আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।
আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’
---নির্মলেন্দু গুণ
আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে কুমিল্লায় একটি আবৃত্তির অনুষ্ঠানে কবিতাটি আমি প্রথম আবৃত্তি করি, তখন নিছক আবৃত্তি করার জন্যই হয়তো করেছি, তার প্রায় এক বছর পর যখন আমি কন্ঠশীলনের ছাত্র তখন শুধুমাত্র আবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ার জন্যই হয়তো কবিতাটি আমি বেছে নেই পড়ার জন্য। তার প্রায় আট থেকে নয় মাস পর ভার্সিটির কোনো এক প্রোগ্রামে এই কবিতার প্রথম কয়েক লাইন আবৃত্তি করি হতে পারে সেটা নির্দিষ্ট কাউকে খুশি করার প্রানান্তকর চেষ্টা থেকেই করেছি।
তারপরও ফেইসবুকে কয়েকবার কবিতার কিছু লাইন আপলোড করেছি তাও হতে পারে নির্দিষ্ট কোনো জনের উদ্দেশ্যে। আমার দৈনন্দিনের এতো কিছুর মাঝে এতোবার কবিতাটি এসেছে কিন্তু কোনোবারই কবিতাটির সঠিক মূল্যায়ন আমি করতে পারিনি বা যতার্থ ভাব আমি বুঝতে পারিনি কিন্তু ইদানিংকার জীবন যাপনের সাথে কবিতার প্রতিটা লাইন এমনভাবে মিশে বা মিলে যাচ্ছে যা আমি ঠিক কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি।
নির্মলেন্দু গুনের দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য আমার জীবনে কয়েকবারই ঘটেছে। প্রথমবার যখন আজিজ মার্কেটের সামনে তার দেখা পাই তখন নিছক বাচ্চা ছেলে মনে করেই তিনি আমায় পরিত্যাগ করেছিলেন, দ্বিতীয়বার যখন তক্ষশীলার (আজিজ মার্কেটের নিচ তলার একটি বইয়ের দোকান) সামনে তার দেখা পাই তখন হরহর করেই বললাম-'স্যার আপনার কবিতা তোমার চোখ এতো লাল কেন? আমার সবচে প্রিয়'। তিনি জিজ্ঞেস করলেন-'কেন?' হয়ত ওনার সামনে নিজেকে স্মার্ট বানানোর অতিরিক্ত চেষ্টা থেকেই আমিও সোজাসাপ্টা উত্তরে বললাম-'পড়তে ভালো লাগে তাই' পরক্ষণেই তিনি বললেন-'শোনো ছেলে কবিতা পড়ার বিষয় নয় কবিতা বোধের'।
মাথা নেড়ে কোনো রকমে রাস্তা মাপলাম।
আমার মনে হয় মানুষের চাহিদার সাথেই বোধের সৃষ্টিটা হয়। আর কবিতা সেই চাহিদার খোড়াক বা অবলম্বন বা দৃষ্টিনন্দন ভাষা বা অনুকরণ। এবং যাতে আমি এখন ভুগছি ...
(বালিশ টা কিন্তু অনেক আপন একজন.... কান্না লুকায়... কান্না শুকায়... আর সেই বালিশটাই যেন কান্না শেষে প্রশ্ন করে 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?---মোর্শেদ নাসের টিটু ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।