অদেখা আকাশে হারিয়ে যাওয়া মেঘ আমি। সব মৃত্যুই দুঃখজনক। বেশী দুঃখজনক যখন কেউ উদ্দেশ্য না বুঝে অন্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে গিয়ে মারা যান।
একটা হিসাব মেলাতে চেষ্টা করছি। ঢাকায় বিএনপি বলছে ৩০০০ জন নিহত আর সিডনীতে বিএনপি সমর্থকরা বলছেন ২৫০০ লাশ পাঁচটা ট্রাকে করে গুম করা হয়েছে।
বিএনপির দলীয় পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক যদি এটা ত্রিশ লাখ লোকের সমাবেশ হয় তাহলে তাদেরকে হঠাতে ৩০০০ লোক মারা যাওয়ার হিসাবটা ঠিকই আছে। হিসাবটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে অন্য যায়গায়। বিভিন্ন হিসেবে শোনা ৫, ৮, ৯, ১০ ট্রাক। যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম ট্রাক ছিল আটটা। এখন আটটা ট্রাকে ৩০০০ কিংবা ২৫০০ লাশ ধরে কিনা সেই হিসাব করতে যাচ্ছি না।
হিসাবটা সময়ের। একেকটা লাশ টেনে এনে ট্রাকে উঠাতে যদি নূন্যতম দেড় মিনিট করেও লাগে তাহলে ২৫০০ লাশ ট্রাকে উঠাতে সময় লাগার কথা ৩২৫০ মিনিট বা ৬২.৩০ ঘন্টা।
যদি আটটা ট্রাকের জন্য আটটা টিম কাজ করে তাহলেও সময় লাগবে প্রায় আট ঘন্টা।
রাত তিনটা থেকে লাশ গায়েবের কাজ শুরু করলেও সকাল এগারোটা পর্যন্ত ট্রাকে লাশ ভরতে হবে। মিডিয়া এবং সাধারন মানুষ যারা অভিযানের পর এবং এগারোটার আগে শাপলা চত্বরে গিয়েছেন তারা কয়টা লাশ দেখেছেন কেউ বলবেন কি?
এ পর্যন্ত পাওয়া ভিডিওগুলা দেখেছি।
তাতে আমার মনে হয় নি যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মানুষ মারার ইনটেনশন নিয়ে ওখানে গেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ভয় পাইয়ে স্থান ত্যাগে বাধ্য করা।
----------------------------------------
ওকে, আসেন মানলাম মতিঝিল শাপলা চত্বরে ২৫০০ হেফাজতী মারা গেছে। নিহত তিন হাজার হলে আহত কয় হাজার? তারা কোন হাসপাতালে গুম হয়ে আছেন? শাপলা চত্তরে লাশ গুম করা কি খুব সহজ ছিল? বিপরিত পক্ষের বিভ্রান্তিকর ও হিসাব ছারা মন্তব্য করা আমাদের একটি সহজাত অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
সাভার ট্রাজেডিতে কত জন মানুষ মারা গেছে? আমার জানামতে.. এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন ছাড়িয়েছে।
আচ্ছা.. তাদের পরিবারের মানুষজন তাদের জীবিত অথবা মৃত ফিরে পাওয়ার জন্য কেমন করেছে.. অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে গিয়ে? আমার জানামতে, এই উত্তর কাউকেই আর দেয়া লাগবে না। কারণ, আমরা সবাই জানি ও দেখেছি যে.. কতটা ছটফট করেছে তারা, তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার জন্য!
কিন্তু এখানে সেই রকম কিছুই ঘটলো না, অথচ বিএনপি বলছে হাজার হাজার লোক মারা গেছে, এ থেকে খুব সহজে ধরে নেওয়া যায়, তাদের লাশের দরকার ছিল, যা তারা পায়নি, বিএনপি চেয়েছিল হেফাজতে ইসলামের হাজারখানেক লোক শহীদ হলে তাদের আল্টিমেটাম সফল হত !!
--------------------------------------------------
দিনভর ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে রেহাই পায়নি পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থের বিপণিবিতানগুলো। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে কোরআন-হাদিসের ৮২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফুটপাতের ক্ষুদ্র এসব দোকানে থাকা কোরআন শরিফ, তসবিহ, জায়নামাজসহ অনেক কিছুই আগুনে পুড়ে যায়। হতাশা আর আক্ষেপের সুরে দোকান মালিক আফসার জানান, 'আমার দোকানের সবই কোরআন শরিফ ও ধর্মীয় বই।
হেফাজতের কর্মীরা যখন আগুন লাগাতে আসে, তাদের হাতে ধরে বলি, ভাই আমার দোকানে সব ইসলামী বই, কোরআন শরিফ। ভাই, আমার দোকানে আগুন দেবেন না। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আগুন ধরিয়ে দেয়। ' - বাংলাদেশ প্রতিদিন
আঃলীগ আর বিএনপি থেকে পালটাপাল্টী বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
আঃলীগের বক্তব্যে আমরা টিভিতে যা দেখেছি তাই। আর বিএনপি ও হেফাজত থেকে বলা হয়েছে যুবলীগের সন্ত্রাসী আগুন দিয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফে। আমার কথা হল ওখানে যারা দাবী নিয়ে এসেছিল তাদের অন্যতম দাবী ছিল ধর্ম নির্ভর। তাদের সামনে কেও কোরআন পোড়াবে আর তারা তাকিয়ে দেখবে এটা বিশ্বাস করতে পারলাম না।
আবার আমরা সারাদিন লাইভ যা দেখেছি যে আগুন কারা কোথায় লাগাচ্ছে, তাতে করে আগুন, ইট আর গুলতির জন্য পুলিশ পর্যন্ত কাছে যেতে পারেনি।
পারেনি সিপিবি ভবনের আগুন নেভাতে। সেখানে বাইরের কেও গিয়ে কোরআন পুড়বে ব্যাপারটা হাস্যকর।
ঐ এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রন, আগুন লাগানো সব কিছুই ভিডিওতে এসেছে, এবং প্রত্যক্ষ্যদর্শী দেখেছে, কেউ যদি এখন বলে এই কাজ হেফাজত শিবির করে নাই, তাইলে কি যারা বলত বিশ্বজিত কে ছাত্রলীগ মারে নাই - তারাও ঠিক ?
আবার সবচে হাস্যকর ব্যাপার, ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে যাদের ধর্মানুভুতিতে এতও আঘাত লাগল যে তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে সরকার নামিয়ে ফেলল প্রায়, তাদের সামনে পেছনে কোথাও কোরআন পূড়ল, আর ওরা এখনো চুপ??
মানতে পারছিনা।
--------------------------------------------
শেষ কথা, সরকার কেন এতও অ্যাকশান এ গেল? শাহবাগের আন্দোলন বন্ধ করলনা কিন্তু হেফাজত করল। আর গেলই যদি এতও রাতে কেন গেল? দিগন্ত কেন বন্ধ করল?
১) আপনাকে কেও বলল দ্যাখ তুই আমার কথা শোন(যেটা শোনা সম্ভব না কারন যৌক্তিকতা কম) নয়তো তোকে তোর বাসা থেকে উতখাত করব।
যা দূর হ তোর বাড়ি থেকে। বলে বাড়ি অবরোধ করল। আপনার শক্তি আছে তাকে প্রতিহত করার, আপনি নিশ্চই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন না। তাকেই তাড়িয়ে দিবেন।
২) শাহবাগের আন্দোলনে আজ পর্যন্ত কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি।
না কোন গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, না গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তা খোড়া হয়নি, ডিভাইডার ভাঙ্গা হয়নি, এটিএম বুথ ভাঙ্গা হয়নি, কোন কোরআন পোড়ানো হয়নি। সব মানুষ একনা। তাই শাহবাগের আন্দোলনে সহিংশতা নেই, সরানো হয়নি। যেসব মানুষ ফু দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার উৎখাত করতে চিটাগাং থেকে দু বেলা খাবার, ফিরে যাবার গাড়ি ভারা ছাড়াই ধাকায় আসে , আবার এসে শহর ধ্বংস করে তাদের কি চুম্মা দিবো নাকি ?
৩) সারাদিন টিভিতে দেখলাম দিনের বেলায় পুলিশ কোন কাজে আসেনি, মানে এফেক্ট ভাল ছিল না।
তাদের ওয়ার্নিং দেয়ার পরো চলে যায়নি। উলটো সরকার উতখাতে হুমকি দেয়া সহ নাশকতা করেছে অনেক।
৪) মানুষ যদি জাগনা থাকে একটা সাউন্ড বোমার শব্দে যতটা প্যানিকড হবে, সদ্য ঘুম থেকে ওঠা কেও তারচে বেশি হবেই। ঘুম থেকে উঠে ২-৪ মিনিটের মধ্যে আপনার কাছাকাছি কেও বেলুন ফোটালেও আপনি চমকে লাফ দিতে বাধ্য। তাই আমার কাছেও মনে হয়েছে ভয় দেখানোর জন্য অন্ধকার, ঘুম আর গভীর রাতটাই বেস্ট অপশন।
৫) আসেন দেখি দিগন্ত বন্ধ কেন করা যৌক্তিক, আরো আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল, যে চ্যানেল মানুষকে উস্কে দেবার মত মিথ্যে খবর বার বার প্রচার করে তাদের দিয়ে মানুষকে ভরকে না দেয়াই ভাল। অনেক আগে থেকেই দিগন্ত, ইসলামিক এবং একুশে টিভি কিছু কিছু জামাতী প্রপাগান্ডা ফলোয়াপ করে প্রচার করে যাতে দেশে অস্থিতিশিলতা তৈরি হয়। সেদিন দিগন্ত বন্ধ না হলে, দিগন্ত আর বঙ্গভাড় কাদের সিদ্দিকি নিশ্চিত লাশ ৩০,০০০ বলতেন। কারন জামাত-লন্ডনের একটা ভিডিওতে দেখলাম ওরা দাবী করছে ৩০,০০০ লাশ গুম করা হয়েছে।
কিছুই বলার নাই।
Last but not the least, "বঙ্গবন্ধু" নামটার সাথেই ওদের সমস্যা আছে। এর আগেও বি এন পি এত চমৎকার একটা ক্রিকেট ভেন্যুকে শুধু মাত্র নামের জন্য ফুটবলে দিয়ে দিয়েছিল ভেবেছিল ধংশ হয়ে যাবে, হয় নি। এবার কপ্টার শফি বাহীনি এটাকে ধংশ করার ট্রাই করেছে... ইদানিং যুদ্ধাপরাদী মামলার রায় গুলো হওয়ার পর এতও এতও কাহীনি একটু হলেও তো কনফিউশ্নের জন্ম দেয়। কারা এর পেছনে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।