সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ মারা যাবার পরে তার সন্তানেরা তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করার জন্য কি প্রচেষ্টাটাই না চালিয়েছিলেন। আমি ঠিক জানিনা ড. আজাদ মৃত্যুর আগে তাঁর স্বজনদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শায়িত হবার আকাংখা প্রকাশ করেছিলেন কিনা। তবে তাঁর লেখা পড়ে যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয়না ওনি ইসলামিক ধ্যান ধারণার অনুগামী ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন আকাংখা তাঁর জাগার কথা নয়। অথচ এমন একজন মানুষকে মৃত্যুর পর তাঁর বিশ্বাসের বিপরীতে এমনভাবে সমাহিত করার প্রচেষ্টা নিয়ে তাঁকে কি তাঁর সন্তানেরা অপমান করলেন না?
প্রফেসর কবির চৌধুরী আজ সকালে মারা গেছেন।
একজন শিক্ষাবিদ এবং প্রগতিশীল ধ্যান ধারণার মানুষ হিসেবে আমি ওনাকে সন্মান করি। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বদাই সোচ্চার। ঠিক সে কারণেই সম্ভবত মৌলবাদীরা জীবদ্দশায় ওনাকে অনেকবারই নাস্তিক বলে অভিহিত করেছেন। আমার জানামতে ওনি কখনই এর প্রতিবাদ বা অস্বীকার করেননি। কারো বিশ্বাস একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত।
আমি মনে করি মৃত্যুর পরেও তিনি এই বিশ্বাসকে সংরক্ষণ করার অধিকার রাখেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি যদি তাঁর স্বজনদের ইসলামিক রীতি অনুযায়ী সমাহিত করার কথা বলে গিয়ে থাকেন তবে সেটা এক বিষয়। কিন্তু এটা যদি তাঁর বিশ্বাসের বিরুদ্ধ হয় তবে তথাকথিত ইসলামিক নিয়মে সমাহিত করে তাঁকে অপমান করার কোন অধিকার তাঁর নিকটজনদের নেই। তেমনি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করার অধিকারও কারো নেই। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করাটাই হতে পারে এই মুহুর্তে তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সন্মান দেখানো।
সত্যিকার অর্থে যখন নাস্তিকতা বা প্রগতি নিয়ে কথা ওঠে তখন একটা মানুষের মুখই বারবার মনে পড়ে। তিনি ড. আহমদ শরীফ। মননে, চিন্তায়, ভাবনায়, জীবনে ও মরণে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক প্রগতিশীল এবং নাস্তিক। তাঁর বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা করার কোন সুযোগ তিনি কাউকে দেননি। সেই ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি গণমানুষের মতের পক্ষালম্বন করেছেন।
কখনই নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের চাটুকার হননি। দেশের যেকোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা যেকোন কমিশনের চেয়ারম্যান হবার সর্বময় যোগ্যতা তাঁর ছিল। কিন্তু শাসকদের চাটুকারিতা না করা বা অতিমাত্রায় স্পষ্টবাদী হওয়ার কারণে তিনি তা হতে পারেননি। সর্বোপরি মরণের পরেও তিনি তাঁর বিশ্বাস ও সততাকে সংরক্ষণ করেছেন। একজন নাস্তিক হিসেবেই শেষ বিদায় নিয়েছেন।
এমন একজন আপাদমস্তক খাঁটি প্রগতিশীল নাস্তিকের আজ বড়ই অভাব। বেশিরভাগই লোক দেখানো। বেশিরভাগই স্বার্থপর, বিলাসী, দলবাজ এবং ক্ষমতার প্রত্যাশী। এই আকালে ড. আহমদ শরীফের মতো একজন নিরেট সত্যবাদী ও স্পষ্টবাদী নাস্তিকের অভাবটা প্রতি ক্ষণেই অনুভুত হয়।
ড. আহমদ শরীফ আপনাকে অভিবাদন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।