখ টাকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনই দিতে হবে ১৫ লাখ টাকা। সমস্যা আছে আরও। শহরের ময়লা পরিষ্কারের গাড়ি নেই, নগরবাসীর মধ্যে কর দেওয়ার কোনো সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি, সূর্য ডুবলেই শহর ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তায় বাতি জ্বলে না, একটু বৃষ্টি হলেই শহরে হাঁটুপানি জমে যায়। কোনটা ছেড়ে কোনটা করবেন, তা-ই ভেবে আইভি দিশেহারা।
খোঁজ নিয়ে জানলেন, পৌরসভার সাত কোটি টাকার ট্যাক্স তোলা হয়নি।
‘কীভাবে কাজটা শুরু করলেন?’
‘আমি জনসংযোগ শুরু করলাম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝালাম, নগরের উন্নয়ন চাইলে কর দিতে হবে। মানুষও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করল। ট্যাক্সের টাকায় ড্রেন হলো, বড় বড় রাস্তা হলো, শহরে বাতি জ্বলল।
কিছু বিদেশি সাহায্যও পেয়েছিলাম। ’
যখন তিনি মেয়রের চেয়ারে বসেছিলেন, তখন পৌরসভার দেনা ছিল দুই কোটি আট লাখ টাকা। যখন ছেড়ে আসেন, তখন পৌরসভায় জমা ছিল ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, আরও ৪০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছিল। নারায়ণগঞ্জ এত বড় শহর, কিন্তু কোনো পার্ক নেই। আইভি দুটি পার্কের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
একটা সৈয়দপুর আরেকটা পঞ্চবটীতে। চলছে আলী আহাম্মদ চুনকা স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তনের নির্মাণকাজ। সাধারণ মানুষের সেবায় একটি হূদেরাগ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে, নারীদের ক্ষমতায়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর আওতায় ৭০ হাজার নারী নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। হাতের কাজ শিখে এরই মধ্যে একদল নারী একটি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।
সংস্কৃতিকর্মী রঞ্জিত কুমার বললেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় পৌর শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়েছিল এরশাদের আমলে, সাংস্কৃতিক জোটের আন্দোলনের ফসল হিসেবে। কিন্তু এটি ছিল শুধু একটি ইটের স্তম্ভ। সেলিনা হায়াৎ এটাকে সুন্দর স্থাপনায় রূপান্তর করেছেন।
তিনি মেয়র হওয়ার আগে পৌরসভার নিজস্ব রাস্তা ছিল ৭৮ কিলোমিটার। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি সেটা বাড়িয়ে করেছেন ১৪০ কিলোমিটার।
আগে পৌরসভার বিভিন্ন কর আদায় হতো গড়ে ৩০ শতাংশ। তিনি সেটা ৯০ শতাংশে উন্নীত করেছেন।
গলাচিপা এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শামসুল হক জানান, তিনি ৭০ বছর ধরে এই শহরে থাকেন। জন্মের পর থেকে রাস্তাঘাট, ফুটপাত, নালা এত ভালো দেখেননি। শহরে কোনো কেন্দ্রীয় মসজিদ ছিল না।
মাসদাইর মসজিদটিকে এখন কেন্দ্রীয় মসজিদে রূপান্তর করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশিদা আক্তার বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলায় পৌরসভা অফিসই একমাত্র কার্যালয়, যেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্ম তদারক করা হয়। পৌরসভায় তিনি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছেন। জন্মনিবন্ধন, জন্ম-মৃত্যুর সনদ তোলা ইত্যাদি কাজ আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। আমরা তো বলি না গুড বাই, আইভি; আমরা বলি, কাম ব্যাক, আইভি।
’
সাধারণ মানুষের এত ভালোবাসা, এত সমর্থন, তার পরও কি কোনো অপূর্ণতার বোধ কাজ করে—এমন প্রশ্নে আইভি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। বললেন, বড় ছেলে কাজী সাদমান হায়াতের বয়স এখন ১৩। প্রায়ই বায়না ধরে, ‘মা, তুমি চলে এসো, অনেক দিন তো হলো। ’ ছোট ছেলে সার্জিল দেশেই থাকে মায়ের সঙ্গে। সে-ও চায়, বাবার কাছে ফিরে যেতে।
চিকিৎসা পেশাটাও খুব টানে তাঁকে। কিন্তু তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবেই মানুষের সেবা করে যেতে চান আমৃত্যু। সন্তানদের তিনি সেই শিক্ষা দিতে চান, যে শিক্ষা তাঁকে দিয়ে গেছেন তাঁর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা—‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।
× প্রথম আলোর ছুটির দিন থেকে থেকে কপি পেস্ট
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী'র সংক্ষিপ্ত জীবনবৃন্তান্ত
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাবেক মেয়র, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৯৬৬ সালের ৬ জুন নারায়ণগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা- মমতাজ বেগম ও পিতা – সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা।
চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ডা. আইভী হলেন প্রথম সন্তান। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। অতঃপর তিনি মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন।
এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সাথে Doctor of Medicine (MD) ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। ডা. আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াৎ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত আছেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জননী। কাজী সাদমান হায়াত সীমান্ত (জন্ম ৫ মে ১৯৯৮) ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত (জন্ম ২০ জুন ২০০২)। তিনি ১৯৯৫ সাল হতে নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্সে অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন।
তাঁর এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তিনি দেশের মানুষ ও সর্বোপরি নিজের সেই পরিচিত শহর ও শহরবাসীর জন্য এক প্রগাঢ় হৃদয়ের আকর্ষণ অনুভব করেন। তিনি অধ্যয়নকালীন সময়ে ও প্রবাস জীবনের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসেছেন জন্মভূমিতে। এছাড়া তিনি গরীব ও দুঃখী লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। তাঁর এই কর্মকান্ডে পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার দানশীলতা, মানবপ্রেম ও একই সাথে মানব সেবার প্রতিফলন ঘটে। ডা. আইভী তাঁর শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে পরিভ্রমণ করেছেন, যেমন- জার্মান, হল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইতালি, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও ভারত।
তিনি স্কুল ও কলেজ জীবন হতে বাবার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ১৬ জানুয়ারি ২০০৩ তারিখে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২৭.০৬.২০১১ পর্যন্ত তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
তিনি আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশন এবং নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন।
( লেখা ও ছবি সবই ইন্টারনটে থেকে সংগ্রীহিত)
আইভির ওয়েবসাইট :
http://ivybd.com/
আইভি- কে নিয়ে ছবি ব্লগ :
আইভি 'কে নিয়ে ছবিব্লগ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।