আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানের প্রস্তুতি

ফৌজিয়া জামান চাকরিজীবী। বাসার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা নিজেই করেন। রমজান মাসে কেনাকাটার ফর্দটাও বড়। রোজা শুরু হওয়ার আগেই কিছু জিনিস কিনে ফেলেন তিনি।
সুমী ও মোয়াজ্জেম নববিবাহিত দম্পতি।

নতুন বাসায় উঠেছেন। সেহরির সময় ঠিকমতো ঘুম থেকে উঠতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে তারা একটু চিন্তায় আছেন। কারণ আগে বাবা-মায়েরাই ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। এবার হয়তো কিছুটা সমস্যায় পড়তে হবে।
মাহবুব ও শারমি দম্পতির সমস্যা অবশ্য অন্য জায়গায়।

তারা দুজনই চাকরি করেন। ছেলেমেয়ে দুটো। দুজন পড়ে দুই স্কুলে। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সবকিছু সামলানোটা হয়তো একটু ঝামেলাই হবে।
এ রকমই অনেক বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো।

পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা যায়।
পারিবারিক প্রস্তুতি
রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে যেগুলো অপচনশীল এবং ফ্রিজে রাখা যায়, সেগুলো রোজা শুরুর আগেই কিনে ফেলুন। এতে রমজানে সময় ও অতিরিক্ত অর্থ দুটোই বাঁচবে। ইফতারসামগ্রী, সেহ্‌রি ও রাতের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে রাখুন। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবাই মিলে দরকারি জিনিসের তালিকা তৈরি করুন।


ছোলা, মুড়ি, খেজুর ইত্যাদি রোজার আগে কিনলে বাড়তি মূল্য গুনতে হয় না। পরিবারের সদস্যদের ইবাদত বন্দেগির সুবিধার্থে জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ, আতর, ইত্যাদির মতো দরকারি জিনিসগুলো কিনে নিতে পারেন। পরিবারের কারও যদি দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকে তবে রোজার আগের কয়েকদিন থেকেই (শাবান মাসে) ভোর রাতে ফজরের সময়ে ওঠার অভ্যাস করুন। এতে রোজায় সময়মতো সবকিছু করতে সুবিধা হবে।
পছন্দমতো ইফতারি কিনতে নির্দিষ্ট কোনো দোকান আগেই বাছাই করে রাখুন।

অফিস বা কাজের জায়গা থেকে বাসার দূরত্ব অনুযায়ী ঠিক করে রাখুন ইফতার বাসায় করবেন, না কি অফিসেই।
বাসায় ফিরতে চাইলে পরিবহন ও সময় দুটোই চিন্তা করে রাখুন। রমজানের পুরো মাস ঘরে ধর্মীয় আবেশ রাখতে চাইলে সেদিকটিও ভাবুন।
এ সময় অনেকেই গান-বাজনা শুনতে পছন্দ করেন না। তাই হামদ-নাত, কোরআন তেলাওয়াতসহ ধর্মীয় যে কোনো সিডি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।


শিশুদের ধর্মীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে বোঝাতে চাইলে এটাই ভালো সময়। পারিবারিক কাজে সবাই মিলে সময় দিতে পারেন। এতে কোনো কিছুই কষ্টকর মনে হবে না। পরিবারের একটু বড় শিশুদের অংশগ্রহণমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
সময় বাঁচাতে
রমজানে সব কাজে সময় নিয়ন্ত্রণ একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

তাই কিছু কাজ আগেই করে রাখতে পারেন। খেজুর বা প্রয়োজনীয় ফল কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিনেরটা আলাদা করে রাখুন।
এমন অনেক সবজি আছে, যা আগে থেকেই প্রক্রিয়াজাত করে রাখা যায়। সেগুলো কেটে আলাদা করে ফ্রিজে রাখুন।

প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে পারবেন। সুপেয় পানি বা দুধ আগে থেকেই সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারেন। তেমনি পেঁয়াজ-মরিচের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও আগেই কিনে ফেলুন। তারপর কেটে বক্স ভরে ফ্রিজে রাখুন।
অতিথি আপ্যায়ন
রমজানে অতিথি আপ্যায়ন, বিশেষ করে ইফতার করানোর ইচ্ছা থাকলে এ পদক্ষেগুলো নিতে পারেন।

যেসব খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে চান সেগুলো আগেই একদিন বাসায় রান্না করে স্বাদ ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। রান্না করতে অনেক সময় লাগে এমন সব পদ বাদ দিয়ে অন্য কোনো খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। অতিথি আপ্যায়ন বা নিজের ইফতারিতে সবসময় শরবত ও ফল রাখুন। এতে শরীরে পুষ্টি সাধনসহ অনেক উপকার হবে।
রোজার পোশাক
যদি কর্মজীবী হয়ে থাকেন তবে এই গরম ও বৃষ্টির সময় ভারী পোশাক না পরাই ভালো।

আরামদায়ক এবং বৃষ্টি উপযোগী পোশাক নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
দূষিত পরিবেশ
ধুঁয়া বা ধুলার হাত থেকে চুল বাঁচাতে ব্যবহার করতে পারেন স্কার্ফ। সারাদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। সঙ্গে গগলস ও ছাতা রাখুন। রোদে আপনাকে বাইরে বের হতে হলে ছাতা একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

এক বোতল পানিও রাখুন। কারণ অফিস ছুটির পর রাস্তার যানজট ঠেলে বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে ইফতারির সময় হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে রোজার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে সফলভাবে রমজান মাস উদযাপনে আপনার কোনো সমস্যাই হবে না।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
রোজার সময় ভাজাপোড়া খাবারে বেশি আগ্রহ দেখা যায়। এসব খাবার বর্জন করে স্বাভাবিক খাবারকে প্রাধান্য দিন।


ভাজা ও ফ্যাটজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ এ ধরনের খাবার পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে। ইফতার ও রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পানি ও ফলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে।
রাতের খাবারে বা সেহরিতে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার রাখুন।

যেমন-- ভাত পরিমাণমতো, রুটি ইত্যাদি। এগুলো আপনাকে সারাদিন রাখবে কর্মক্ষম।
আঁশজাতীয় খাবার খেতে পারেন। এটা পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করবে। যেমন-- ডাঁটা তরকারি, কচুরলতি ইত্যাদি।


পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামজাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেমন-- মাছ। এছাড়া মাংসও খেতে পারেন। তবে খাবারের পরিমাণ যেন আপনার শরীরের চাহিদা থেকে বেশি না হয়ে যায়।
কলায় কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।

তাই ইফতারিতে একটি কলা রাখুন। চা বা ক্যাফেইনজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। যাদের এ ধরনের খাবারের অভ্যাস রয়েছে তাদের রোজা থাকাকালীন মাথাব্যথা, দুর্বল এবং ঝিমুনি ভাব আসতে পারে। তাই রোজার আগে থেকেই ক্যাফেইনজাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে পারলে ভালো।
যাদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে এ সুযোগে তা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

এতে সুস্থ থাকার পাশাপাশি অর্থও বাঁচবে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।