মানুষের সাধ্যেরে বাইরে কিছুই নেই, যদি তার নির্ভেজাল বোধগম্যতা থেকে থাকে। ভুমিকা:
প্রকৃতিকে জয় করার মাধ্যমেই সভ্যতার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আবার, এভাবে প্রকৃতিকে জয় করার মধ্যেই ঘটছে প্রকৃতির রূপান্তর। রূপান্তরের ধারায় আবার প্রকৃতির উন্নতি যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে অবনতিও। প্রকৃতির এরূপ অবনতিতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
কারণ মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই মানুষই, প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়ে ইকোসিস্টেম বা প্রকৃতির রাজ্যের ভারসাম্যকে ব্যাহত করে এবং অনবরতই তা করে। অবশ্য মানুষ তা করে জীবনেরই প্রয়োজনে। তবে জীবনের সেই দাবি মিটাতে গিয়ে মানুষ এখন প্রকৃতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, প্রকৃতি যেন তার মানুষ বহন করার ক্ষমতা দ্রুততালে হারিয়ে ফেলছে। কাজেই আজকের মানুষকে তার নিজের বেঁচে থাকার স্বার্থে, পৃথিবীতে টিকে থাকার স্বার্থে প্রকৃতির আরো অবনতি রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেইসাথে এরই মধ্যে যেটুকু অবনতি হয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে, ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে ভারসাম্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এতে ব্যর্থতার পরিণতি মানবজাতির জন্য মারাত্মক। তাতে জীবনযাত্রার বিদ্যমান মানের আরো অবনতি তো ঘটবেই, এমনকি বিশ্বমায়ের কোলে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করা পর্যন্ত মহাহুমকির সম্মুখীন হতে পারে। পরিবেশ-বিবেচনা-বর্জিত উন্নয়নের এটা হচ্ছে নিয়তি এবং এখন পর্যন্ত এ প্রবণতাই প্রবল।
পরিবেশের উপর কৃত্রিম প্রভাব:
ওজোনস্তরের কথা বলা যায়। এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে ওজোনস্তরের ক্ষতি সাধিত হয়েছে, গ্রিনহাউস প্রভাব বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়েছে এবং আরো বাড়িয়ে চলেছে।
এসিড রেইন বা রাসায়নিক বৃষ্টিপাত বনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে তেজস্ক্রিয় ভস্মজনিত মহামারীর আশঙ্কা দিনকে-দিন ঘনীভূত করে তুলছে। বলাই বাহুল্য, এ আশঙ্কার রয়েছে অন্তঃস্থলে লুকায়িত প্রযুক্তি। ফলে উন্নত রাষ্ট্রগোষ্ঠীসহ অন্যান্য দিক দিয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ সমাজগুলিতেও পানি, বায়ু আর শব্দের দূষণ জীবনকে শোচনীয় করে তুলেছে। এর বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশগুলির জনাকীর্ণ নগরী ও মহানগরীগুলিতে বানের মতো বস্তি-এলাকার সম্প্রসারণ উন্নয়নের প্রতি পরিহাস হিসাবে বিরাজ করছে।
পাকৃতিক দুযোর্গের প্রেক্ষাপট:
উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সম্পৃক্ত প্রসঙ্গগুলি সীমিত পরিসরে উন্মোচন করা হলে লক্ষ্য করা যায় যে, মানুষের কারিগরি মেধা ও সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর মানবিক অগ্রগতি বরাবর নির্ভর করেছে।
উন্নয়ন হাসিল ও উন্নত পরিবেশ রূপায়ণে মানুষের এই মেধা অনেক ক্ষেত্রে আইনানুগভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বায়ু ও পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বস্তু ও জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিতে এর প্রমাণ মেলে। বহু দেশ বিস্ময়কর উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির রাশ টানতে সক্ষম হয়েছে। ওষুধের মতো কোনো-কোনো প্রাযুক্তিক অগ্রগতিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ভাগীদার হতে পেরেছে অথবা সুবিধাগুলি ভাগাভাগি করে নেয়ার ব্যাপকতর সুযোগ লাভ করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে সাধারণ বাধা:
পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নপ্রবাহ টিকিয়ে রাখার ব্যর্থতা বিশ্বের বহু দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ করেও তুলেছে।
পরিবেশ এবং উন্নয়নজনিত হুমকি একটি থেকে অন্যটি আবার স্বতন্ত্র নয় বরং অবিচ্ছেদ্যভাবে একাত্ম। একটি অবনতিশীল প্রাকৃতিক ভিতের ওপর উন্নয়ন টিকে থাকতে পারে না। পরিবেশের অবনতির খেসারত যদি উন্নয়নের মূল্যমানকে পিছন ফেলে দেয় তখন উন্নয়নের সাথেও কোনো লাভ বা সুবিধা যুক্ত থাকে না। কেননা, উন্নয়নের মূল্যমান ও মানবিক সুবিধা কার্যকারণ ও প্রভাব প্রতিক্রিয়ার এক জটিল পদ্ধতিতে আবদ্ধ। এজন্য এর সমাধানও বিচ্ছিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াস বা খন্ডিত নীতিমালার গন্ডিতে সাধন করা সম্ভব নয়।
পরিবেশ উন্নয়নে পদক্ষেপে অনীহা:
পরিবেশ উন্নয়নে যুতসই বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার 'ক্লাইমেট ডিপেস্নামেসি' শুরু করেছে। চলতি শতকের সবচেয়ে আলোচিত এ ইসু্য সামনে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে বাংলাদেশ। ক্লাইমেট ডিপেস্নামেসির কারণে উন্নত বিশ্বের পরিবেশ দূষণ কর্মকান্ডে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা এজেন্ডাভুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এ নেতৃত্বের অবস্থান নিশ্চিত করে। সরকার দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রৰা এবং পরিবেশ উন্নয়নে আনত্মর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের আর্থিক সমর্থনও নিশ্চিত করেছে।
ইতোমধ্যে আনত্মর্জাতিক অর্থে প্রায় ১২শ' কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশ 'ক্লাইমেট ডিপেস্নামেসি' শুরম্ন করেছে, যার ফল কোপেনহেগেন সম্মেলনে পাওয়া গেছে। সরকারের ব্যাপক সমালোচনার পরও পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির জন্য সরকার বাপাকে এবার জাতীয় পরিবেশ উন্নয়ন পদক দেয়ার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। পরিবেশ রৰায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের মধ্যে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ, বহুতল ভবন নির্মাণ, নদী দখল, বন দখলসহ পরিবেশের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকার বিসত্মারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে; জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
আইনী ব্যবস্থাপনাও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার নাগরিক জীবনে পরিবেশগত সমস্যার বিষয়টি বর্তমান সরকার বিশেষ গুরম্নত্বের সঙ্গে নিয়েছে। পরিবেশ দূষণের বিষয়ে সরকার মৌলিক সমস্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছে_ পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পাহাড় কাটা, বনভূমি উজাড়, শব্দদূষণ এবং জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট।
পরিবেশের জনসংখ্যা সমস্যা:
পরিবেশ সম্পর্কে উদ্বেগ সভ্যতার সূচনা থেকেই লক্ষ্য করা যায়। সুপ্রাচীনকাল থেকে মহামনীষী ছাড়াও প্রকৃতিপ্রেমিক শিল্পী, সাহিত্যিক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব প্রকৃতির জয়গান করেছেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন এবং প্রকৃতিপ্রেমের অন্তহীন আলেখ্য তুলে ধরেছেন।
তবে প্রকৃতিকে পরিবেশের সাথে একাত্ম করে দেখার চেতনা সাম্প্রতিককালের ব্যাপার। এটা সূচিত হয়েছে যখন বিশ্বে মাত্রাতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বেড়ে গিয়ে পরিবেশের অবনতি অবধারিত করে তুলেছে এবং যখন মানুষ প্রকৃতির সম্পদভান্ডারের প্রকাশ্য ও গোপন দুর্গে হানা দিয়ে বসেছে। আবার, ধারণোপযোগী ও অর্থবহ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসাবে পরিবেশকে বিচার-বিবেচনায় আনা শুরু হয় বলতে গেলে ’৬০-এর দশক থেকেথযখন প্রযুক্তিগত বিপুল উদ্ভাবন পরিবেশের যথেষ্ট অনিষ্ট সাধনের সাথে সম্পর্কযুক্ত সংকটের বহুবিধ নেতিবাচক গ্রন্থি আকস্মিকভাবে উন্মোচিত করে দেয়।
জলবায়ূ পরিবর্তন:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ৰতিপূরণ আদায়ের লৰ্যে আনত্মর্জাতিক নেগোসিয়েশনে অংশগ্রহণ এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসাইকেল ফান্ড গঠন করে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের নিজস্ব তহবিলে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং ৭শ' কোটি টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের লৰ্যে সিডিএম প্রকল্প তৈরি এবং ৮টি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জলবায়ু উন্নয়নের লৰ্যে গৃহীত প্রকল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ, কোস্টাল এ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট এ্যাট কঙ্বাজার এ্যান্ড হাকালুকি হাওড়, বাংলাদেশ ইনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট ইত্যাদি। এমন ৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এডিবিভুক্ত জলবায়ু বিষয়ক ১২টি প্রকল্পের কার্যক্রম বাসত্মবায়ন অগ্রগতি শতকরা ৬৪ দশমিক ১৬ ভাগ। ক্লাইমেট চেঞ্জ কনভেনশন ও কিয়োটা প্রটোকল এঙ্সে এবং তদানুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়ক ১২টি সেল গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করায় গত অর্থবছরে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বেড়েছে পঞ্চাশ ভাগ।
বিষয়টি পরিবেশগত সচেতনতার সাৰ্য বহন করছে। গত অর্থবছরে ১৪ হাজার ১শ' ৪৩টি ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। গত অর্থবছরে পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়েছে ৮ হাজার ২শ' ৮৯টি।
পরিবেশ রক্ষায় সরকারের উদাসিনতা:
বন ও পরিবেশ রৰার স্বার্থে সরকার গত ১৫ জুলাই এক গণবিজ্ঞপ্তিতে হাইব্রিড হফম্যান কিলন, জিগজ্যাগ কিলন ও ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন এবং অন্যান্য পরীৰিত প্রযুক্তিতে ইট তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। সরকার চলতি অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ চারা বিনামূল্যে বিতরণের জন্য চারটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
গত বছর সরকার ১শ' ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৪ হাজার পরিবারকে চারা দিয়েছে এবং সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ কিসত্মিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরি ও শিল্প দূষণ রোধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 'থ্রি আর' (রিডিউজ, রিইউজ, রিসাইকেল) ব্যবস্থার প্রচলন করা হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। জাহাজ ভাঙ্গার বিষাক্ত বজর্্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরির খসড়া করা হয়েছে। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করা হচ্ছে।
সকল শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিডিএম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে দূষণ কর্মকা- রোধে মোট ৩ হাজার ৫শ' ৪৪টি নোটিস দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন দূষণ রোধে ধার্যকৃত জরিমানার পরিমাণ ২শ' ৫৪ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ৯শ' ২৮ টাকা।
বায়ু ও শব্দদূষণ এবং পলিথিন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গত অর্থবছরে সরকার বায়ুদূষণে মোট ২৩ দিন অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে জরিপকৃত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৩শ' ৪৪টি।
আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন ও কার্যকর প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগ উদ্ধারে গত অর্থবছরে সরকার মোট ১শ' ৭০টি অভিযান পরিচালনা করেছে। জব্দকৃত পলিথিনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ২৫ কেজি এবং জরিমানা আদায় করা হয় ৩১ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা।
পরিবেশ রক্ষায় জনগণের অসচেতনতা:
পরিবেশ উন্নয়নের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পরিবেশ রৰা এবং উন্নয়নে বাংলাদেশ আলোড়ন তুলেছে। একইভাবে বাংলাদেশে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। বন রৰণে বনরৰীর পরিবর্তে স্থানীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল নাগরিকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে তাদের ওপর বন রৰার ভার দিতে হবে। এতে ভাল ফল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে সরকার যে কোন ধরনের সমালোচনা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে এবং তাৎৰণিক পদৰেপ নেবে।
তবে সমালোচনাগুলো ভিত্তিহীন হলে চলবে না। তিনি বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সরকারের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে। তবে তারা পরিবেশ উন্নয়নে জনসচেতনতা তৈরি করছে। তাই এবার জাতীয় পরিবেশ উন্নয়ন পদক বাপাকে দেয়ার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় নারী না থাকা:
বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর পরিবেশ সম্পর্কে ভাবনার সূত্রপাত হয় বেশ তাড়াতাড়ি।
মূলত, ১৯৭২ সালে স্টকহোম কনভেনশনে বিশ্ব পরিবেশের অবক্ষয় ও মানুষসহ প্রাণীকুলের ওপর এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের বাস্তবতায় পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পর থেকে শুরু হয় পরিবেশ বিষয়ে ভাবনা ও গবেষণা। আমাদের দেশের সরকার দেশের পরিবেশ রক্ষায় ১৯৭২ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে মাত্র ২৭ জনবলের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিদফতর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭২ সালের ঘোষণার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল ২১ শতকের পরিবেশ ও উন্নয়ন। নারীর সঙ্গে পরিবেশ, পরিবেশের সঙ্গে উন্নয়ন, উন্নয়নের ভিত্তি জেন্ডারবান্ধব পরিবেশ—এ সবই একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্কযুক্ত অর্থাত্ একটি অন্যটির পরিপূরক।
একটি কথা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, নারী শুধু পুরুষের মতো ভোক্তা হিসেবে তার অবস্থানকে সুদৃঢ় করেনি বরং প্রকৃতিকে রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। নারীর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কনভেনশন সম্পর্কে আলোচনা করা একান্ত অপরিহার্য। ব্রাজিলের রিও সম্মেলনে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘ পরিবেশ পরিবর্তন রূপরেখা কনভেনশন (UNFCC: United Nations Framework Convention on Climate Change) আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে দরকারি। জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন হয় যার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সুদূরপ্রসারী টেকসই সমতাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য নারীর অংশগ্রহণ।
’ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে ১৯৯২ সালে যে ঘোষণা প্রদান করা হয় (Declaration of the UN Conference on Environmant and Development) তার ২০ নম্বর নীতি (Principle) প্রণিধানযোগ্য। ২০ নং নীতিতে উল্লেখ রয়েছে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় এবং উন্নয়নে নারীর গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি ভূমিকা বিদ্যমান। সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের জন্য নারী সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সুতরাং একথা পরিপূর্ণভাবে সত্য যে, টেকসই উন্নয়নে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন।
এ সম্মেলনে ‘নারী ও পরিবেশ’ হলো ১২টি প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশনের মধ্যে একটি। এখানে পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় প্রত্যেককে প্রভাবান্বিত করলেও নারীদের জীবনকে অধিক হারে স্পর্শ করে যা তাদের জীবনব্যাপী বহন করতে হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও পরিবেশগত উপযুক্ত ভোগ ও উত্পাদনের ধরন বিকাশের ক্ষেত্রে নারীদের রয়েছে মৌলিক ভূমিকা।
আন্তজার্তিক এজেন্ডায় কম আলোচনা:
পরিবেশ ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতিসংঘ সম্মেলন এবং জনসংখ্যা ও উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে। পাশাপাশি বলে রাখা ভালো ২১ সংখ্যক এজেন্ডায় এর সরাসরি প্রতিফলন রয়েছে।
মানুষের ধারাবাহিক পরিবেশ বিপর্যয় ও দূষণের আগ্রাসনে এ ধরণীর সার্বিক প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখোমুখি ও বিপর্যয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে। এ জাতীয় বিপর্যয়ের ফলে নারী উত্পাদনশীল জগত্ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভয়াবহ অবক্ষয়, মরুকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার দায়ভার, নারীর খাদ্য, জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে নারী মজুরিবিহীন কাজে অধিক সময় ধরে জড়িত, যা নারীদের আয়মূলক কাজ থেকে ছিটকে পড়তে সহায়তা করে। আমাদের দেশের জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সব মানুষ বিশেষ করে নারীরা বিশেষভাবে অরক্ষিত ও বঞ্চনার শিকার। গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক নারী কৃষি কাজের সঙ্গে বিশেষ করে সবজি বাগান ও ফল-ফুল উত্পাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
বাসা-বাড়িতে ও কৃষি জমির কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ঝুঁকি নারীর স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। খারাপ প্রভাবের কথা বলছি, কারণ আমরা সবাই জানি ভিন্ন ভিন্ন বেশকিছু রাসায়নিক দ্রব্যের বিষক্রিয়ার প্রতি নারীর নাজুকতা খানিকটা বেশি। আগেই বলেছি, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের দ্বারা নারী ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জীবনের মান ও টিকে থাকার সামর্থ্যের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে গতিশীল ও চলমান করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে যা জেন্ডার সমতা ও ন্যায্য বিচারকে তরান্বিত করে। তবে উদ্বেগের সঙ্গে বলতে হয়, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাসম্পন্ন পেশাদার ব্যবস্থাপক হিসেবে যথা পানি বিশেষজ্ঞ, কৃষিবিদ, পরিবেশবিদ, আইনজীবী ও বন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নারীদের খুব সামান্যই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
দুযোর্গ মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার অব্যবস্থাপনা:
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির শীর্ষ স্থানীয় দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত। পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কয়েকটি পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক এক গোলটেবিল আলোচনায় পরিবেশ বিশেজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতীয় দলের সমন্বয়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার, কনসার্ন ওয়ার্ল্ভ্র ওয়াইডের বাংলাদেশের পরিচালক ড. এ কে এম মুসা, পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত প্রমুখ।
পরিবেশের উপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব:
তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে আলোচনা করলেই আমরা স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিটাকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু তামাক শুধুমাত্র স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিই করছে না পরিবেশগত দিক থেকেও এটি মারাত্বক ক্ষতিকর। তামাক প্রক্রিয়াজাত করনে ক্রমাগত আবাদযোগ্য জমির অপব্যবহার, বনাঞ্চল ধ্বংশ ইত্যাদি জীব বৈচিত্র্যের অস্তিত্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনা করে এ সমস্যা সমাধানে তামাক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে চাষ যোগ্য জমির পরিমান সীমিত। অথচ অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যহানীকর তামাক উৎপাদনের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনের জমি। জমির পাশাপাশি উৎপাদিত তামাক শুকানোর জন্য বন ধবংস করে গাছ কেটে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছর তামাক উৎপাদনের কারনে ২ লক্ষ হেক্টর বন ধবংস হচ্ছে।
তামাক শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমান কাঠ। এ কাঠ সংগ্রহ করা হয় গাছ কেটে। বিপুল পরিমান গাছ কাটার ফলে চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় বনাঞ্চল ধবংশ হচ্ছে। এক একর জমিতে যে পরিমান তামাক উৎপন্ন হয় এটি শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৬ টন কাঠ। এভাবে তামাক শুকানোর কাজে বন ধবংশ এবং কাঠ পোড়ানোর কারণে উৎপন্ন ধোয়ার কারণে মারাত্বক হুমকির সম্মুখীন মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
বন কেটে উজাড় করার ফলে নষ্ট হচ্ছে মাটির ধারন ক্ষমতা ফলে আমাদের ভূমি ধসের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তামাক শুকানোর কাজে গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংশ করা হচ্ছে এর বিরূপ প্রভাব পানির উপরও পড়ছে। তামাক চাষে প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমান পানির। তাই পার্বত্য এলাকায় তামাক কোম্পানীগুলো চাষের জন্য বেছে নেয় নদীর ঢালের কাছের জমিগুলোকে। পাহাড়ী এলাকায় নদীগুলোই ঐ এলাকার মানুষের অন্যতম পানির উৎস।
তামাক চাষে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক এবং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে তা স্থানীয় পানির প্রবাহকে দূষিত করে। গৃহস্থালীর কাজে দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। পানি দূষিত হওয়ার ফলে শুধুমাত্র মানব জাতিই নয় পানির নিচে বসবাসরত জীব বৈচিত্রও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে।
তাছাড়া জমির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে তামাক চাষের জমিতে ব্যবহার করা হয় প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশক। এসকল সার ও কিটনাশক জমি থেকে গড়িয়ে নদীর পানিতে গিয়ে মেশে।
আবার তামাক শুকানোর পর পোড়া গাছ, খড় বা কুড়া পোড়ানোর ছাই নদী বা পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। ফলে পুকুরের জলজ প্রাণী বিশেষ করে মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এদের প্রজনন ক্ষমতা। বর্তমানে আমাদের অনেক প্রজাতীর দেশীয় মাছ, জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরো কিছু মাছ এবং জলজ প্রাণী বিপন্ন হওয়ার পথে।
সাগরতলে কোরাল কাহিনী:
সাগর তলার দুনিয়ায় কত কিছুই ঘটছে।
হাজার জাতের উদ্ভিদ, হাজার জাতের প্রাণী আছে সাগরে। সাগরের পরিবেশও বৈচিত্র্যময়। এসব নিয়ে সাগরের বুকে ঘটছে নানা পরিবর্তন। সাগর তলার সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। এ সৌন্দর্যের জন্য কোরালের নাম সবার আগে আসবে।
কোরাল এক ধরনের অমেরুদণ্ডি প্রাণী। সিলন্টারাটা পূর্বভুক্ত। কোরাল সমাজবদ্ধ জীব। সারাজীবন যারা একসঙ্গে বসবাস করে, মরণেও তারা একসঙ্গে। মৃত কোরালও এক ধরনের পরিবর্তনে অংশ নেয়।
মৃত কোরালের দেহ স্তুপাকারে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে কোরাল রিফ, কোরাল ব্যাঙ্কের (বাঁধাকৃতি) নাম উল্লেখ করার মতো। তবে এদের মূল উপাদান অভিন্ন। এরা কার্বোনেট অব লাইম নিয়ে তৈরি। এছাড়া অন্যান্য প্রাণীর অংশ, শৈবালও দেখতে পাওয়া যায়।
কোরাল রিফ অথবা কোরাল ব্যাঙ্ক গঠন নির্ভর করে সাগরের পরিবেশের ওপর। বিশেষ করে তাপমাত্রা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবের উপস্থিতির মাত্রার ওপর নির্ভরশীল।
কোরাল রিফ কি? পাথুরে কোরাল দিয়ে কোরাল রিফ তৈরি। কোরাল রিফ সাধারণত ট্রপিক্যাল সাগরে গঠিত। ট্রপিক্যাল সাগরে অগভীর অঞ্চলে এদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
কোরাল রিফ গঠনে আদর্শ তাপমাত্রা (২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)-এখানে সব সময় বজায় থাকে। একই কারণে সাধারণত ১১ মিটার হতে ৪০ মিটার গভীর সাগর অঞ্চলে এদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। রিফকে সাধারণত উপর দিকে বাড়তে দেখা যায়।
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে:
টেকসই উন্নয়নের বহু ধরনের সংজ্ঞা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটা উন্নয়ন যা বর্তমান জনসংখ্যার সার্বিক প্রয়োজন শুধু মেটাবে না, এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটাতেও সমর্থ হবে।
টেকসই উন্নয়নের সাথে পরিবেশের প্রশ্নটি জড়িত। দারিদ্র্য, ভূমিহীনতা, অপুষ্টি, মৌলিক প্রয়োজন ও সেবার অভাব প্রভৃতি সমস্যার ফলে প্রতিবেশ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগের ফলে কিছু কিছু সেক্টর লাভবান হলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিযা পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, ষাটের দশকে কাপ্তাই হূদে পানি বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ দেয়া হয়। এর ফলে বেশ কিছু পরিমাণ বিদু্ৎ উৎপাদন সম্ভবপর হয়; কিন্তু পরিণামে পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক যে ক্ষতি স্বীকার করতে হয় তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিককালে কাপ্তাই হূদের পানির স্তর দারুণভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইতোপূর্বে কাপ্তাই হূদের নিকটবতর্ী এলাকার জেলেরা কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিভিন্ন প্রকারের মাছ ধরতে পারত; কিন্তু এখন কাপ্তাই হূদে বিচিত্র ধরনের মাছ আর পাওয়া যায় না। বাঁধজনিত পানির ফলে আশ-পাশের পাহাড়ী লোকজন আজ ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। ধানী জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রভাবও কম নয়।
একই নদীতে বর্তমানে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বে দু'টো সেতু ছিল; বতৃমানে আরও একটি যোগ করা হয়েছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে একটি উচ্চ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত সেতু নির্মাণ করা হলে তিনটি সেতুর দরকার হতো না। সেতু নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়, মাটির স্তূপ জমে যায় এবং নদীর পাশ ভেঙ্গে যায়। নদীর তীরে বসবাসকারী জনগণ গৃহহারা হয়।
জেলেরা বেকার হয়ে যায়। আমরা পরিবেশজনিত ক্ষতি হয়ত পরিমাপ করতে পারব, কিন্তু এর ফলে সামাজিক যে লোকসান হতে পারে, তা পরিমাপ করা সুকঠিন। ফলশ্রুতিতে এ ধরনের উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন হয় না। তাই টেকসই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সাতটি শর্তের উলেস্নখ করেছেন।
এর মধ্যে প্রধান তিনটি শর্ত হল (১) এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা স্বনির্ভর ও স্থায়ী ভিত্তিতে উদ্বৃত ও কারিগরি জ্ঞান সৃষ্টি করতে সক্ষম। (২) এমন একটি সামাজিক ব্যবস্থা বিনির্মাণ করা যার দ্বারা বৈষম্যমূলক উন্নয়নের ফলে সৃষ্ট দুশ্চিন্তার সমাধান হবে। (৩) এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা বিনির্মাণ করা যা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভিত্তি সংরক্ষণ করে। এক কথায়, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতির সাথে টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি জড়িত।
উপসংহার:
বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি অতীব দরিদ্র দেশ।
এ দেশের সম্পদের ভিত্তি নিম্ন, ভূমি-জন অনুপাত নিম্ন, সামাজিক শোষণ ও বঞ্চনার হার সর্বাধিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জনগণের জীবিকা সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। কর্মসংস্থানের জন্য, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের জন্য একমাত্র উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। ৫০ শতাংশেরও বেশী লোকের জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে কৃষি। কিন্তু কৃষি সেক্টর সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের হুমকির সম্মুখীন।
কৃষির টেকসই উন্নয়নের জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিবেশগত পরিকল্পনা অপরিহার্য। সাম্প্রতিককালে আমরা সমুদ্রের গভীরতা হ্রাস পাওয়ার কিংবা সমুদ্র স্তর উচুঁ হওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। কোন কোন বিজ্ঞানী ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, চলতি শতাব্দীতে বাংলাদেশের বিশাল ভূখন্ড সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। অতীতে ৩০ থেকে ৪০ বৎসর পর ব্যাপক হারে বন্যা হত। এখন প্রতি ৩ থেকে ৪ বৎসর পর বাংলাদেশ ভয়ানক বন্যার শিকার হচ্ছে।
সিডর, আইলা প্রভৃতি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্র উপকূলবতর্ী জনবসতি দুমকীর সম্মুক্ষীণ। জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে, আর অন্যদিকে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলশ্রুতিতে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের সংস্থান করার জন্য প্রকৃতির উপর প্রচন্ড চাপ পড়ছে। কিন্তু প্রকৃতির ক্ষমতা বা সামর্থ্যেরও একটা সীমা আছে। আমরা এ সকল সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের জন্য কোন টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।