এখনো বেঁচে আছি !!! ......... চমৎকার শরিয়া আইন সৌদিতে! একই অপরাধে ধনী ও শক্তিমত্ত দেশের নাগরিকদের বিচার হয় ভিন্ন ’শরীয়ায়’। আর নিজেদের রাজ পরিবারের কেউ হলেতো কোন কথাই নেই। সকল আইন ই অচল! এক শরিয়ায় দুই ব্যবস্থা! বিচিত্র সব আইন কানুন। সৌদির সিংহ ভাগ সাধারন জনগণ মনে প্রানে ইসলামি চেতনায় বিশ্বাসী। তবে সাশক শ্রেণী কতটা ক্ষমতা লোভী সেটি কিছু বিশ্লেষণে বের হয়ে আসে।
বাংলাদেশের ৮ জন অপরাধী বাঙালি তাদের অপরাধের শাস্তি পেয়েছে। তবে যেই বিচারের মাধ্যমে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হল সেই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে চলছে মূল সমালোচনা। সৌদিতে বিচার কাজ সম্পাদিত হয় ইসলামি শরিয়াহ আইনে। তবে সেই আইনের খড়গ প্রয়োগ চলে সেই দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ভিনদেশী নাগরিকদের উপর। যেমনটি বলেছিলাম শেখ পরিবারের জন্য আইন অনেকটা শিথিল।
যারা অবৈধ শাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত তারা শরিয়াহ আইনে চলে! ব্যাপার টা হাস্যকর
যেই ক্ষমতার মসনদে তারা বসে আছে সেই মসনদ বা তাদের রাজতন্ত্র সম্পর্কে শরিয়াহ আইন কি বলে? তারা কি বৈধ ভাবে ক্ষমতার মসনদে আছেন? তারা কি কেবল বিশেষ ক্ষেত্রে শরিয়াহ আইন মানছেন নাকি সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় তারা নিজেদেরকে পরিচালিত করছেন।
আসুন একটু চোখ বুলানো যাক।
* ইসলামে রাজতন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে কেন রাজতন্ত্র প্রথা চলছে সৌদি আরবে?
* সৌদি আরবে কেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র নেই? শরিয়াহ আইন অন্ধ কেন এইখানে?
* সৌদিকে যারা মুসলিম জাহানের তীর্থ স্থান মনে করেন সেই পূর্ণ ভূমিতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরম প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন রাজতন্ত্রের জন্য ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে শাহাদাৎ বরন করেছিলেন। তাহলে সেই পূর্ণ ভূমিতে আজও কেন রাজতন্ত্র চলছে?
* পবিত্র মাটিতে কেন তারা ইহুদী নাছারা মার্কিনদের ঘাটি করতে দিয়েছে?
* মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দেওয়া ‘আল হিজাজ’ নামটি বাদ দিয়ে সৌদ পরিবার কেন অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করলেন এবং কেন তাদের নাম অনুসারে সৌদি আরব নামটি রেখেছেন? শরিয়াহ এইখানে কি বলে?
* লাখ লাখ নিরীহ অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপর ইজরাইল যখন একের পর এক আক্রমণ করেছে সৌদি প্রশাসন টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি কেন?
* রাজতন্ত্র এবং পরিবার তন্ত্র ইসলামে হারাম।
তবে কোন শরিয়াহ আইনে সৌদিতে পরিবার তন্ত্রের শাসন ব্যবস্থা চলছে?
* সম্প্রতি সৌদি শরীয়া কাউন্সিল ফতোয়া দিয়েছেন, মিশরের হোসনী মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা ইসলামের দুষমন। আন্দোলন, বিক্ষোভ ইসলামে নাকি নিষিদ্ধ। বাহ রাজতন্ত্র! বাহ পরিবার তন্ত্র! হারাম হারাম এবং হারাম। সৌদি তার নিজের স্বার্থে কি করছে এই সব?
* ১৯৮৭ সালে হজ্ব মৌসুমে ৩০০ এর বেশী হাজীকে মিছিল করার অপরাধে গুলি করে হত্যা করে সৌদি পুলিশ। ক্বাবা শরীফে পবিত্র হজের সময় সব ধরনের হত্যা আল কোরআনে নিষিদ্ধ! ক্বাবা শরীফ কে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে।
আর সেই ক্বাবার সামনে ৩০০ জন হাজী কে হত্যা করা হল কোন শরিয়াহ আইনে?
এই দশটি প্রশ্নের উত্তর ধর্ম প্রেমীর চাইতে সৌদি প্রেমীরা কি দিতে পারবেন? না আমি বলে দিলাম পারবেন না। কাজেই সৌদি বর্তমান রাজতন্ত্র ও সরকার সম্পূর্ণই ইসলাম শরিয়াহ বিরোধী। ইসলামী শরিয়াহ আইন প্রযোজ্য হবে সেই দেশে যেই দেশের খালিফা হবেন জনগন মনোনীত । অর্থাৎ সম্পূর্ণ ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে জনগণ মনোনীত খালিফা শরিয়াহ বাস্তবায়ন করবেন। সৌদি আরব প্রকৃত ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র নয়।
এর বাদশা জনগণের মনোনীত খলিফা নয়। কাজেই কিসাস প্রয়োগ করার কোন এখতিয়ার সৌদি প্রসাশনের নেই!
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় সৌদির বর্তমান সরকার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ। আর অবৈধ সরকার কিভাবে শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করে?
শক্তের ভক্ত হিসাবে সৌদি সরকার একটি কালো দৃষ্টান্ত দেখান ২০০৩ সালে। উইলিয়াম স্যাম্পসন নামে একজন ব্রিটিশ কানাডিয়ান নাগরিককে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি সরকার সন্ত্রাসবাদ, গোয়েন্দাবৃত্তি ও খুনের দায়ে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে সৌদি সরকার ব্রিটিশ ও কানাডিয়ান সরকারের চাপের মুখে উইলিয়াম কে কোনরকম বিচার ছাড়াই তার আরো কয়েকজন সহযোগীসহ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সৌদি সরকার।
সেইদিন খুনের দায়ে তাদের শিরচ্ছেদ করার শরিয়াহ আইন কোথায় ছিল? শিরচ্ছেদ তো দূরে থাক, বিচার করার মত সাহস ও তাদের ছিলনা। হায়রে ভণ্ড সৌদি সরকারের শরিয়া আইন!
২০০২-এ গুপ্তচরবৃত্তি আর সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত বৃটিশ-কানাডিয়ান উইলিয়াম স্যাম্পসনকে তো চাপের মুখে লেজ গুটিয়ে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাদশাহ আব্দুল্লাহ ভাস্তে প্রিন্স সউদ ভূমধ্যসাগ্রীয় দ্বীপে স্পেনিস মডেল কন্যাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত হলে প্রিন্স সউদকে স্পেনীয় আদালতে তলব করা হলেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাজির পর্যন্ত হয় নি। এমন কি নিজ দেশেও বাদশাহর দরবারে তাকে দাঁড়াতে হয়নি।
হত্যার বদলে হত্যা ইসলাম সমর্থন করলেও প্রকাশ্যে এমন হত্যা এটি চরম হিংস্র আচরন।
১ জনকে ৮ জন একসঙ্গে হত্যা করতে পারেনা। এই ক্ষেত্রে কেউ অন্যায় টি বেশি করেছেন আবার কারো অন্যায় কম ছিল। কাজেই সকল কে একি দণ্ডে দণ্ডিত করা এটি কোন ভাবেই কেসাস সমর্থন করেনা। তাছাড়া যাদের শিরচ্ছেদ করা হল তাদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছিল কিনা এবং তাদের কাছে কারো কোন দেনা পাওনা আছে কিনা এটি মৃত্যু দণ্ড দেবার পূর্বে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হয়। এবং মৃত্যু দণ্ড দেবার মত রায় ঘোষণার পূর্বে চরম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ ছিল।
কিন্তু সৌদি প্রশাসন সেটি করেনি। একজন কে যে হত্যা করবে এবং বাকি এক বা একাধিক ব্যক্তি যদি হত্যা না করে অর্থাৎ সরাসরি হত্যা না করে হত্যাকারীকে সাহায্য করে এই দুইজনি একি অপরাধে অপরাধী নয়। কাজেই ৮ জনকে শিরচ্ছেদ করা এটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী সিদ্ধান্ত! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।