আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব। আমাদের এসএসসি পরীক্ষার আগের দিন ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস। পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্য স্যারদের দোয়া এবং ভালবাসা খুব জরুরী।
তাই বিকেলে স্যারদের দোয়া এবং ভালবাসা নিয়ে বেড়িয়েছি। বালক স্কুলে দীর্ঘ আট বছর নারীবিবর্জিত হয়ে শুধুমাত্র বালকদিগদের সাথে পড়াশোনা করেছি। তাই আমাদের জন্য পরীক্ষার হলে নারীদের উপস্থিতি মানে উৎসব উৎসব ভাব। পরীক্ষার হলে তো শুধু আমরা নই, আরও দুই স্কুলের মেয়েছেলেরাও আছে!! তাই শুনেছি কতক বন্ধুরা নাকি পরীক্ষা শেষে একজন করে ব্র্যান্ড নিউ প্রেমিকার হাত বগলের তলায় নিয়েই বের হয়েছে হল থেকে!! তবে চেষ্টা করেও এইক্ষেত্রে জোহা হয়েছে বিফল। :p তবে মাঝে মাঝে তার মুখে হাহাকার শুনি ‘কেন যে সময়ের সদ্ব্যবহার করলাম না!’
নিঃসন্দেহে সময়টা খুব আনন্দের সাথেই কেটেছে।
আমি অবশ্য এই বিশাল আনন্দের উৎস থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম। কারণ সিটপ্ল্যানে আগের রুমে কেটে পড়্রেছিলাম তাই একা একাই পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা পূর্ববর্তী আর পরবর্তী সময়গুলোতে মনেই হয়নি জীবনের প্রথম সার্টিফিকেটের জন্য পরীক্ষা দিচ্ছি। এদিকে শহরের সব স্কুলের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার মার্ক সেসময় আমাদের স্কুলেই মডিফাই হয়েই যেত। স্যারও বলত ‘তোরা এসব নিয়ে চিন্তা করিস না, সব তো আমার হাত দিয়েই যাবে!’ তাই অতি নিশ্চিন্তে কেটেছিল ছুটিটাও।
রেজাল্টের দিন আকাশ মেঘ করে ছিল। সময়ের অনেক আগেই গিয়েছিলাম, সবাই মিলে আড্ডা দিলে চিন্তা আসবে না তাই। হঠাৎ মনে হলো, ক্যামেরা আনা দরকার। এইদিকে ক্যামেরা নিয়ে আসতে আসতে দেখি রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে। আমার আগের রোলধারী বন্ধুটিই মনে হয় হাতের পাচ আঙ্গুল উচিয়ে বুঝিয়ে দিল যে এ প্লাস পাইছি।
তাই আর রেজাল্ট দেখিনি নোটিশবোর্ডে।
সত্যি কথা বলতে এখন খুব একটা বিশ্বাসই করতে ইচ্ছা করে না যে পরীক্ষা এত মধূর হতে পারে! চার বছর আগে যেখানে সারাদেশ মিলিয়ে এত বড় একটা পরীক্ষা দিতে একবিন্দু ভয় তো লাগেইনি বরং মজায় মজায় কেটেছিল, সেখানে চারবছর পর সামান্য এক ‘ক্লাস টেস্ট’ দিতেই হাত-পা কাপাকাপি শুরু করে!! নিজেকে আমি খুব একটা দোষ দেই না। যেভাবে আমাকে স্কুল গড়ে তুলেছিল, যেভাবে আমাকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল কই সেভাবে তো কিছুই হচ্ছে না! নোট মুখস্থ করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন স্কুল কখনও দেখায়নি! বরং আমার শৈশবের স্বপ্নের সাথে, আমার সাথে, আমার স্কুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। এদেশের জঘণ্যতম শিক্ষাব্যবস্থার অবহেলার জন্য রাষ্ট্রের দামী ফাইলের ফিতায় যে সাধারণ স্বপ্নগুলো আবদ্ধ হয়ে পড়ে তার দায় নেবার মত নিশ্চয়ই কেউ নেই!
যাই হোক, যারা ভাল ফলাফল করেছ তাদের অভিনন্দন। যারা খারাপ করেছ মুখে তাদের সান্তনা দিয়ে কিংবা এটা সামান্য একটা পরীক্ষা বলে ধোকা দেয়ার মানে হয় না।
নিতান্ত এই ঘোড়ার দৌড়ের বাস্তবতায় তোমরা প্রথমবার পরাজিত হলে। কিন্তু মন খারাপের কিছু নেই এটা আমিও বলতে পারি। যারা মিষ্টি বিলাচ্ছে তাকেও যে ভবিষ্যতের জন্য আগে থেকেই হারিয়ে দেয়া হয়েছে সেটা বুঝতে তার একটু সময় লাগবে। এইটুকুই যা পার্থক্য। তাই মন খারাপ হলেও অফার করা মিষ্টিগুলো খেয়ে নাও।
একসাথে এতগুলো মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ আর আসবেনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।