কবিতা ১.
কিছুক্ষণ আগে ঘটে গেলো অনেক কিছু
রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম একা, আশপাশে ছিলো সবাই।
কে একজন পেছন থেকে এসে
আমার আগে চলে গেলো
মুখ ফিরিয়ে হাসি দিলো
বাংলায় এই হাসির মানে দাঁড়ায়-“মারা খা”
আর ইংলিশে- sorry dear.
কাঁধে একজন হাতরেখে বললো-
‘ভাই, একপাশ দিয়ে হাটেন
মাঝখান আর অন্যপাশটা খালি রাখেন’
মমতা ছুঁড়ে দিয়ে গেলো লোকটি।
এই ছুঁটেচলা, সমাপ্তিহীন ছুঁটে চলায়
বার বার পিছিয়ে পড়ার অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।
একবন্ধু
(মানে আসলেই সে বন্ধু, কোন কাগুজে কিংম্বা তেজপাতার সম্পর্কের মতো না)
আমাকে ডেকে বললো-
‘এই তুই কি খুঁজছিস এখানে
আমরা তো সবাই জেনে গেছি
যা খুঁজছি তা আসলে নেই
ছিলো কোনকালে, অনেক অনেক গভীর অতিতে।
যেদিন থেকে মানব ইতিহাসে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারনা এসেছে
সেদিন থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না,
মনোজগতে তুই তার একটা ইমেজ কল্পনা করে
ভালো থাকতে পারিস’
বোকার মতো আমি বলে বসলাম-
না সে আছে, ধারনায় না,
একেবারে বর্তমানে ।
বন্ধুটি আমার হেসে উত্তর দিলো-
‘তুই অসুখী কারন তুই অসুখী ।
এই যে একটু আগে তোর ভেতরে যে
দহন ও বিস্ফরন ঘটে গেলো
দহনের উত্তাপ আর বিস্ফরনের শব্দ ও গন্ধ তুই বুঝেছিস
অন্য কেউ নয়’ ।
আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো,
প্রতিনিয়ত যে দহন ও বিস্ফরণ আমার ভেতরে ঘটে
তা আমার জন-স্বজন-দূর্জন কেউই বুঝেনা ।
....................................................................................................
কবিতা ২.
১.দহন
“প্রতিনিয়ত যে দহন ও বিস্ফরণ আমার ভেতরে ঘটে
তা আমার জন-স্বজন-দূর্জন কেউই বুঝেনা”
একই ঘটনায় ভালোলাগা মম্দলাগা সমানভাবে প্রকাশিত হচ্ছে কিনা
তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে কবির পরিচিতি পেলাম।
‘কবি’ অদ্ভুত মিশ্র স্বত্তা (আপনি আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন)
কাব্য অনুভূতি যোগ প্রেমিক স্বত্তা,
প্রতিনিয়ত প্রেমিক স্বত্তা কাব্যকে অতিক্রম করে বা দূরে ঠেলে এগোতে থাকে
বিপত্তি এখানেই!
যখন ‘প্রেমিক’ একা থাকে তখন তার
দুঃখবোধ সুখবোধ ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপে দেখা দেয়
দুঃখ ধরা দেয়- অতিদুঃখ আকারে
সুখ ধরা দেয়- অতিসুখ আকারে
Extremist, ধ্বংসাত্তক প্রেমিক স্বত্তা,
প্রেমিক যখন ছাড়িয়ে যেতে পারেনা কাব্যকে
তখন আমি-তুমি-সকলেই
হয়ে উঠি কবি
ঋষি সাধু হয়ে উঠি
আমাদের দহন ও পুলক
সমানতালে চলে রেলের রাস্তার মতোন।
২.বিভ্রান্তি
জারবেরা, তুমি শিশির ভেজা সজীব অথবা শুকনো গন্ধহীন,
তবুও তুমি জারবেরা তবুও তুমি ফুল...
আমার দুটো ডানা ছিলো
একদিন তা খসে গেলে
মাটিকে চিনেছিলাম
এখন কদাচিৎ মাটি থেকে দূরে থাকি
সেদিন যে কি হলো, মধ্যাকর্ষনকে হেয় করে
ঝুলে ছিলাম ছাদের গ্রিল ধরে।
এই যে তুমি বলো বৃষ্টি,ঝর্না
সব জল দিনশেষে কোথায় যায়!
সাগরে তলায়।
ভেবে দেখো বৃষ্টি, টিনেরচাল
রিমঝিম শব্দ, ঝিমমারা রাত
বৃষ্টিজল আবার জলের সাথে অন্যজল
এসব কি!
কিছুই না, শুধুমাত্র ‘মূহুর্ত’।
মূহুর্তগুলোর শরীর পেচিয়ে থাকে প্রেমে কামে
যেজল তলালো সাগরে, তাহলে সে কি?
কিছুই না, শুধুমাত্র ‘ঘটনা’
তাতে প্রেম থাকে না।
কিছুলোক অহরহ জন্মদেয় ঘটনার
তাতে আর যা থাক প্রেম থাকে না
কিছুলোক বৃষ্টি ঝর্নার মতোন
প্রতিনিয়ত জন্মদেয় মূহুর্ত
মূহুর্তগুলোর শরীর পেচিয়ে থাকে প্রেমে কামে।
৩.উপশম
Alejandro Jodorowsky তার The Holy Mountain-এ দেখালো
অবিকল যিশুর মতো দেখতে একটি চোর
কিভাবে পুরোটা পৃথিবীর অসুস্থতা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ঘাড়ের পিঠে জাপটে থাকা বহুপুরাতন টিউমারটি কেটে বের করা হলো- নীল রক্তেমাখা বাচ্চা অক্টোপাস
তাতেই পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠলো (!)
চোরটিকে দেখালো যিশুর মতো (!)
...........................................................................................................
কবিতা ৩.
একখানা অনবদ্য প্রেমের কবিতা লেখার জন্য অনেকদিন ধরে মন ছটফট করছে
এতো ডামাডোল, এতো ঝামেলা, এতো মনকষাকষির মাঝে ঢাকা শহরে
এই আমারই মতো নব্য প্রেমিক
কিভাবে যে কবিতাখানি প্রসব করিবে তা বুঝিয়া উঠিতে পারিছেনা ।
দিনে রাতে নানান জাতের কসরতে লিপ্ত।
মনে মনে স্থির করিলাম সাধু চলিতের গাজাখোরি সংমিশ্রনে এমন একটি কাব্য নির্মাণ করিবো
যা এই বইমেলার মৌসুমে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গনে একেবারে বোমার মতো বিস্ফরন ঘটাইবে।
বলুনতো মশাই, কিভাবে শুরু করা যায়?
আল্লার নামে?না বসন্তকে উপলক্ষ্য করে?
নাকি মাতৃপ্রেম, ভাতৃপ্রেম, ভগ্নিপ্রেম,প্রকৃতিপ্রেম-
সমস্তপ্রেম জোড়াতালি দিয়ে(অন্য কথায় নিজ হাতে বলি দিয়ে)
বিশ্বকাপের আহ্লাদে বিমূর্ত দেশপ্রেম বানাইয়া শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নিক্ষেপ করে?
সেদিন,
টিভিতে একটি বিঙ্গাপন দেখলাম-
“ওরা লড়েছিলো ভাষার জন্য
ওরা লড়েছিলো দেশের জন্য
এরা লড়ছে গৌরবের জন্য”
এটা দেখেছিলাম ঘরে বসে,
ঘরের বাইরে পা দিতেই দেখি চা-য়ের কোন দোকান নেই
ফুটপাত খালি, ভীখিরীরা সবযেনো এখন গুলশান-বনানীর ফ্লাটবাড়িতে থাকে।
ভাবখানা যেমন, বসন্ত-বইমেলা-বিশ্বকাপের মৌসুমে
ফকিন্নির পুতেদের ঠাঁই নেই এই ঢাকাতে।
১৮ ফেব্রুয়ারি,সন্ধ্যা,
৩৬ নং বাসে চড়ে নিলক্ষেত থেকে ফিরছিলাম
পকেটে রাখা মোবাইল ফোনের কল্যানে জানতে পারলাম
আমার প্রিয়জন জীবনের ভার বইতে না পেয়ে হার্টফাউন্ডেশনের স্বরনাপন্ন
আগামীকাল ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ,হাসপাতালের রাস্তা ব্লক
গিজগিজ করছে মানুষ,বাহারি আলোর সাজ রাস্তার দু’পাশে
ভীড় ঠেলে একা আমি দৌড়তে থাকি
আমার দু’পাশে নকল ভুভুজেলার কর্কশ সুর
বেহায়া মেয়েছেলেরা দাঁতকেলিয়ে দুলকিচালে হাঁটছে
ভীড় ঠেলা কঠিন।
আমার মনে তখন অনাকাঙ্খিত একটি মৃত্যুর আশঙ্কা
তখন ভেবেছিলাম এইবুঝি-একটি প্রেমের কবিতা আসলো
এতোকিছুর পরও আসলোনা-মৃত্যু আশঙ্কা গেলো কেটে।
অন্যদিন,
ফুটপাথ ধরে হাটছিলাম,হঠাৎ হাওয়া; ‘আহা আজিএ বসন্তে’
ভেবেছি এইবুঝি এসে পড়লো বলে প্রেমের কবিতাটি। আসলোনা।
তারপর ঘরে ফেরা,
দূরদেশ হতে কোন কিশরীর হাতছানি
আমার ২৮ বছরের জীবনকে একটানে নামিয়ে আনলাম ১৪-১৫তে
হাতে তুলে দিলাম একটি বই-নাম তার,
‘কোন এককালে কিশোরের বুকে বিধেঁছিল একটি জারবেরা’
এরপর গড়ালো সময়-ঘন্টার পর ঘন্টা। নির্ঘুম ঘন্টা। আসলো বুঝি প্রেম!
তবু প্রেমের কবিতা আসেনা।
শব্দ হলো কথা
কথা হলো কথামালা;
‘আবার যদি বলি-পথ হারাবি?
ধূসর না রে,রঙ্গিন,ফুল বেছানো পথ
একা না গো,আমি থাকবো-
চুপ করে
শান্ত কোন
কিশোর হয়ে। ।
...........................................................................................................
কবিতা ৪. ("শব্দমালা, তোমার জন্যে")
১.মোহ/ভালোবাসা
বাগানের সবগুলো ফুল
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে তোলে
দীর্ঘ সময় পাশে দাঁড়ানোর সময় হয় না
ফুলগুলো অল্প সময় সঙ্গ পায়
অভিমানে বললে-
“ফুলের মতো আমার প্রতি
শুধুই তোমার মোহ
এ ভালোবাসা নয়”
ভালোবেসে ফুলের গালে হাত রাখলে
ফুলের হয়তো অনুভূতির পরিবর্তন হয়
কিন্তু সে আমি বুঝতে পারিনা
ভালোবেসে তোমার দিকে তাকালেই
তুমি রক্তিম হয়ে উঠো
সে আমি ভালোই বুঝতে পারি
এ মোহ নয়, ভালোবাসা ।
ভালোবাসি বলেই-
তোমার বুকে জন্ম নেয়া উষ্ণতা
আমি টের পাই আমার বুকে ।
২.গাড়ী
কাগজের বাক্শের একপ্রান্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে
একটি শিশু টেনে নিয়ে যাচ্ছে রাজপথ ধরে
আমিব বললাম-কিরে বাবু, গাড়ী বানিয়েছিস নাকি?
মাথা নেড়ে অর্ধউলঙ্গ শিশুটি উত্তর দিলো- হ্যাঁ ।
বললাম-বাহ্! তোর গাড়ীটিও চলে
আমার গাড়ী চলে না ।
৩.শব্দমালা
হাজার হাজার শব্দমালা
ভীড় করছে মাথার ভিতর
প্রকাশের অপেক্ষায় ।
এখনই যদি ওর জন্ম না দেই
অভিমানে আত্মহনন ঘটতে পারে
এখনই যদি চুম্বনে চুম্বনে ক্লান্ত না হই
তবে আগামীকাল ভালোবাসবার শক্তি কোথা পাই বলো!
৪.অসুখের সুখ
তোর ঘুম কাতর চোখ
আমার সব অসুখের ওষুধ হোক ।
৫.কাঙ্খিত ফুল
তোমার জন্য জারবেরা পেলাম না
কিনে ফেললাম এক মঠি ক্যালেনডোলা
হয়তো অন্যদিন খুঁজে পাবো কাঙ্খিত ফুল ।
৬.যুরিতা
ফুল বললো ছোট পাখিকে
“মধু নিবে নাও, কামড় দিও নাগো পাখি”
দুষ্টু পাখি উত্তরে বলে-
মাঝে মাঝে আলতো করে দিবো,
রক্ত ঝরবে না
ঝরবে মায়া
তারপর দু’জনে জিভ দিয়ে চেটে নিবো সবটুকু মায়া
এরওপরে জন্ম নিবে আমাদের আদরের সন্তান-যুরিতা !
……………………………………………………….......................
কবিতা ৫.
পুরুষ: হাই!
নারী: হে ডিয়ার!গোয়িং টু কল ইউ জাস্ট নাও,
দেখছো- তোমার প্রতি আমার কত টান
পুরুষ: হা-হা-হা, তাইতো দেখছি
নারী: হুম, তারপর?
পুরুষ: আপনার জ্বর কেমন?
নারী: কমেছে একটু
পুরুষ: তারপর, গল্প বলেন,
আমি গল্প খুব ভালোবাসি
নারী: কি গল্প?রুপকথা?
পুরুষ: না, রুপকথা না
অনেক অনেক সুন্দর গল্প ।
নারী: মেঘের গল্প?
পুরুষ: মেঘ! ওহ গড…
আমি ভালোবাসি মেঘ
আমি মেঘ ভালোবাসি
নারী: আমিও ভালোবাসি,
তাই আমার মেয়ের নাম হবে মেঘ
অনেক ছোট
পুতুলের মতো
কিন্তু সে পুতুল না
পুরুষ: খুব সুন্দর নাম
আপনার মেয়েকে সাথে করে
একদিন আমি মেঘ দেখবো
নারী: ঠিক আছে
পুরুষ: মেঘের সাথে মেঘ দেখবো
নারী: আমার মতো ওকেও কিন্তু অনেক অনেক চকলেট দিতে হবে
পুরুষ: দিবো
নারী: মেঘকে নূপুর পড়াবো
আর রুপোর চুড়ি
আর নীল ফ্রক
পুরুষ: লাল জুতো পায়ে থাকবে
নারী: না, খালি পা ।
লাল জুতো পায়ে থাকলে
মাটি চিনবে কিভাবে?
পুরুষ: হুম খালি পা ।
মেঘ শুধু হাসবে
নারী: মাঝে মাঝে পিঠে দু’টো ডানা বেধে দিবো
উড়তে না পারলেও পাখিকে ভালোবাসবে সে
পুরুষ: মেঘ আমাদের কোলে উঠবে না,
শুধু পাশে পাশে হাঁটবে
নারী: তোমার সাথে নাও হাঁটতে পারে, ভয় পাবে ।
তবে আমার সাথে হাঁটবে
পুরুষ: তাহলে আপনি ও পাশে থাকবেন
নারী: না, আমি আপনার পাশে থাকবো না
পুরুষ: আপনি থাকবেন না কেনো?
ভয় পাবে কেনো সে?
নারী: মেঘ আর আমি থাকবো শুধু
পুরুষ: কোন ভাবেই কি মেঘের ভাগ আমাকে
দেয়া যায় না !
নারী: না- কোন ভাবেই না,
মেঘ আমার ।
পুরুষ: না কেনো!
নারী: ভয় হয়,
মেঘকে দিলে, তুমি আমাকেও চাইবে ।
……………………………
কবিতা ৬.
খেলবো না
হয় না, হবে না
কিছুলোক পড়ে থাক দর্শক হয়ে
হাততালি দিক, বাদাম খাক ।
তোমার আবেগের ঘন ঘন দিক পরিবর্তন
আমার মতো একরৈখিক হয়তোবা সরল মানুষ
কিভাবে ছুঁয়ে নিবে, ছিনিয়ে নিবে গোপন রত্ন ?
অল্প দিনের কিন্তু ঘনিষ্ট এক বন্ধু
কি যেনো কোন প্রসঙ্গে বলেছিল-
মানুষের সাথে কোঅপ করাটা খুবই কষ্টের, কঠিন ।
প্রকৃতির আচরন কিন্তু ঠিক উল্টোটা
সে শুধু গ্রহন করতেই জানে,
গ্রহন করতে চায় ।
তুমি যতো কাঙ্গালই হওনা কেনো
সে তোমাকে আসতে দিবে
টেনে নিবে ।
আহা,কি দারুন
প্রকৃতি কেনো তুমি প্রেমিকা হয়ে আসলে না !
তবুও তোমার মুখে ক্ষনকালের হাসি
আমাকে ‘কবিতা’ শেখায়, ‘প্রকৃতি’ শেখায় ।
কাঙ্গালের কাছে এটাই বা কম কি !!
……………………………………………………………………
কবিতা ৬+ ১
সে কিশোরী
ভীষন ভালো
আমি তার মাথায় ফুলের টোপর পড়িয়েছিলাম
গভীর বনের ভেতর
সে ছিল আর আমি ছিলাম
আর কেউ ছিলনা তখন
একটা কাঠবিড়ালি উকি দিয়েছিল
সে খুব লজ্জা পেয়েছল তখন
আমি বজ্জাত কাঠবিড়ালির কান মলে দেই
সে হাসে, হাসতেই থাকে
দু’হাতে তার চিবুক তুলে ধরি আমি
অমনি কোথ্থেকে এক বাদর লাফিয়ে পড়ে গাছ থেকে
ভয় পায় সে
আমি তখন নিমিষেই
আমার বুকের সাহস পাচার করে দেই তার বুকে
আহ্লাদে তার মুখের রং বদলায়
আমাদের সামনে মাটির পাত্রে জল ছিল
জলে দু’জনে
মুখ দেখেছি
আমি আমাকে দেখিনি
আমি শুধু তাকেই দেখেছিলাম
সে অন্যরকম,
আমার ভালোলাগাটাও ছিল ‘অন্যরকম’
পাত্রের জলে সে কাকে দেখেছিল জানা হয়নি ।
তার বাহুতে জড়িয়েছি বটের শিকড়,
অনেক ফুল পড়েছিল মাটিতে
তাতে তার মন ভরলো না
সে বললো-‘ অন্য ফুল দাও-
যে ফুল আর কেউ কাউকে কখনো দেয়নি’
আমিতো ভেবে আকুল ।
মৌমাছি আসলো একটা, পুরুষ মৌমাছি
কানে কানে বললো- ‘চিন্তা করোনা হে..
আমি তোমায় নতুন ফুল দিবো’
ঐ ফুলেই হবে তার নৈবদ্য
ঐ ফুলেই হবে তার পূজা
মৌমাছি প্রথমে গোলাপের কাছে গেলো
মধু নিলো
তারপর গেলো রক্তজবার কাছে
মধু নিলো
এরপর গেলো হাসনুহেনার কাছে
গন্ধ নিলো
তারও পরে গেলো জারুলের কাছে
রং নিলো
আরও গেলো পলাশের কাছে
পাপড়ি নিলো
ভোরে উঠে দেখি সে ফুল পড়ে আছে আমার পাশে
ফুলের নাম- স্বপ্নলতা
স্বপ্নলতা গুজে দিলাম কিশোরীর চুলে
সেই থেকে বিমোহিত কিশোরী আমার হাত ধরে আছে
একমূহুর্তও ছাড়েনি ।
……………………………………………………………………
কবিতা৬+ ১+ ১
"একজন শহুরে সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের ‘মে দিবসের কবিতা’"
একসময় প্রণয়ের অর্থ বুঝিনি
তখন স্লোগান দিয়েছি-
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’
নারী বুঝিনি তখনও
গলা ফাটিয়েছি-
‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’
স্পর্শ করিনি কারো কোমল অঙ্গ
এমনকি হাতও ধরিনি,
আক্ষেপে চিৎকার করেছি-
‘ডাউন ডাউন ক্র্যাশ ক্র্যাশ, ইউ. এস. ইম্পিয়ারিয়ালিজম’
একলাফে লাল ফৌজ পার হয়ে
প্রতিদিন প্রেমিক হতাম
লাল ঝান্ডা হাতে তুলে
মিছিলের পর মিছিল পার হয়েছি
রোদ্দুর আর গরম পিচঢালা রাস্তার সাথেই চলতো
বাধঁনহারা সঙ্গম ।
মুখে ফেনা তুলে বলেছি-
নির্বাচনের খেলা খেলে, লাভ হয় নাই কোন কালে’
এখন প্রণয়-প্রণয়ী, শ্রম-শ্রমিক বুঝি
এমনকি উদ্বৃত্ত মূল্য অথবা
শ্রমিকের বুকে উদ্বৃত্ত মূল্যের জ্বালাও জানি
এখন আর স্লোগান দিতে ইচ্ছে হয় না
ভাবছি- যেকোন দিন এক দৌড়ে
কোন ব্যাংকের ‘ক্যাশ অফিসার’ হয়ে যাবো ।
……………………………………………………………………
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।