পদ্মা সেতু নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির কথা সরকারকে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রমাণাদিও রয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর প্রাক্কালেই দেশের বৃহত্ এই অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। আর দুর্নীতি হয়েছে জানিয়ে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি ডলার অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়। এ নিয়ে সরব আলোচনা এখন সর্বত্র।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে একটি চিঠি দেয়। বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা লিওনার্দ এফ ম্যাকার্থি লিখিত এই চিঠির সঙ্গে নিজেদের তদন্ত সারসংক্ষেপও পাঠিয়েছে। এতে জানান হয়, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্ট্রেগ্রেটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি) বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে নির্মিতব্য পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছে। এই তদন্ত মূল সেতু নির্মাণের চুক্তি নিয়ে করা হয়েছে। তবে নির্মাণ, তদারকি ও পরামর্শক (সিএসসি) চুক্তির বিষয়ে এই তদন্ত রিপোর্টে কিছু বলা হয়নি, যা কানাডীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল অগ্রিম ক্রয় কার্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ প্রাকযোগ্যতা যাচাইয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর দুর্নীতি ও প্রাকযোগ্যতার শর্ত পরিবর্তনের কারণে এই প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। তার পরদিন সেতু কর্তৃপক্ষ পুনরায় প্রাকযোগ্যতা তালিকার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংক ২০১১ সালের জুলাইয়ের শুরুতে প্রধান সেতু চুক্তির প্রাকযোগ্যতা তালিকায় অনাপত্তি প্রদান করে। তারপর আইএনটি যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও তার কোম্পানি সাকোর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদের ব্যাপারে বিপুল পরিমাণ অভিযোগ পায়।
এসব অভিযোগে বলা হয়, সাকো পরোক্ষ কমিশন এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আইএনটি তদন্ত হাতে নেয় এবং পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৪টি দেশের সম্পৃক্ত এক ডজনেরও বেশি লোকের সঙ্গে কথা বলে। আইএনটির হাতে গ্রহণযোগ্য এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ আসে যা যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও তার কোম্পানি সাকোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সাপোর্ট করে। তথ্যের উত্স গোপন রাখার শর্তে আইএনটিকে তথ্য প্রদান করা হয়েছে। যাতে দেখা যায়, আবুল হোসেনের কোম্পানি ‘সাকো’কে ‘সাইলেন্ট এজেন্ট’ হিসাবে নিয়োগ ও মোটা অংকের ‘ফি’ দেয়ার শর্তে কাজ পাইয়ে দেবার কথা বলা হয়।
অন্যথা হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।
আইএনটিকে একটি কোম্পানির কর্মকর্তা জানায় যে, তার কাছে সাকোর পরিচয়ে এক ব্যক্তি দেখা করতে আসে এবং তাকে বলে যে, সে যোগাযোগমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে এসেছে। সাকোর ঐ প্রতিনিধি তাকে বলেছে, পদ্মা সেতুর মোট চুক্তি মূল্যের একটি অংশ কমিশন হিসাবে দিলে পদ্মার মূল সেতু নির্মাণের প্রাকযোগ্যতা বাছাইয়ে ঐ কোম্পানিকে মন্ত্রী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।
এদিকে আইএনটি আরো বলেছে, মন্ত্রী হওয়ার পর যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন তার কোম্পানি ‘সৈয়দ আবুল হোসেন এন্ড কোম্পানি (সাকো)’ থেকে পদত্যাগ করলেও ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, তার স্ত্রী ও দুই কন্যা ঠিকই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে বলেও আইএনটি রিপোর্টে বলা হয়। আইএনটি আরো অবহিত হয় যে, যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন দরপত্রে অংশ নেয়া অন্য কোম্পানির কাছেও ‘সাকো’কে পরোক্ষভাবে এজেন্ট হিসাবে নেয়ার প্রস্তাব দেয়।
ঐ কোম্পানিটি মন্ত্রীর প্রস্তাব নাকচ করে দিলে তাদেরকেও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। আইএনটির কাছে সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিয়ে ভয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়নি। তার মতে, যোগাযোগমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষমতাশালী লোক। তার চাকরি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় রয়েছে। আইএনটির কাছে অন্য সবাই প্রায় সমান কথাই বলেছে।
তবে তাদের ব্যক্তি নিরাপত্তা ও আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।
আইএনটির রিপোর্টের তথ্য অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে রেফারেন্স হিসাবে এই তদন্ত রিপোর্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেয় বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, সরকার যদি এ নিয়ে নিবিড় তদন্ত করতে চায় তবে বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএনটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আইএনটির তদন্ত রিপোর্টের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেছেন, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরোপুরি সন্তুষ্ট হন, ততক্ষণ পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ সহায়তা নিয়ে কোন প্রক্রিয়া শুরু করবেন না।
পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ২৯০ কোটি ডলারের মধ্যে যেখানে ১২০ কোটি ডলারই বিশ্বব্যাংক দিতে সম্মত হয়েছে, কিন্তুু দুর্নীতির অভিযোগ আমলে এনে বিশ্বব্যাংক এই অর্থায়ন স্থগিত করে
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।