আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ- এমসি কলেজ, হরিপুর গ্যাস ফিল্ড এবং জাফলং (Murari Chand College, Haripur Gas & Jaflong Traveling)

গীত, বাদ্য এবং নৃত্যের একত্রিত সমাবেশকে আমরা সংগীত বলতে পারি। সংগীত এবং গান এর মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। সংগীত কথাটি কবিগুরু এবং কাজী সাহেবের রচিত গান গুলোতেই বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন আমরা বলি রবীন্দ্রসংগীত কিন্তু আমরা বলিনা রবীন্দ্র গান। তেমনি আমরা বলি নজরুল সেদিন ছিল শুক্রবার।

ইচ্ছে হল বাইরে থেকে কোথাও বেড়িয়ে আসি। ছুটির দিন অফিস নেই। তাই কিআর করি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সংগে আমার অফিসের অফিস এ্যাসিসটেন্ট মুক্তাকে বললাম। সংগে সংগে সে রাজি হয়ে গেল।

কি করি কোথায় যাই । প্রথমেই সিলেটের বিখ্যাত এমসি কলেজএর ভিতরে ঢুকলাম দেখতে। এমসি কলেজ (মুরারীচাদ কলেজ) এর ভিতরটা খুবই সুন্দর। এই কলেজটি সিলেটের সবচেয়ে পুরাতন কলেজ। এর পর সেখান থেকে সোজা জাফলং রোড ধরে এগুতে থাকলাম।

বটেশ্বর চলে আসলাম মানে আমাদের ইউসেপ-এরডিভিশনাল অফিস। সেসময় আমাদের ঐ অফিসের তিন তলার কাজ চলছে। শেষে এক সময় হরিপুর চলে আসলাম। হরিপুর মানে যেখানে সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্র অবস্থিত। ঢুকে পড়লাম হরিপুর সাত নং গ্যাস কুপের পাশে।

যেখানে অনেক টুরিস্টই বেড়াতে আসেন । এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন একটি পুকুর-এর ভিতর থেকে কি প্রচন্ড বেগে গ্যাস বুদবুদ আকারে বেরিয়আসছে। দেখলে মনে হবে যেন পুকুরের পানি ফুটছে। এই পুকুরের গ্যাস ওঠার ফলে একধরনের ফ্যানার সৃষ্টি হয়। সেই ফ্যানা বা গ্যাজা গুলি একত্র করে একটি দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে দিলে জ্বলতে থাকে।

এছাড়া এই পুকুরের একটুপার্শে একটি টিলাতে গেলে দেখতে পাবেন সেই টিলার বিভিন্ন ফাক ফোকর দিয়ে কিভাবে গ্যাস বের হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে দেখিয়ে দেয় কিভাবে গ্যাস বের হচ্ছে এবং তা জ্বলতে থাকে। এর ফলে তারা কিছু বাড়তি ইনকাম করে থাকে। এই যেমন ধরেন কারো কাছ থেকে ৫টাকা বা ১০টাকার বিনিময়ে তারা এই কাজ করে দেখায়। এবার হরিপুর থেকে বেরিয়ে মাজার গেটের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে কিছু হাল্কা ড্রিংকস্ করে নেই।

তখন সময় প্রায় ১২টা। মুক্তাকে বললামকি করবে মুক্তা? কোনদিকে যাবে? জাফলং এর দিকে যাবে নাকি? মুক্তা বলল, চলেন স্যার বেশি সময় লাগবে না। যদিও জাফলং -এ বেশ কয়েকবার গিয়েছি। তবুও কেন জানি জাফলং এর ঐ প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোযেন আমাকে বার বার কাছে টানে। এইতো কিছু দিন আগেও নিজে একাই বাইক নিয়ে জাফলং থেকে ঘুরে এসছি।

অবশ্য আজ আমার ক্যামেরাটাও সংগে ছিল। বাইকের পিছনে বসেমুক্তা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা শুরু করছে। একসময় আমরা পৌছালাম জৈন্তা গোয়াইনঘাট এর জৈন্তেশ্বরী রাজবাড়ী। এটি সিলেটের একটি পূরাকীর্তি ভবন। সরকারি ভাবে সেখানে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া আছে বটে কিন্তু তার কোন রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।

জৈন্তা রাজবাড়ী থেকে বেরিয়ে সোজা জাফলং এর দিকে এগুতে থাকলাম। জাফলং এর রাস্তার দৃশ্য এবং পারিপাশ্বিক যে দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন তা সত্যিই অপূর্ব। জাফলং এ যেতে ডানদিকে দেখবেন ভারতের মেঘালয় পাহাড়। দূর থেকে যেন মনে হবে প্রকৃতির সব রং, রূপ, সৌন্দর্য যেন লুকিয়ে আছে দুরের ঐ পাহাড়ে। যেতে যেতে হয়ত আপনি দূরে সাদা ফেনারমত কয়েকটি ঝর্ণাও দেখতে পাবেন।

যেগুলো অবিরাম ধারায় বয়ে চলেছে। টুরিস্টদের থাকার জন্য এখানে একটি মোটেল আছে। এখানে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারেন। এবং সেই সাথে দূরের ঐ পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। জাফলং এর রাস্তা কোথাও উচু আবার কোথাও নিচু ।

বক্র গতিতে একেবেকে চলেছে রাস্তা। জাফলং পৌছালে আপনি একটি বাজার দেখতে পাবেন যার নাম মামার বাজার। এখনে আসার সময় মাঝে মাঝে দুপাশেই পাথর ভাঙার মেশিনসহ স্টোনচিপের বিভিন্ন স্তুপ দেখতে পাবেন। এখানে বেশিরভাগ লোকই এই পাথর শিল্পের উপর দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। জাফলং জিরো পয়েন্টে গেলে দেখতে পাবেন খাসিয়া উপজাতি।

আর একটা কথা এখানে আপনি মণিপুরী বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্য কিনতে পারবেন। মণিপুরী থ্রিপিছ, চাদর, শাল, গামছা, বেডশীট ইত্যাদি আপনি এখানে পাবেন। জিরো পয়েন্টের ওপারে আপনি যেতে পারবেন না। কেননা ওপারে ভারত সীমান্ত। এখানকার এই নদীটির জল খুব স্বচ্ছ।

একেবারে কাচের মত স্বচ্ছ। এই নদীটি পার হয়ে ওপারে খাসিয়া পল্লী। এখান থেকেও আপনি খাসিয়াদের জীবন ধারা প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। এখানে আপনি দেখতে পাবেন খাসিয়া রাজবাড়ী। এছাড়া খাসিয়া পল্লী থেকে একটু ভিতরে গেলে জাফলং চা বাগান।

বিশাল এরিয়া জুড়ে এই চা বাগান। এখানে গেলে আপনি রাস্তার পাশে দেখতে পাবেন খাসিয়াদের পান চাষ পদ্ধতি। যেগুলো আমরা খাসিয়া পান বলি। পানগাছগুলি বেশিরভাগই সুপারী গাছের গা বেয়ে উপরে উঠেছে। আমাদের অন্যান্ন জেলায় যেমন পানের বরজ হয়, এখানে তেমন কোন বরজ নেই।

সব পান গাছের গা জড়িয়ে জড়িয়ে উপরে উঠেছে। জাফলং চা বাগানের বিশাল এরিয়া। এটা অবশ্য কিছুটা সমতল ভূমির উপর। এখান থেকে আপনি আপনার সুন্দর ছবি তুলতে পারবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।