নারীদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আহমদ শফীর বক্তব্য অবমাননাকর ও অশালীন। ইউএনবি জানায়, আজ শনিবার গণভবনে ৮৮টি নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ধর্মীয় নেতা সম্প্রতি নারীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন। আমি বিস্মিত হয়ে যাই, ধর্ম যেখানে নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে, সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা হয়ে তিনি কী করে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন। ’
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী এক বক্তব্যে নারীদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
ওই বক্তব্যে তিনি নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশ হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন ধর্মীয় নেতার এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা অবশ্যই নারীদের জন্য অবমাননাকর। ’ তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে বলতে চাই, তিনি কী কোনো মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেননি? তিনি কি সেই মাকে সম্মান করেন না? তাঁর কি স্ত্রী বা কোনো বোন নেই?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজত বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছে। কিন্তু বিএনপির প্রধান তো একজন নারী।
তাহলে তিনি (আল্লামা শফী) কীভাবে তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন?’
নারীদের বিরুদ্ধে যাতে আর কেউ কোনো দিন অশালীন মন্তব্য করতে না পারে, সে জন্য নারী নেত্রীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস থেকে বিরত থাকুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে বাসে অগ্নিসংযোগ, চালক বা সহকারীদের হত্যা অথবা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিআরটিসির বহরে আরও ৮৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের সংযুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৪২টি বিআরটিসি বাস ধ্বংস এবং পোড়ানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন ও কোরিয়া থেকে নতুন আমদানি করা ৪৫টি দ্বিতল এবং ৫২টি বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস।
‘এটা দেশের ক্ষতি, এটা দেশের মানুষের ক্ষতি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটি আমাদের, আসুন আমরা আমাদের সম্পদ রক্ষা করি। জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতীয় ‘ডলার ক্রেডিট লাইনের’ (আইডিসিএল) আওতায় আমদানি করা এসব বিলাসবহুল বাস জনগণের নিরাপদ ভ্রমণ সুগম করতে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তজেলা রুটে চালু হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এই বাসগুলো বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে দেশের জনগণের জন্য “রমজানের উপহার”। ’
অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন সিদ্দিকী এবং ঢাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে বিআরটিসিকে একটি গতিশীল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহন সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলেছিল। সুইডেন থেকে ৫০টি আধুনিক ভলভো বাসসহ অনেকগুলো আধুনিক বাস ক্রয় করেছিল এই সংস্থার জন্য। তিনি বলেন, ‘সরকার বিআরটিসিকে একটি কার্যকর মধ্যমানের সরকারি সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল। ’ তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তী সময় বিএনপি সরকার বিআরটিসিকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করে।
ফলে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আমরা বিআরটিসি বহরে একটি ভলভো বাসও দেখতে পাইনি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী পাট খাত, খুলনা শিপইয়ার্ড ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ন্যায় বিএনপি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবহন ব্যবস্থাটিও সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর পুনরায় বিআরটিসির জন্য ৯৯৮টি বাস ক্রয় করেছে। সংস্থাটির বর্তমানে মাত্র ১৬২টি ট্রাক রয়েছে। ফলে সরকার সংস্থার জন্য আইডিসিএলের আওতায় ৫০০টি নতুন ট্রাক কেনার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কম্যুটার রেল, ঢাকা মহানগরের চারদিকে রিংরোড ও জলপথ নির্মাণের মতো বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এসব প্রকল্প ছাড়াও সরকার মিরপুর-বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ও বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস ও হাতিরঝিল প্রকল্প যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়াও ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কুড়িল ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের জন্য দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অঙ্গীকারের চেয়েও কাজ বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু, শিলং ও গুয়াহাটি এবং মিয়ানমার পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।