আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কলকাতা ভ্রমণ == < শেষ পর্ব > == কম খরচে ইন্ডিয়া ভ্রমণ

যদি পারতাম দুঃখগুলো নিলামে বিক্রি করে দিতাম [ গত পর্বের পর ] অবশেষে আপনে ইন্ডিয়া ভ্রমণের অনুমতি পেলেন অর্থাৎ ইন্ডিয়ার ভিসা পেলেন। এখন নির্দিষ্ট একটি ভ্রমণের তারিখ ঠিক করুন। এবং সেই অনুযায়ী যাবার আগের দিন সোনালী ব্যাংক এর যেকোনো শাখা থেকে ৩০০/- টাকা দিয়ে ট্রাভেল ট্যাক্স এর কাগজ সংগ্রহ করুন। ট্রাভেল ট্যাক্স আপনে বর্ডারেও দিতে পারবেন। বর্ডারের ঝামেলায় না গিয়ে আগেই দিয়ে যাওয়া ভালো।

ঢাকা থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর বাস বেনাপোল যায়। একমাত্র বিআরটিসি'/শ্যামলী বিআরটিসি'র বাস সরাসরি কলকাতা যায়। অন্যান্য কোম্পানীর কোনো বাস-ই সরাসরি কলকাতা যায় না। যেমন আপনে গ্রীণ লাইন কিংবা সোহাগ পরিবহন এর টিকেট কাটলেন কলকাতা যাবেন। কিন্তু বেনাপোল গিয়ে বাসের সুপারভাইজার আপনার বুকের উপর একটা স্টিকার লাগিয়ে দিবে, মানে হল আপনে গ্রীণ লাইন বা সোহাগের যাত্রী।

তাদের লোক দিয়ে ইমিগ্রেশনে আপনার পাসপোর্ট পৌছে দিবে কিন্তু টাকা ছাড়া কথা বলবে না। টাকা পয়সা দিয়ে এপার-ওপাড়ের ইমিগ্রেশন পাস হলেন। তারপর ঐ কোম্পানীর নামেই অন্য বাসে করে পেট্রাপোল হতে কলকাতায় যেতে হবে। আমি বেনাপোলে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ঢাকা থেকে টিকেট কাটার সময় আমার কাছ থেকে যে ১৫০/- টাকা ট্রাভেল কনফারমেশন বাবদ নিলেন এটা কিসের জন্য? ইমিগ্রেশনে তো আপনার বাস কোম্পানীর কোনো লোক কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি? উপরন্তু দালালের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। ম্যানেজার এ ব্যাপারে আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

টাকা খরচ করে বিভিন্ন ভাবে কলকাতা যাওয়া যায়। যেহেতু আমার আজকের বিষয় "কম খরচে ইন্ডিয়া ভ্রমণ" আসুন দেখি কিভাবে কম টাকায় ইন্ডিয়া ভ্রমণ করে আসা যায়। =০১==> ঢাকা টু বেনাপোল :: ঢাকার ফকিরাপুল, আরামবাগ, সায়েদাবাদ, কলাবাগান এবং শ্যামলী হতে বিভিন্ন কোম্পানীর বাস বেনাপোলে যায়। ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। :: মনে রাখবেন :: প্রয়োজন না হলে বেশী ডলার পাসপোর্টে এন্ড্রোস করবেন না।

১৫০/- ডলারই যথেষ্ট। সাথে এক থেকে দুইশো ইন্ডিয়ান রূপি নেন। ভেতরে থাকতেই বাংলাদেশী যত টাকা আছে এর মধ্য থেকে অবশ্যই খুচরা দুই/তিনশত টাকা মানিব্যাগে রেখে বাকী টাকা এবং ইন্ডিয়ান রুপি ট্রাভেল ব্যাগের (মানি ব্যাগে নয়) এমন জায়গায় গায়েব করেন যেনো, ইমিগ্রেশন অফিসার দুরের কথা আপনে ছাড়া পৃথিবীর কোনো জ্যোতিষী খুজে না পায়। খুচরা টাকাটা ইমিগ্রেশনে লাগতে পারে। =০২==> বর্ডার এবং ইমিগ্রেশন :: বাস থেকে বেনাপোল নামার পর ডানে বামে তাকানোর দরকার নেই।

ভ্যানগাড়ী, সিএনজি অথবা পায়ে হেটে চলে যান সোজা ইমিগ্রেশনে (বেনাপোল বাস কাউন্টার থেকে ইমিগ্রেশন একটু দুরে অবস্থিত)। ইমিগ্রেশন বিল্ডিং এ প্রবেশের সময় ২০-৩০ টাকা দিয়ে একটি বডিং কার্ড এবং একটি ইমিগ্রেশন ফর্ম নিয়ে নিজেই ফিলা করে নেন। ভূলে পাসপোর্ট দালালের হাতে দিবেন না। ইমিগ্রেশন রুমের প্রবেশ করার পর বাম পাশে অফিসার আছে উনাকে আপনার ট্রাভেল ট্যাক্স এর কাগজ দেখান। তারপর একটু এগিয়ে বামে মোড় নিয়ে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে লাইনে দাড়িয়ে আপনার পাসপোর্ট, বডিং কার্ড, ইমিগ্রেশন ফর্ম অফিসারের হাতে দেন।

(প্রথমবার ভিজিটর হলে এবং পাসপোর্টে প্রাইভেট সার্ভিস হোল্ডার হলে অফিস থেকে একটি ছুটির কাগজ নিয়ে যাবেন। না হলে ইমিগ্রেশনে ঝামেলা করতে পারে)। বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন অফিসার যদি জানতে চায় আপনার কাছে কোনো ইন্ডিয়ান রুপি এবং বাংলা টাকা আছে কি-না? তখন কনফিডেন্টলী বলবেন মানিব্যাগের খুচরা টাকা ছাড়া কোনো টাকা কিংবা রুপি নেই। চেক করতে পারে, প্রয়োজন হলে মানিব্যাগ দেখান। এই ধাপ শেষে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্টে Departure Seal দিয়েছে কিনা চেক করে নেন।

তারপর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন রুম থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপারে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে চলে যান। এখানেও আজাইরা ২০-৩০ টাকা দিয়ে একটা ইমিগ্রেশন ফর্ম নেন এবং ফিলাপ করে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাড়ান। যদি চানতে চায় কোন বাংলা টাকা অথবা রুপি আছে কি-না? তখন মানিব্যাগ দেখিয়ে বলবেন খুচরা কয়টা আর ডলার ছাড়া কোনো টাকা পয়সা নেই। আশা করি ভালোয় ভালোয় ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে পেট্রাপোলের (ইন্ডিয়ান বর্ডার) রাস্তায় আসলেন। দালাল ঘিরে ধরবে ডলার ভাংগানোর জন্য, বলবে দাদা এখানে ভাংগিয়ে যান, কলকাতায় এরচেয়ে বেশী পাবেন না।

ভূলেও পেট্রাপোলে ডলার ভাংগাবেন না। পেট্রাপোল থেকে সিএনজি করে চলে যান সোজা বনগাঁও রেল স্টেশনে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০/- রুপি করে। তবে সিএনজিতে উঠার আগেই কথাবার্তা বলে নিবেন। পারলে সিএনজিতে বসেই ট্রাভেল ব্যাগ থেকে ইন্ডিয়ান রুপিগুলো খুজে বের করুন।

কারণ এখন ইন্ডিয়ান রুপিতে সিএনজি ভাড়া দিতে হবে এবং ট্রেনের টিকে কাটতে হবে। =০৩==> বনগাঁ টু শিয়ালদহ (কলকাতা) :: বনগাঁ স্টেশন থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়ে শিয়ালদহ উদ্দেশ্যে। মাত্র ১৬ রুপি দিয়ে টিকেট কেটে ইলেকট্রিক ট্রেনে প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে দেখতে দুই/তিন ঘন্টার মধ্যে আপনে পৌঁছে যাবেন শিয়ালদহ ষ্টেশনে। শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে বের হয়ে হাওড়ার লোকাল বাসে ৬ রুপি দিয়ে চলে আসেন পার্ক স্ট্রীট মোড়ে, চাদনী চক মোড়ে অথবা নিউ মার্কেট মোড়ে। যেখানেই নামেন, হেটে হেটে চলে আসেন মির্জা গালিব স্ট্রীটে (ফ্রি স্কুল স্ট্রীট) =০৪==> কোথায় থাকবেন :: মির্জা গালিব স্ট্রী, মারকুইস স্ট্রী চৌরঙ্গী লেন, রাফী আহমেদ স্ট্রীটে অনেক থাকার হোটেল আছে।

দরদাম করে আপনার পছন্দ সই একটি হোটেল নিতে পারেন। কলকাতার এই এলাকাটাই পর্যটকদের কাছে বিশেষ করে বাংলাদেশীদের কাছে খুবই পরিচিত। =০৫==> কলকাতায় দেখার মত দর্শনীয় স্থান :: ===> Victoria Memorial ===> Fort William ===> Howrah Bridge ===> Howrah Rail Station ===> Sealdah Rail Station ===> Birla Planetarium ===> Eden Gardens ===> Marble Palace ===> Indian Museum ===> Jorasanko Thakur Bari ===> Tallygonj ===> Rabindra Sadan ===> Rabindra Sarabar ===> Moydhan ===> Dharmatola ===> Huglee Bridge (Bidhasagar Bridge) Princes Ghat ===> Ganga Ghat Millennium Park ===> Kolkata High Court Building ===> Bidhan Sava Bhaban ===> Raj Bhaban এসকল দর্শনীয় স্থান সমূহ অধিকাংশই কম টাকায় মেট্রো রেলে অথবা ট্রামে করে ঘুরে আসতে পারবেন। চাইলে এক সাথে শান্তিনিকেতন ও ঘুরে আসতে পারেন। হাওড়া থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতনের ট্রেন ভাড়া মাত্র ৫৩ রুপি।

বোলপুর শান্তিনিকেতন থেকে শিয়ালদহ ভাড়া ৪৩ রুপি। =০৬==> খোদা হাফেজ কলকাতা :: আপনার ভ্রমণ সমাপ্ত, এবার দেশে আসার পালা। দুপুরের দিকে হোটেল থেকে বের হয়ে চলে আসেন শিয়ালদহ ষ্টেশনে। ১৬ রুপি দিয়ে বনগাঁ'র একটি টিকেট কেটে চলে আসেন বনগাঁ। বনগাঁ থেকে সিএনজি করে পেট্রাপোল বর্ডারে।

অতিরিক্ত ডলার এবং রুপি যা আছে, আগের মত করে ট্রেন এ থাকতে সাইজ করে দেন। ইমিগ্রেশনে টাকা পয়সার কথা কিছু জানতে চাইলে এমন ভাব ধরেন যেনো যে টাকা পয়সা আছে সেই টাকা দিয়ে কোনো মত ঢাকায় পৌছতে পারবো। :: মনে রাখবে :: কলকাতায় যখন ডলার ভাংগাবেন, তখন অবশ্য অবশ্যই ডলার ভাংগানোর মানি রিসিপট নেবেন। তা না হলে বর্ডারে বিপদে পড়তে পারেন। :: যবনিকা :: শেষের দিকে একটু সংক্ষিপ্ত করতে হল।

কাহিনী অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে এজন্য। আমি নিজেই ধৈর্য্য হারা হয়ে গেছি। আপনাদের কি অবস্থা সেটা পোষ্ট করার পর মন্তব্য থেকে উপলব্দি করতে পারবো। সবাই ভালো থাকবেন। আপনাদের কলকাতা ভ্রমণ শুভ হউক, ঝামেলামুক্ত হউক।

ধন্যবাদ সবাইকে। প্রয়োজনে লগইন করতে পারেন : ww.facebook.com/sayeftravel ==================================== আগের পর্ব গুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য লিংক : ==================================== ১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।