আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রূপকথা’ বিষ্ময়কর কম্পিউটার শিশু

আতাউর রহমান কাবুল আতাউর রহমান কাবুল ওয়াশিক ফারহান রূপকথা। বয়স মাত্র ৫। তার গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানায়। এই বয়সেই সে শিখে ফেলেছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, প্রজেক্ট টুল তৈরি, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের মতো অনেক জটিল কাজ। বর্তমানে দিনের ১২ ঘণ্টাই কাটে তার কম্পিউটারের সঙ্গে।

৫বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই ‘ওয়ার্ল্ড নিউজ এজেন্সি’ রূপকথাকে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রোগ্রামার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘রিপলিস বিলিভ ইট অর নট’ কর্তৃক রূপকথার বিষয়টাকে তাদের নতুন সংস্করণের জন্য নিয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডস্’ কর্তৃপক্ষও। ঢাকার গুলশানের এই বিস্ময়কর কম্পিউটার শিশু রূপকথা। রূপকথার জন্ম ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানে।

জন্মের পর ওর বয়স যখন মাত্র কয়েক দিন, তখন সে পিসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। মাত্র ৭ মাস বয়স থেকেই রূপকথা তার বাবার পিসিতে মাউস নিয়ে কম্পিউটার গেমস খেলা শুরু করে। তার বয়স যখন ১ বছর, তখন তাকে কিছু খাওয়াতে চাইলে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে খাওয়ানো হতো। প্রথমে পিসি অন করতে হতো, এরপর সে তার সামনে বসে খাবার খাওয়া শুরু করত। মাত্র দুই বছরের মাথায় সে এমএস ওয়ার্ডে টাইপিং শুরু করে।

তাকে খাবার খাওয়ানো হতো পিসির সামনে বসিয়ে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ছবি দেখিয়ে। ওইটুকু বয়সী শিশুর এই আবদার মেটাতে তার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা’কে সবকিছুই করতে হতো। যেসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে রূপকথা রূপকথা তার হাতের ছোট আঙুল দিয়ে না দেখে এত স্পিডে টাইপ করতে পারে যে বিশ্বাস করাই কঠিন। টাইপিং তার কাছে খুব সাধারণ একটি বিষয়। এরই মধ্যে উইন্ডোজ এক্সপি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এডোবি ফটোশপ, ফ্লাশ প্রভৃতিতে বেশ পারদর্শিতা হয়ে গেছে।

এমএস ওয়ার্ডের ফাইল তৈরি, টেক্সট ডিজাইন, পিকচার অ্যাড, গ্রাফ ও টেবিল ওয়ার্ক, এক্সেল দিয়ে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ, পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে পিকচার মুভিং অ্যানিমেশন, স্লাইড শো, সাউন্ড ও মিউজিক অ্যাডের কাজ তার কাছে কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ফটোশপে যে কোনো ছবি এডিট করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্যে। তথ্য পরিবর্তন করে একটি গেমসের চরিত্রকে আরেকটি গেমসে ঢুকিয়ে দিতে পারে অবলীলায়। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন গেমিং সফটওয়্যার সে নিজে ডাউনলোড করে নিজেই ইন্সটল করে। একইভাবে সিডি থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও গেমস সে নিজে নিজেই পিসিতে ইন্সটল করে।

হার্ডওয়্যার বিষয়েও তার ভালো জ্ঞান আছে। এই ৫ বছরে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সে যতটুকু পারদর্শিতা অর্জন করেছে বলা যায়, অনেক দক্ষ প্রোগ্রামাররাও তা পারেনি। প্রিন্স অব পার্সিয়া, টার্মিনেটর থ্রি, এজ অব মিথলজি, এজ অব এম্পায়ারসহ ৭শ’র অধিক জটিল কম্পিউটার গেমস সে এরই মধ্যে খেলেছে। ফেসবুক ও মাইস্পেসসহ ইন্টারনেটের বেশ কয়েকটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটেও তার অবাধ বিচরণ। ওয়াসিক ফারহান রূপকথা নামে সার্চ করলেই তাকে পাওয়া যাবে।

এর বাইরে প্রায় পাঁচ হাজার নির্ভুল ইংরেজি শব্দ জানা আছে তার। রুপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিসা জানালেন, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বসে পড়বে কম্পিউটারে। এখন সে দিনের ১২ ঘণ্টা সময় কাটায় কম্পিউটারের সঙ্গে। তার মা অবাক করে দিয়ে জানালেন, এত কিছুর জন্য তার কোনো স্কুল কিংবা প্রশিক্ষক ছিল না কোনোদিন, এখনও নেই। যা শিখেছে সব রূপকথা নিজে নিজেই শিখেছে।

শুধু কি তাই...? কম্পিউটার নিয়ে এখানেই রূপকথার শেষ নয়। ফোল্ডার ম্যানেজমেন্টেও তার রয়েছে অসম্ভব দক্ষতা। পিসির ড্রাইভ নেম ও ডেস্কটপের আইকন পরিবর্তন করে দেবে সেকেন্ডেই। ‘কিটক্যাট’ অফার করে সখ্য গড়ে তুলে তবেই আপনি তা রিকভার করিয়ে নিতে পারবেন। খুশি হয়ে সে হয়তো থিম, রেজ্যুলেশন ও বিট পরিবর্তন করে দেবে আপনার কথামতো।

খেলনা নিয়ে যখন অন্য শিশুদের সময় কাটছে, রূপকথা তখন বিরামহীনভাবে কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলছে। মাঝে মাঝে তার কম্পিউটারকে রি-ফরমেট করতে হয়। সেটআপ সে নিজেই দেয়। শুধু উইন্ডোজ সেটআপ নয়, ভিসতা ও ওরাকল সেটআপও সে করতে পারে! ডিস্ক কিনআপ ও ডিফ্রাগমেন্টেশন করে নিয়মিত। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রতিদিন সে ভাইরাস স্ক্যানও করে।

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের ডেট এক্সপায়ার করলে নিজেই ইন্টারনেট থেকে আপডেটেড ভার্সনটি ডাউনলোড করে নেয়। আপনার সিডি রাইটার যদি নষ্ট হয়ে যায়, চোখ বন্ধ করে চলে যান রূপকথাদের বাসায় গুলশানের নিকেতনের বাসায়। সিডি রাইট করে দেবে সে অনায়াসেই। পাশাপাশি শিখে আসতে পারবেন তার কাছে ফটোশপ ও ফ্লাশ ফাইভের নানা ডিজিটাল কারুশিল্প। মোট কথা, কম্পিউটারের এমন কিছু নেই যা তার কাছে অজানা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বীকৃতি এরই মধ্যে বাংলাদেশের ৫ বছরের শিশু এই রূপকথাকে নিয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোড়ন উঠেছে। তাকে নিয়ে সংবাদ, প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে বিবিসি, নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, এসট্রেট নিউজ, চিলড্রেন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে। কোথাও কোথাও তাকে মডেল হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছে। এই বয়সে রূপকথার কম্পিউটার দক্ষতা, দ্রুত টাইপিং স্পিড দেখে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার সার্ভিসেসের (বেসিস) পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। রূপকথার কাজের ভিডিও লিঙ্ক অসম্ভব প্রতিভাধর রূপকথাকে পাওয়া যাবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে।

সার্চ করতে হবে ‘incredible cyber baby roopkotha’ অথবা ‘amazing cyber baby roopkotha’ টাইপ করে। রূপকথার কাজ নিয়ে ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে রয়েছে বেশকিছু ভিডিও ক্লিপিংসের লিঙ্কস্। এগুলোর কোনোটিতে দেখা যাচ্ছে সে অনেক দ্রুত টাইপ করছে। আবার কোনোটিতে প্রোগ্রামিং বা গেমস নিয়ে কাজ করছে। এমন ভিডিও লিঙ্কসের ঠিকানা হলো- http://www.youtube.com/user/MegaFarheen এ প্রতিভাকে বিকাশ ও লালনের দায়িত্ব রাস্টকেই নিতে হবে রুপকথার এ ধরনের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিভার লালন, সংরক্ষন ও বিকাশে রাষ্ট্রিয় কোন উদ্যোগ কি নেওয়া হচ্ছে? যতটুকু জানা গেছে, রাস্ট্র বা সরকার এখনও এ ব্যাপারে উদাসীন।

আমরা সরকার বা রাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের প্রতিভাকে বিকাশ ও লালনের দায়িত্ব নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। কেননা একদিন হয়তো আমাদের এই রুপকথা-ই বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরবে আরো গর্বের সাথে। নইলে হয়তো অকূলেই ঝড়ে পড়বে সব সম্ভাবনা। জয় করবে বিশ্ব রুপকথার ব্যবসায়ী বাবা ওয়াসিম ফারহান ও মা সিনথিয়া ফারহিনের স্বপ্ন তাদের সন্তান রূপকথা ভবিষ্যতে কম্পিউটার ওয়ার্ল্ডে নতুন যুগের সূচনা করবে। আমাদেরও প্রত্যাশা—বাংলাদেশের ‘রূপকথা’ তার অদম্য প্রতিভা দিয়ে জয় করবে বিশ্ব, যার যাত্রা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

সাইবার ওয়ার্ল্ডে তার জ্ঞানের বিচ্ছুরণ নবদিগন্তের সূচনা করবে, যা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক অনেক গর্বের একটা বিষয়। লেখক : বিভাগীয় সম্পাদক, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার, দৈনিক আমার দেশ সূত্র : Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।