আত্মমাঝে বিশ্বকায়া, জাগাও তাকে ভালোবেসে
লিবিয়ায় শত শত মানুষ হারাচ্ছে প্রাণ শাসকের ক্ষমতার মোহে। গাদ্দাফি একদিন অস্ত্রের মুখে দখল করে নিয়েছিলেন শাসকের মসনদ। কিন্তু আজ! এ পৃথিবীতে কোনোকিছুই স্থায়ী নয়। অথচ আমারা পেয়ে গেলি পর ভাবি, এর প্রতি আমার চিরকালীন যথেচ্ছ অধিকার।
একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হলে একই জনপদের মানুষের ন্যূনতম কিছু বিষয়ে ঐক্যের ভিত্তিটুকু প্রয়োজন হয়।
কিন্তু কল্যাণকামী রাষ্ট্রমাত্রই মানুষের বৈশ্বিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যে রাষ্ট্রে নিপীড়ন নৈমিত্তিক, নিরাপত্তা নেই মানুষের, যে রাষ্ট্রে মত প্রকাশ ও ব্যক্তির নিজস্ব ধর্মপালন সম্ভব নয়, যে রাষ্ট্র মানুষের স্বাধীন বিকাশ ও জীবনযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যে রাষ্ট্র ন্যুনতম অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, যে রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার নেই তা রাষ্ট্ররূপে বিবেচিত হতে পারে না।
শাসকেরা ক্ষমতায় আসার জন্যে এসব পূরণের অঙ্গীকার জনগণের কাছে রাখেন। কিন্তু ক্ষমতা হাতে এসে যাওয়ার পর বেশিরভাগ শাসকই ভূলে যান অঙ্গীকার পূরণের কথা। যারা গণসমর্থন নিয়ে আসেন কথা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আর যারা অস্ত্রেরমুখে আসেন তাদের এসব না করলেও চলে।
গাদ্দাফি অস্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। ফলে জনগণের দাবি-মতের তোয়াক্কা না করলেও তার চলে। তিনি তাই করেছেন, ৪১ বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন মসনদ।
আমাদের দুর্ভাগ্য, বিশ্বনেতৃত্বও ক্ষমতা দখলকারীদের স্বীকৃতি দিয়ে বসেন অহরহ।
গাদ্দাফির ঘনিষ্ট বন্ধু হুগো শাভেজ। একজন সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় আস্থাশীল রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শাভেজের বন্ধু তো দূরে থাক, গাদ্দাফিকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও মেনে নেওয়ার কথা নয় তার, যেমনটি কথা নয় গণতন্ত্রের বুলি কপচানো যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সভ্যরাষ্ট্রের দাবিদার পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্রের। তারপরও নানা বিধিনিষেধ আরোপের মধ্যদিয়েও গাদ্দাফি লিবিয়ার নেতা হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন।
অন্যদেশের সার্বভৌমত্ত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো অপর রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ কথা মানি।
কিন্তু সেই সার্বভৌমত্ত্বের আড়ালে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানুষের অধিকার যে প্রতিনিয়ত হরণ করা হয় তার প্রতিকার কি? সে রাষ্ট্র রাষ্ট্রই নয়। তার টিকে থাকার প্রয়োজন নেই। মানুষের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মানুষ নয়। মানুষ যদি রাষ্ট্র কাঠামো না চায়, রাষ্ট্র থাকবে না।
কিন্তু গাদ্দাফি নিজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের হর্তাকর্তা বনে গেছেন, জনগণের প্রয়োজনে তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি।
এ কারণেই মানুষের দাবির প্রতি আঙুল উঁচিয়ে বলতে পারেন, তিনি মরবেন, তবু ক্ষমতা ছাড়বেন না। ক্ষমতাকে যে তিনি ভালোবাসেন।
বেন আলির পতন থেকেও শিক্ষাগ্রহণ করেননি গাদ্দাফি। মুবারকের মসনদহারা হওয়ার ঘটনাও তাকে পথ দেখায়নি। একগুঁয়ে গাদ্দাফি আঁকড়ে আছেন রাষ্ট্রের নেতৃত্ব।
অথচ তার সময় শেষ হয়ে এসেছে, সবারই সময় এক সময় শেষ হয়ে যায়, এই সহজ কথাটি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না গাদ্দাফি।
নিজে সম্মান পেতে হলে অপরকেও সম্মান জানাতে হয়। জনগণ শাসকের দাস নয়, শাসকই জনগণের সেবক। এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু শাসকেরা সবসময়ই জনগণকে দাসানুদাস ভাবে আর তাই দাসদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষা করে যান নিশ্চিন্তে।
কিন্তু দাসরাই চিরকাল নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। গাদ্দাফি আর কিছুদিন মাত্র, সময় এসেছে, আপনাকে ‘গুডবাই’ বলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।