আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপারেশান সার্চ লাইট: একটি অনুসন্ধান।। রেজা ঘটক

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মির ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসাইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী পাকিস্তান চিফ অব আর্মি স্টাফের কাছে অপারেশান সার্চ লাইটের খসড়া উত্থাপন করেন। পাকিস্তানের কোয়েট্টা থেকে ১৬ ইনফেন্ট্রি ডিভিশান ও খাড়িয়ান থেকে ৯ ডিভিশানকে পূর্ব পাকিস্তানে মুভ করানো হল। পাকিস্তানের যে সকল সেনা অফিসার অপারেশান সার্চ লাইটের পরিকল্পনায় দ্বিমত পোষণ করেন তাদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ও জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহবাজ ইয়াকুব খান ও ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ এহসানকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গর্ভনর ও জিওসি করা হল।

১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে জেনারেল হামিদ টেলিফোনে জেনারেল রাজাকে অপারেশান অথরিটি প্রদান করেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশান পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করেন। লাইট ব্লু অফিসিয়াল প্যাডে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ১৬ প্যারায় ৫ পৃষ্ঠার পরিকল্পনা লিখলেন। রাও ফরমান আলী লিখিত পরিকল্পনার অবজেক্টটিভগুলো ছিল নিম্নরূপ- 1. Impose curfew at 0110 hrs and close telephone/telegraph/radio station and shut all presses down 2. Seal off the city by taking over road, rail and river communication and patrol river 3. Arrest Sheikh Mujib and 15 top Awami League leaders during operation 4. Conduct house to house search in Dhanmondi and Hindu areas 5. Subdue Dhaka University, EPR HQ and Rajarbagh police line, disarm 2nd and 10th EBR 6. Take over and protect Ammunition factory at Gazipur and Arms depot at Rajendrapur. রাও ফরমান আলী লিখিত পরিকল্পনার সামরিক দিক ছিল নিম্নরূপ- Pakistani plan of action for Dhaka, as drawn up by Maj. Gen. Farman, was: 1. 13th Frontier Force to stay in cantonment as reserve and provide security 2. 43rd Light Ack Ack regiment was to secure Tejgaon airport 3. 22nd Baluch regiment would disarm the EPR and seize wireless at Pilkhana EPR HQ 4. 32nd Punjab was to neutralize Rajarbag Police line 5. 18th Punjab was to fan out and secure Nawabpur and old Dhaka 6. 31st Field was to secure Second capital, Mohammadpur and Mirpur 7. A platoon from 3 SSG was to capture Sheikh Mujib 8. 22nd Baluch and 32nd Punjab was to neutralize Dhaka University “rebels” 9. 22 Baluch would be reinforced at Pilkhana পরিকল্পনা সফল করার জন্যে যে সকল পদপে নিতে হবে সেগুলো ছিল নিম্নরূপ- 1. Operation to be launched simultaneously all across East Pakistan. 2. Maximum number of political and student leaders, and those among cultural organizations and teaching staff to be arrested. 3. Operation must achieve 100% success in Dhaka. Dhaka University would be occupied and searched. 4. Free and greater use of fire authorised for securing cantonments. 5. All internal and international communications to be cut off, including telephone, television, radio and telegraph. 6. All East Pakistani (Bengali) troops to be neutralised by seizing weapons and ammunition. 7. To deceive the Awami League, President Yahia Khan to pretend to continue dialogue, even if Mr. Bhutto disagrees, and to agree to Awami League demands. জেনারেল রাও ফরমান আলী অপারেশানের দায়িত্বে থাকবেন এবং জেনারেল খাদিম সকল ব্রিগেডে স্পেশাল টাক্সের খবর পৌঁছে দেবেন। অপারেশান শুরুর আগে সকল বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদেরকে নিরস্ত্র করা হবে এবং ইমিডিয়েট হত্যা করা হবে।

আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় শেখ মুজিবকেও গ্রেফতার করা হবে। ২০ মার্চ ফ্লাগ স্টাফ হাউজে জেনারেল হামিদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান হাতে লেখা পরিকল্পনা আবার রিভিউ করেন। তখন জেনারেল হামিদ বাঙালি সৈন্যদের ইমিডিয়েট খুন করায় আপত্তি জানালেন। তবে নিরস্ত্র করার পক্ষে সায় দিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ওই নীল নকশায় একটি পরিবর্তন আনলেন।

মিটিংয়ের সময় শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রেফতার করতে হবে অপারেশান শুরুর ঠিক আগ-মুহূর্তে। ফাইনাল নকশা সকল ব্রিগেড ও পাক সেনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো। ঢাকায় ৫৭ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার জাহানজাব আরবাব, কুমিল্লায় ৫৩ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফি, রংপুরে ২৩ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ খান মালিক এবং যশোরে ১০৭ ইনফেন্ট্রি ডিভিশানের দায়িত্বে ব্রিগেডিয়ার এআর ডুরানিকে দেওয়া হলো। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হলো একজন বাঙালি অফিসারের উপর।

যাতে কোনো রকম তথ্য ফাঁস না হয় সেজন্যে। ব্রিগেডিয়ার এমএইচ মজুমদারকে দেওয়া হলো চট্টগ্রামের দায়িত্ব। ২০টি এফ-৮৬ জেট বিমান, ৩টি টি-৩৩ যুদ্ধ বিমান, ৪টি মিল মি-৮, ৪টি এল্লুট-৩ হেলিকপ্টার এবং ১টি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আনা হল। রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফকে পূর্ব পাকিস্তান নৌবাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হল। চারটি গানবোট পাঠানো হল রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্যে।

অতিরক্তি সাহায্যের জন্যে রাখা হল একটি পেট্রোলবোট বালাঘাট ও ডেসট্রয়ার পিএনএস জাহাঙ্গীর। অপারেশান শুরুর পর পাকিস্তান থেকে বাড়তি সাহায্যের প্রয়োজন হলে আসবে ডেসট্রয়ার পিএনএস বাবর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মাত্র ৬টি বাঙালি রেজিমেন্ট ছিল। ১ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন যশোরে ১০৭ নং ব্রিগেটের অধীনে। ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন জয়দেবপুরে, ঢাকার ৫৭ নং ব্রিগেডের অধীনে।

৩ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন সৈয়দপুরে, রংপুরের ২৩ নং ব্রিগেডের অধীনে। ৪ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন কুমিল্লায় ৫৩ নং ব্রিগেডের অধীনে। ৮ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন চট্টগ্রামে, পাকিস্তানে ট্রেনিংয়ে যাবার জন্যে শিপমেন্ট অবস্থায়। এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় ৭৫ ভাগ আর্মি শক্তি কভার করে, যা ওই সময় পাকিস্তানে শিপট হচ্ছিল। চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের ২০০০ জন বাঙালি সৈন্য এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত ৯ম ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা তখন ঢাকার ১৪ ডিভিশানের অধীনে প্রশিক্ষণরত।

বাঙালি সেনা অফিসাররা তখন কেবল ১ নং, ২ নং ও ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে। বাকী ৩টি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে পাক সেনা অফিসারগণ। পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে তখন ১৫০০০ বাঙালি সৈন্য। তাদেরকে ১৭ টি অপারেশনাল উইংয়ে ৭ সেক্টরে ১৫০ জন করে ভাগ করা হল। এক একটি উইংয়ে আবার ৩ থেকে ৬ টি কোম্পানি ইউনিট।

এক একটি কোম্পানিতে আবার ১৫ থেকে ২০ জন করে বাঙালি সৈন্যকে ভাগ করা হল। আবার এক একটি প্লাটুনে ভাগ করা হল ২০ থেকে ৩৫ জন বাঙালি সৈন্য। তাদের সবাইকে বর্ডারের ক্যাম্পগুলোতে পোস্টিং দেওয়া হল। ২৫০০ জন ইপিআর সৈন্যকে তখন ঢাকায় ইপিআর সদর দফতরে বদলি করা হল। যাদের সবাই পাকিস্তানী।

২৪ ও ২৫ মার্চ পাক সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেলরা হেলিকপ্টারে করে সকল ডিভিশন, ব্রিগেড ও গ্যারিসন ভিজিট করলেন এবং পাক অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। জেনারেল হামিদ, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল জেনারেল মিত্থ্য, পিন্সিপাল স্টাফ অফিসার কর্নেল সাদউল্লাহ মিলে সকল গ্যারিসন কমান্ডারদের ভিজিট করলেন। জেনারেল রাও ফরমান আলী গেলেন যশোর ভিজিটে, জেনারেল খাদিম গেলেন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে, ব্রিগেডিয়ার ইল ইদরাস ও কর্নেল সাদউল্লাহ গেলেন রংপুর ভিজিটে। সকল পাক আর্মি অফিসারদের তারা নকশার পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন। ঢাকায় পাক সেনাদের খাদ্য সাপ্লাই নিশ্চিত করতে পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসলেন মেজর জেনারেল কামার আলী মির্জা ও ব্রিগেডিয়ার হ্যারিসন।

ঢাকার অদূরে রাজেন্দ্রপুরে বিমান যোগে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নামানো হল। ৯০০০ টন গোলাবারুদ ও অস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়লো এমভি স্বাত। পাকিস্তান এয়ার লাইন্সে সাদা পোষাকে প্রচুর পরিমাণ পাক সেনা ঢাকায় আসলো। অতিরিক্ত ১৩ এফএফ ও ২২ বালুচ তখন ঢাকায় আসলো। ২৫ মার্চের মধ্যে পাক সেনাবাহিনী এভাবে নিজেদের সকল কর্মকাণ্ড গুছিয়ে নিল।

ব্রিগেডিয়ার এমএইচ মজুমদার বাঙালি সৈন্যদের উপর হামলা করতে অস্বীকৃতি জানালে ২৪ মার্চ তাঁকে জয়দেবপুরে ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি করা হল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হল ব্রিগেডিয়ার এমএইচ আনসারীকে, যিনি একজন পাক সেনা অফিসার। ২২ মার্চ ঢাকার ৫৭ নং ব্রিগেট মেজর খালেদ মোশাররফকে কুমিল্লার ৪ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে টুআইসি করে বদলি করা হল। ২৩ মার্চ ২ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ হাসানকে অপসারণ করা হল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হল লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাকিবউদ্দীনকে, যিনি একজন পাক আর্মি অফিসার।

সকল রেজিমেন্টে পাক আর্মি অফিসারদের কমান্ডিং দায়িত্ব দেওয়া হল। বাঙালি অফিসারদের পাকিস্তানে বদলি করা হল। অনেক বাঙালি সাধারণ সৈন্যকে ছুটিতে বাড়িতে পাঠানো হল। সকল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে একশান প্লানের বাইরে দায়িত্বে রাখা হল। আর এসব খবরাখবর বাঙালিদের অজান্তে করা হল খুব সাবধানে।

যাতে বাঙালি অফিসার বা সৈন্যরা কিছুই বুঝতে না পারে। ২৫ মার্চের সন্ধ্যার মধ্যে পাক সেনাদের এই ধরনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হল। ২৫ মার্চ রাত ১২ টা ১ মিনিটে অপারেশান সার্চ লাইট শুরু হল। ঢাকায় কমান্ডিংয়ের দায়িত্বে রইলেন স্বয়ং জেনারেল রাও ফরমান আলী। তিনি অপারেশান সাকসেস করতে কিছু জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করলেন।

রাত ১১ টায় সারা দেশে কার্ফ্যু জারী করলেন। সকল টেলিফোন লাইন কেটে দিলেন। সকল রেডিও স্টেশান বন্ধ করে দিলেন। সকল পত্রিকা অফিস বন্ধ করে দিলেন। ঢাকা থেকে সড়কপথ রেলপথ ও নৌপথ বন্ধ করে দিলেন।

রাত ১২ টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ১৫ জন টপ আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করলেন। ঢাকার ধানমণ্ডি ও হিন্দুপ্রধান এলাকায় বাড়ি বাড়ি তল্লাসি অভিযান শুরু করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ইপিআর হেড কোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকার ২ নং ও ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সকল বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করা হল। গাজীপুরের অস্ত্র কারখানা নিয়ন্ত্রণে নিলেন এবং সকল গোলা বারুদ রাজেন্দ্রপুরে শিপট করালেন। ঢাকায় ১৪ ডিভিশানের সদর দফতর, ৫৭ নং ব্রিগেট, ১৮ ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ), ১৩ ফ্রনটিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ হাসান), ৪৩ নং লাইট এ্যাক এ্যাক রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাফায়াত আলী), ৩ নং কমান্ডো ব্যাটালিয়ন (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেডএ খান), ১৯ সিগন্যাল রেজিমেন্ট (নের্তৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইফতেখার হুসাইন) এবং ১৪৯ নং ইনফেন্ট্রি ওয়ার্কশপ ঢাকার ক্রাক ডাউনে অংশগ্রহন করে।

পাকিস্তান এয়ার ফোর্সকে তেজগাঁও বিমান বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। এছাড়া ১৪টি এম-২৪ চ্যাফি ট্যাংক নিয়ে ২৯ ক্যাভারলি রেজিমেন্টকে ঢাকার স্কোয়াড্রন সদরে প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া ঢাকায় ৫৭ নং ব্রিগেডের ও ১৪ ডিভিশিানের সকল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাপ্লাই ও মেডিকেল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়। ঢাকায় জেনারেল রাও ফরমান আলী যেভাবে ক্রাক ডাউনের নের্তৃত্ব দেন সেই চিত্র কাগজে লেখা সম্ভব নয়। তবু পাক জেনারেলের পারিকল্পনা যেভাবে কাজ করলো সেগুলো এখানে বলার চেষ্টা করছি- ক্যান্টনমেন্টের সিকিউরিটি রা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ১৩ নং ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে ক্যান্টনমেন্টে রাখা হল।

৪৩ নং লাইট এ্যাক এ্যাক রেজিমেন্টকে রাখা হল তেজগাঁও এয়ার পোর্টে। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্টকে পাঠানো হল পিলখানায় ইপিআর বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করানোর জন্যে, যাতে তারা দ্রুত ওয়ারলেসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে পাঠানো হল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাঙালি পুলিশদের নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করানোর জন্যে। ১৮ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে পাঠানো হল পুরান ঢাকা ও নওয়াবপুরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে। ৩১ নং ফিল্ড ফোর্সদের পাঠানো হলো মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে।

৩ নং এসজিজি ব্যাটালিয়নের এক প্লাটুন সৈন্য পাঠানো হল ধানমণ্ডি শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিল। পরে ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিল। মাত্র ৬ ঘণ্টায় গোটা ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যে জেনারেল রাও ফরমান আলী পাক সেনাদের নির্দেশ দিলেন। ১০ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সহজেই পাক সেনারা নিরস্ত্র করলেন।

৩১ নং ফিল্ড ফোর্স সহজেই মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ নিল। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জেডএ খান ও মেজর বেলালের কমান্ডো দল সহজেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হল। মেজর বেলালের কমান্ডো দল ঘোষণা দিলেন যে, দ্য বিগ বার্ড হ্যাজ বিন ক্যাগড। কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যু সংবাদ উর্দুতে প্রচার করা হল। পাক মিলিটারিরা তখন তাজউদ্দীন ও ভুঁইঞাকে খুঁজতে লাগলেন।

তারা ঘোষণা দিলেন, কালো পতাকা এবং বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ফেলতে। যারা এই নির্দেশ অমান্য করবেন তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন। ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার বাঙালি সৈন্যদের প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণে নিল সারা রাত মুখোমুখি গুলি বিনিময়ের পর। ১৮ নং ও ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আওয়ামী লীগের নিরস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক ও নেতাকর্মী এবং ছাত্রদের গণহারে গুলি করে হত্যা করলো। তারপর তারা পুরান ঢাকায় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় সারা রাত গণহারে ব্যাপক ধ্বংস লীলা খুন ধর্ষণ লুটপাট চালালো।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে কিছু বাঙালি পুলিশ সদস্য অস্ত্রসহ বুড়িগঙ্গা পারিয়ে ওপারে কেরনিগঞ্জে আশ্রয় নিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকায় ব্যাপক হত্যা, জ্বালাও পোড়াও লুটপাট চললো সারা রাত। পাক আর্মি ২৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে তাদের পরিকল্পিত নকশার সবকিছু সম্পন্ন করলো। পাক সেনারা শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিলো। দৈনিক ইত্তেফাক ভবন, দৈনিক পিপল ভবন, রমনার কালী মন্দির জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গুড়িয়ে দিল।

শুধু তারা ব্যাপক হারে আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হল। গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তখন শুধু লাশ আর লাশ। যেসব বাঙালি পুলিশ সদস্য, ইপিআর সদস্য বা সেনা সদস্য পাক আর্মিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন বা ধরা পরেছিলেন বা নিরস্ত্র হয়েছিলেন তাঁদেরকে পরবর্তীতে বিনা বিচারে হত্যা করা হল। কাউকে কাউকে কারাগারে আটকে রাখা হল। ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে পিআইএ বোয়িং ও সি-১৩০ বিমানে করে পাক সেনাবাহিনীর ৯ নং ও ১৬ নং ডিভিশানকে ঢাকায় আনা হল।

২ মর্টার ব্যাটারিজ ও ২ উইং ইপিসিএএফকে বিপুল পরিমাণ টক্সি ও থাল স্কাউটসসহ ঢাকায় জড়ো করা হল। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।