নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান। তিনি সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এ নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপির ঘটনা ঘটলে এ জেলা থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে। ’ বুধবার দুপুরে শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এ কথা বলেন।
তবে আমান এও বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার কারণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের দিকে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের শক্তির ওপর আমাদের আস্থা আছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হবে। ’ মতবিনিময়ে বিএনপি নেতারা বলেন, জরুরি প্রয়োজনে এ মতবিনিময় সভা ডাকা হয়েছে। কারণ, সমস্যাগুলো খুবই মারাত্মক।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নাসিক নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান আওয়ামী লীগের লোক।
এ কারণে তার মধ্যে দলের প্রভাব রয়েছে। তৈমুর বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসারের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ। তার স্বচ্ছতা এখনো দৃশ্যমান নয়। এ কারণে আমাদের মধ্যে ভীতি রয়েছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে সরকার দলের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে সংসদের হুইপ মির্জা আজম এমপি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এসেছিলেন।
এটা সম্পূর্ণ আচরণবিধি লঙ্ঘন। ’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া অনেক বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করা হলেও তিনি কোনোটিরই আমলে নিচ্ছেন না। ’ তৈমুর আরও অভিযোগ করেন, ‘নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেটরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মী ও ক্যাডার ছিলেন। নির্বাচনে তারা দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
’ এ সময় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ২ জন ওসি-র দ্রুত প্রত্যাহার দাবি করেন তৈমুর। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সদর মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন আওয়ামী লীগের একজন এমপির জামাতা। তিনি নারায়ণগঞ্জে হরতালের দিনগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেন। নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালান। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল আলম মোল্লাও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
’ তৈমুর বলেন, ‘সদর ওসি নিজে আমাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। সুতরাং সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি তাদের পদে বহাল থাকলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা দলের পক্ষে কাজ করবেন। ’ তিনি বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে গণজোয়ার এখন বিএনপির দিকে। কিন্তু প্রশাসনের এ ধরনের কর্মকা-ের কারণে আমরা শঙ্কিত। আমরা চাই, নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা।
’
গণজোয়ারের কাছে কোনো নীল-নকশা টিকবে না বলেও মন্তব্য করেন তৈমুর। তবে তিনি নির্বাচনে আবারও ইলেট্রনিক ভোটিং পদ্ধতির (ইভিএম) বিরোধিতা করেন। মতবিনিময় সভায় আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট, ইভিএম, সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিদের দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করবো, এ ব্যাপারে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। ’ মতবিনিময়ে উপস্থিত বিএনপির আইটি বিশেষজ্ঞ শামা ওবায়েদ আবারও দাবি করেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশেন নির্বাচনে যেভাবে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে, সেগুলো দিয়ে কারচুপি ও হ্যাকিং সম্ভব।
’ তিনি বলেন, ‘ইভিএম মেশিন ভোটকেন্দ্রে আসার আগেই হ্যাক ও টেম্পারিং করা যাবে। এর মধ্যে থাকা মেমোরিকার্ড ও এর সোর্স কোড দিয়ে হ্যাকিং করা যাবে। ’
স্বচ্ছতার স্বার্থে এ সোর্স কোর্ড ওপেন করার দাবি করেন শামা ওবায়েদ। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েটে ইভিএম মেশিন তৈরির পর সেটা দেশে কিংবা বিদেশ অন্য কোনোস্থানে আর পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে, এ মেশিনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর জায়গাতে ব্যবহার করার আগে জনগণের মধ্যে এ মেশিন ছেড়ে দেওয়া। ’ শামা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ২ লাখ ইভিএম তৈরি করেছে। তার মধ্য থেকে যে কোনো একটি মেশিন আমাকে দিলে আমি এর কারচুপি ও হ্যাকিং প্রমাণ করতে পারবো। ’
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি আবুল কালাম, সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, এটিএম কামাল প্রমুখ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।