I realized it doesn't really matter whether I exist or not.
রমজান মাস নিয়ে গত দুইবছরের স্মৃতিচারণ
রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে মানুষ আল্লাহকে পাবার জন্য আরো ব্যাপকভাবে ইবাদত করে। সারাদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে এবং রাতে বিশ রাকাত তারাবীহ'র নামাজ পড়ে। স্বভাবতঃই এ মাসে বিশ্বের প্রতিটি দেশের চালচিত্রে পরিবর্তন আসে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও।
ঠিক তেমনি সকল স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
প্রতিবছর রমজান মাসে আমার প্রতিষ্ঠান পুরো মাস ছুটি থাকে। তাই আমার এ মাসের স্মৃতি আরো বেশি রঙ্গীন, আরো বেশি স্মরণীয়।
বলছি গত দুই বছরের কথা। সেহরীর পর ফজর নামাজ পড়ে আম্মু আব্বু ঘুমিয়ে পড়েন তাদের রুমে।
আমি আলাদা রুমে থাকি। ভাগ্যক্রমে টিভি রুমে । প্রায় প্রতিদিনই ফজরের পর টিভি দেখি। গত বছরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। টিভি তে আমি ভাল ইংরেজী বা হিন্দি ছবির খোঁজ করছিলাম।
তখন ষ্টার মুভিজ এ প্রায়ই একটি ছবি দেখাতো। ষ্টার মুভিজের একটি অভ্যাস এটি। যখন যে ছবি দেখানো শুরু করে, একাধারে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে দেখাতো। একই অভ্যাস জি ষ্টুডিও ও এইচবিও'র মধ্যেও দেখা যায়। যাই হোক, গত রমজানজুড়ে প্রায় বিশবার ঐ ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল ষ্টার মুভিজে।
ছবিটার নাম Catch that Kid। দেখে থাকবেন হয়তো। ছবির কাহিনী ও স্ক্রীনপ্লে দারুণ। পনেরো-ষোলো বছরের দুইজন ছেলে ও একই বয়সের একজন মেয়ে এই ছবিতে অভিনয় করে। ছবির কাহিনীটা এরকম।
ছবির নায়িকার বাবা থাকে অনেক বড় অফিসার। খুব সম্ভবত আর্মির জেনারেল। কিন্তু রিটায়ার্ড হবার পর কেউ আর তাকে তেমন দাম দেয় না। টাকাপয়সারও খুব অভাব। হঠাৎই একদিন মেয়েটার বাবা খুব অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর টাকার যা তাদের ছিল না। এই টাকা জোগাড় করতে পদক্ষেপ নেয় কিশোরী মেয়ে ও তার দুই বন্ধু। তারা ব্যাংক (বা এই জাতীয় কী যেন একটা ভল্ট) ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয়। এবং অত্যন্ত চালাকির সাথে স্পাইডারম্যান পদ্ধতিতে অপরিসীম সাহস ও বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে হাইওয়েতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে টাকা নিয়ে আসে। শেষ দৃশ্যে হাসপাতালে টাকা আনার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় মেয়েটি ও তার দুই বন্ধু।
কিন্তু তার বাবার জন্যই এ কাজ করেছে, এ বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকার মালিক তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করেন না, বরং তাকে একটি বড় অংকের টাকার চেক উপহার দেন।
এতসব ঘটনার মাঝে থাকে একজনের প্রতি দুইজনের ভালবাসা। মেয়েটা চালাকি করে দুইজনকেই নয়-ছয় বুঝিয়ে রাখে কিন্তু টাকা চুরি করার মুহুর্তে বিষয়টা ধরা পড়ে যায়। পরে অবশ্য বিষয়টার কোন মিটমাট হয়নি। মেয়েটাকে খেলাচ্ছলে দৌড়ে শহরের দিকে চলে যেতে দেখা যায়।
পরিচালক বিষয়টাকে ক্লিয়ার করতে পারেননি। তাতে কি, মেয়েটার প্রেমে পড়ে তিনটা ছেলে
গেল ছবির পালা। ইফতার নিয়েও রমজানে আছে নানারকম স্মৃতি। ইফতারি বলতে আমরা সাধারণত মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, খেজুর, আর রকমারি ফল আর শরবত বুঝি। (যাদের টাকা বেশি আছে তারা আরো বেশি খায় ) আমরাও এর ব্যতিক্রম নই।
তবে রমজানের সবচাইতে 'মেজাজ খারাপ করা' স্মৃতি হলো মানুষের বাসায় ইফতার পৌঁছে দেয়া। মানুষের বাসায় ইফতার দিতে আমার আপত্তি নেই। আমি জানি এটা শুধু সওয়াবই নয়, বরং সামাজিকতাও বটে। কিন্তু ইফতার নিয়ে যাওয়াটা আমার মোটেই ভাল লাগতো না। আবার আমাদের বাসায় আমি ছাড়া নিয়ে যাবার মত কেউ নেইও।
তাই মেজাজ টেজাজ খারাপ করে শেষমেষ আমাকেই যেতে হতো। কী আর করব, বাধ্য হলে!
রমজানে তারাবীহ'র নামাজ আরেকটি রমজানের সাথে সম্পৃক্ত অংশ। তারাবীহ'র বিশ রাকাত নামাজ পড়তে ধৈর্য্য থাকতো না। আব্বু আবার জোর করে খতম তারাবীহ'র জামাতে নিয়ে যেতেন। আমি এটা পছন্দ করতাম না।
তারাবীহ'র নামাজ পড়লেই হলো। খতম তারাবীহ পড়াতো আর ফরজ নয়। জোর করে পড়ালে আমারই নামাজে মন বসবে না। তখন নামাজে মন না বসায় নামাজটা তো আমারই ক্ষতি হবে তাই না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
আমাকে খতম তারাবীহ'তেই যেতে হতো। উল্লেখ্য, এবছরও খতম তারাবীহ'ই পড়তে হচ্ছে। প্রতিবারের মত এবারও খতম তারাবীহ'র নামাজ পড়ছি মিরপুর মাজার শরীফ মসজিদে।
রমজানের শেষ দশদিন ই'তেকাফে বসেন অনেক মুসলমান। আব্বু গত বছর বসেছিল।
রাত এগারোটায়, ইফতারের আগমুহুর্তে আর ভোরে খাবার নিয়ে যাওয়ার স্মৃতি কখনো ভুলবার নয়। গতবছর নাজাতের দশদিনের একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল নিশ্চয়ই মনে আছে। বৃষ্টি না বলে ঝড় বলা ভাল। কী সেই বাতাস! মিরপুর মাজার রোড পুরোটা হাটু পানি বন্যা হয়ে গিয়েছিল। আরো মজার বিষয় হচ্ছে, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম আমি এই ভয়াবহ ঝড়ের মধ্যে।
প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বলছি, কারণ রাস্তায় কেউ ছিল না। পুরো রাস্তায় হাটু পানি লেগে ছিল। আর তার মাঝে চার-পাঁচটা ম্যানহোল তো খোলা আছেই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ম্যানহোলে পড়লে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ছিল না।
প্রতি বছর রমজানের সর্বশেষ স্মৃতি হয় ঈদ।
গতবারের ঈদে মোটামুটি ভালই মজা করেছিলাম। আশা করছি এবারের ঈদেও হবে। গত ঈদে সালামী ভালই পেয়েছিলাম । কিন্তু এবারের ঈদে সালামী হয়তো চাইবইনা। কারণটা জানিনা।
ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনিও আপনার স্মৃতি শেয়ার করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।