অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!
“সব বিশেষজ্ঞ” বলতেন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন. “হলো যা আছে তার বিশেষজ্ঞ। ভবিষ্যতে হতে পারে এমন বিষয়ের কোন বিশেষজ্ঞ নেই। ”
এ কথার মানে হলো বিশেষজ্ঞ হতে হলে অভিজ্ঞতা লাগে। আর তাদের দুইবার নোবেল পুরস্কার পাওয়া প্রধানমন্ত্রী সিমন পেরেসের কথা হল ভবিষ্যতের বিশেষজ্ঞ হতে হলে অভিজ্ঞতাকে রূপকল্প (Vision) দিয়ে প্রতিষ্থাপন করতে হবে।
তারমানে যাদের দূরদৃষ্টি আছে কেবল তারাই ভবিষ্যতের বিশেষজ্ঞ হতে পারে।
তিনি মনে করেন আগামী দশকে তিনটি প্রপঞ্চ সবকিছু পাল্টে দেবে। প্রথমটি হলো কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (আহারে ম্যাকার্থি মরে গেলেন!)। গত ২৫ বছরে কম্পিউটারের যে উন্নতি হয়েছ সেটা না জানি কোন দিকে যায়!
দ্বিতীয় হলো চিন, ভারত মানে যে সব দেশে অনেক লোক, সেসব দেশের বিজ্ঞানীরাও অনেক নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে হাজির হবে। কারণ গবেষণার অনেককিছু সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে।
তাদের হাতেও পৌছে যাবে আধুনিক প্রযুক্তি।
তৃতীয় হলো ন্যানোটেকনোলজি। যাদের দি ফ্যানটাস্টিক ভয়েজের কথা মনে আছে তারা জানেন এই প্রযুক্তি কী!!!
এই তিনটি বিষয়, পেরেস, মনে করেন শেষ পর্যন্ত মানুষের চিরন্তন অভিলাষকে পূরণ করবে। এব তিনি জানাচ্ছেন অন্যদের সঙ্গে ইসরায়েলিরা এ কর্মযঙ্গে সামিল হয়েছে।
কথাগুলো তিনি বলেছেন উদ্ভাবন ও উদ্যোগ সংক্রান্ত একটি বইএর মূখবন্ধে।
দি স্টার্ট আপ নেশন নামের বইটি লিখেছেন ডেন সেনর আর সোল সিঙ্গার মিলে। তারা মনে করেন, ইসরায়েলের রূপান্তরের কথা সবার ভালমতো বোঝা উচিৎ, বিশেষ কর যে সব জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি।
হুম ইসরায়েল।
ছেলবেলা থেকে আমরা ইসরায়েল সম্পের্কে নানান ধরণের ধারনা নিয়ে বড় হই। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সে দেশে যাওয়া যায় না, কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।
কারণ?
আমরা সবাই জানি। ইসরায়েল নামক দেশটার জন্ম হয়েছে ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করে, জোর করে তাদেরকে বিতাড়িত করে। কাজে ইসলায়েলের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ থাকার কথা নয়। আমি নিজেও কখনো ইসলায়েলের বিষয়ে আগ্রহী হয়নি। (খালি শুনেছিলাম ইসরায়েলি মেয়েরা নাকি অনেক সুন্দর, তা সে ছোটবেলার কথা!) ।
সম্ভবত আইনস্টাইনের বিষয়ে পড়া লেখা করতে গিয়ে প্রথম জানি যে, আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধান হতে বলা হলে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতি চিরকালের নয়। পদার্থ বিজ্ঞানের একটি সমীকরণ চিরকালের (কত সোজা কথা। আইনস্টাইনের সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের একজনের নামও মনে করতে আমার যথেষ্ট কষ্ট হবে। অথচ আইনস্টাইন কত সহজে আমাদের সঙ্গে মিশে আছে।
তা সে ইসরায়েলের বিষয়ে আমি কেন আগ্রহ হয়ে উঠলাম?
বছর দেড়েক আগে আমার কাজের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়।
আমি মূলত কাজ করতাম সরকারি সেবা কীভাবে সহজ করা যায়। মোবাইল ফোনে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কারবার, সরকারি ফরম ইন্টারনেটে ছাড়া এসব কাজে আমার সংযুক্তি ছিল। কিন্তু ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে আমার ঘাড়ে চাপানো হয় দেশে কারিগরি ভিত্তিক কর্মসংষ্থানের কায়দা কানুন করা যায় কীনা সেটা দেখার।
বড় কঠিন কাজ। যে কোন কাজ শুরু করতে হলে একটু পড়ালেখা করতে হয়।
আমি শুরু করলাম গুগল, মাইক্রোসফট হয়ে মিত্তাল আর আদভানির গল্প পড়া, সঙ্গে থাকলো বাংলাদেশর ধনীদের কাজ কারবার এনালিসিস করার কাজ। সে সময় যে বই পত্র পড়তে শুরু করি সেগুলো এখানে বলতে শুরু করলাম। তখনি অনেকে আমাতে দি স্টার্ট আপ নেশন নামের বইটি পড়ার পরামর্শ দেয়। আমি ভেবেছি এটা পড়তেই হবে।
শারুন আমাকে একটি ইবুয়ক দেয়।
কিন্তু কম্পিউটারে পড়তে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। কাজে হারুন ভাই যখন ফোনে জানালেন উনি দেশে আসবেন, তখন আমি তাকে দুটি বই আনতে বলি। তিনি বইটি নিয়ে এসেছেন। আমি পড়তে শুরু করেছি এমন একটি দেশের কথা যেখানে ১৮৪৪ জনে একটি স্টার্ট আপ কোম্পানি আছে!
মাত্র ৭১ লক্ষ লোকের দেশে ২০০৮ সালে ভেঞ্চার বিনিয়োগ হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার যা কিনা জার্মানি, ফ্রান্স আর ইউকের মোট ভেঞ্চার বিনিয়োগের সমান!
নাসডাকে পুরো ইউরেপ থেকে যতো কোম্পানি নিবন্ধিত, খালি ইসরাইলি কোম্পানি আছে তার চেয়ে বেশি।
জন্মের মাত্র ২ বছরের মধ্যে এ দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়।
পরের ৭ বছরে হয় তিনগুন! ১৮০০ সালের দিকে আমেরিকানদের যেমন জীবনযাত্রা ছিল, ইসরাইলিদের জীবনযাত্রা ছিল সেই মাপের।
অথচ মাত্র ৬০ বছরে তারা তাদের জীবন মান বদলে ফেলেছে!
কেমনে?
সহজ উত্তর হতে পারে, আমেরিকা সহ অন্যান্য স্থানের ইহুদিরা তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এ কাজটা সহজ করে দিয়েছে। ইহুদি কোম্পানিগুলো সে কাজগুলো করেছে।
তবে এই বইএর লেখকদ্বয় কিন্তু সেরকমটি ভাবেন না। তাদের বক্তব্য হলো উদ্ভাবন আর উদ্যোগই হলো আসল, ইসরায়েলের দিন বদলের হাতিয়ার।
সম্প্রতি গ্রোবাল মনিটরিং গ্রুপ বলছে,”যখন উদ্যোক্তা সফল হয় তখন সে বাজরে একটি বিপ্লবের সূচনা করে। যখন তারা ফেইল করে, তখনও তারা টিকে যাওয়াদের ওপর প্রবল প্রতিযোগিতার চাপ বজায় রাখে। ফলে প্রগতির কাজ হতে থাকে। আমি বলি সাকসেসফুলি ফেইলিউর! (এটি আমি অনেক আগে থেক জানি যদিও ইসরায়েলের গল্পটা জানা ছিল না। এই লাইনে আমার প্রথম লেখার শিরোনাম ছিল, “উদ্যোগ আর উদ্ভাবনে মনকে উদার করো, একটি গুগল পাওয়ার তরে হাজার গুগল গড়ো।
)
স্টার্ট আপ নেশনস আমি পড়তে শুরু করেছি। আগামী দিনগুলোতে পড়তে থাকবো। আমার জার্নি কেমন হবে কে জানে। তবে, আমি চালিয়ে যাবো।
আলসেমি কমলে আমার পড়ার বোধ সবার সঙ্গে শেয়ারও করবো।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।