একদিন জন্মের চিৎকারে পৃথিবীতে এসেছিলাম। আবার একদিন কিছু চিৎকারের মাঝ দিয়েই চলে যাব। গাদ্দাফি নিহত। লিবিয়ানরা এখন ইচ্ছেমতো আনন্দ করতে পারে। নেচে গেয়ে নিজেদের উল্লাসকে জানিয়ে দিতে পারে বিশ্ববাসীকে।
কিন্তু 'অপরাধী' গাদ্দাফি কি সহজেই পাড় পেয়ে গেলেন? নাকি তার মৃত্যূ আরো একটি বিতর্কের জন্ম দিয়ে গেল? কিংবা আরো একটি বাঁকা প্রশ্ন করা যাক, গাদ্দাফিকে হত্যা প্রক্রিয়ায় আমেরিকান মানবতাবাদ কি পদতলে পিষ্ঠ করা হলো না? কি অদ্ভূত ব্যাপার, গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পরদিন জাতিসংঘ মহাসচিব পর্যন্ত আনন্দে বগল বাজাচ্ছেন। কিন্তু পৃথিবীতে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, তাকে আত্নপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেয়া উচিত। জাতি সংঘ মহাসচিব কি এই অতি পরিচিত নিয়মটি ভুলে গেলেন? নাকি আমেরিকান ভূত তার মাথা থেকে সেই বেদ বাক্যটি ভুলিয়ে দিল?
গাদ্দাফি নিহত হওয়ায় লিবিয়ানদের লাভ হলো কি ক্ষতি? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের কাঁধেই তোলা রইল। কিন্তু একথা তো ঠিক, আমেরিকানরা নতুন করে লিবিয়া শোষণ করার এক উত্তম মাধ্যম পেয়ে গেল বিপ্লবী সরকারের মাধ্যমে!
লিবিয়ান এক তরুণ স্বীকার করছেন, তিনিই হত্যা করেছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে। হায়রে হতভাগা, সে নিজেও জানল না, গাদ্দাফিকে হত্যা করতে তাকে ব্যবহার করেছে অন্য কোন শক্তি।
গাদ্দাফির অপরাধ, তিনি টানা ৪২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। গাদ্দাফির অপরাধ তিনি নিজের দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গাদ্দাফির অপরাধ তিনি মাঝে মধ্যে আমেরিকা বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন। এই সকল অপরাধ যদি একজনকে নিহত হওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ বলে বিচেচিত হয়ে থাকে, তবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার অপরাধে সমগ্র আমেরিকান জাতির কি শাস্তি হওয়া উচিত? সেই সকল নিরপরাধ আমেরিকানদেরও আমি ক্ষমা করতে পারি না, যারা নিজেদের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যারা বার বার ইহুদী স্বার্থবাদী সরকারকেই ক্ষমতার মঞ্চে বসিয়ে দেয়।
কেবল বুশ কিংবা বারাক ওবামা কিংবা ক্লিনটন নন, সমগ্র মার্কিন জাতির হাতেই আজ লেগে রয়েছে ইরাক-আফগানিস্তান-ভিয়েতনাম-লিবিয়ার নিরপরাধ মানুষদের লাল রক্ত। এই রক্তের হিসেব কেউ চায় না। এই রক্তের মূল্য নেই। রাস্তায় চাপা পড়ে মৃত কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্টতর মৃত্যূ অহরহই ঘটছে এই সকল দেশগুলোতে।
ফিলিস্তিনের কথা না বললে এই লেখাটিকে অবৈধ বলতে হবে।
একজন ফিলিস্তিনি শিশু কতটা সাহস বুকে নিয়ে ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে পাথরের ঢিল ছুঁড়তে পারে, তা কেবল ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটেই জানা সম্ভব। একজন তরুণী কতটা অসহায় তার সম্ভ্রম রক্ষায়, এটি কেবল একজন ইরানিই জানে। আমার লক্ষ্য আমেরিকানদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো নয়। যাদের পক্ষে বলার মতো কিছু নেই, তাদের বিপক্ষে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন নেই। আমার লক্ষ্য আমেরিকানদের জনতার আদালতে নিয়ে আসা।
একবার সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া। একবার অন্তত মৃত্যূর আগে তারা জেনে যাক, পৃথিবীর মানুষ কতটা ঘৃণা করে সমগ্র আমেরিকান জাতিকে। যারা শিশু, নারী এবং বৃদ্ধের বয়স ভুলে গিয়ে হত্যা করে নির্বিচারে। যারা পিতা-পুত্রের সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন করে উল্লাস করে।
মানবতা নামক আমেরিকার এই সুবিধাবাদ নীতিকে পৃথিবীবাসীর সম্মিলিতভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
কিন্তু কে করবে? চীন? রাশিয়া? কিংবা অন্য কেউ? 'সব শিয়ালের এক রা' এর মতো সেই সকল শক্তিগুলো একই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে না? আমি কেবল লেখনীর ভাষায় তাদের সেই মানবতা বাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করতে পারি। আর একজন বিশ্ব নেতার অবহেলিত মৃত্যূতে একক শোক ঘোষণা করতে পারি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।