আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুটিন চেকআপ-এ “পিত্তথলিতে পাথর!!” – অপারেশান নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা!

‘পিত্তথলিতে পাথর‘ - টার্মের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। যাকে ইংলিশ এ আমরা বলি Gall Stone (Stone in gall bladder) আর চিকিৎসকের ভাষায় বলি Cholelithiasis. নামের মাধ্যমেই বোঝা যায় যে পিত্তথলিতে পাথর হওয়াকেই গলস্টোন ডিজিজ বা কোলেলিথিএসিস বলে। { পিত্তথলি আমাদের যকৃত (লিভার) এর নিচের দিকে থাকে যেখানে পিত্ত (বাইল) এসে জমা থাকে এবং পিত্তথলিতে থাকার সময়কালে পিত্তরস তথা বাইলের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। যখন আমরা চর্বিজাতীয় খাবার খাই তখন সেটা ডাইজেশানের (পরিপাকের) জন্য পিত্তথলি থেকে বাইল বেরিয়ে আমাদের খাদ্যনালীতে আসে। } এবার সরাসরি পিত্তথলিতে পাথর-এ চলে আসি।

কিভাবে বা কেনো এই পাথর হতে পারে সেটা নিয়ে পরবর্তিতে আলোচনা করবো। পিত্তথলিতে পাথর হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই (প্রায় ৮৫% ক্ষেত্রেই) সেটা ধরা পরে রুটিন কোনো চেকআপ এর সময়। সাধারনত ২০% ক্ষেত্রে পেটের এক্স-রেতে এবং প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে আল্ট্রাসোনোগ্রাম পরীক্ষায় পিত্তথলির পাথর ধরা পরে। পিত্তথলির পাথর চিকিৎসার প্রধান চিকিৎসা অপারেশান করা, সেটা ওপেন অপারেশানই হোক আর লেপারোস্কোপিক-ই হোকনা কেনো! আজ যেহেতু আলোচনা করছি ৮৫% রোগীদের নিয়ে যারা রুটিন চেকআপের সময় পিত্তথলির পাথর ধরা পরেছে, তাই বাকি ১৫% এর ক্ষেত্রে কিভাবে ধরা পরে সেটা নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছিনা। অনেকেই হঠাৎ নিজের পিত্তথলিতে পাথির জেনে এবং যেহেতু কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছেনা, তাই সিদ্ধান্থীনতায় ভুগেন যে, অপারেশান করাবেন কি করাবেননা।

এর উত্তরটা খুব সহজ ————— এমতাবস্থায় অপারেশান না করা হলে কি হতে পারে জানলে সহজেই এর উত্তর বোঝা যাবে। পিত্তথলিতে পাথর থাকা সত্ত্বেও যদি অপারেশান না করা হয় তবে যা যা হতে পারে ১ পিত্তথলির ইনফ্লেমেশান তথা Cholecyatitis – এর জন্য যেকোনো সময় আপনার পেটের ডান দিকে প্রচন্ড ব্যথাসহ জ্বর আসতে পারে এবং বমি ও হতে পারে। ২ অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস বা সার্জিক্যাল জন্ডিস – বাইল (পিত্তরস) পিত্তথলিতে জমা থাকে, চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া হলে বাইল পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে ‘কমন বাইল ডাক্ট‘ এর মাধ্যমে খাদ্যনালীতে চলে আসে। অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস এর ক্ষেত্রে এই কমন বাইল ডাক্ট-এ পাথর এসে জমা হয়, তখন বাইল শরীর থেকে বের না হতে পেরে শরীরে বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস সৃষ্টি করে। এবং এই জন্ডিসে সাধারনত বিলিরুবিন এর পরিমান অন্যান্য জন্ডিস এর থেকে বেশি হয়, এবং হেপাটোরেনাল সিন্ড্রোম (যেখানে লিভার ফেলর হোয়ার পর কিডনী ফেইলর হয়) বা হেপাটিক এনকেফালোপ্যাথি(বিলিরুবিন বেড়ে গিয়ে ব্রেন এ এঙ্কেফালোপ্যাথি) হওয়ার মাধ্যমে মানুষ মারাও যেতে পারে।

৩ প্যানক্রিয়েটাইটিস তথা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ – পিত্তথলির পাথর কমন বাইল ডাক্ট থেকে নেমে প্যানক্রিয়েটিক ডাক্ট এ আটকে গিয়ে একিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস তথা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে হঠাৎ পেটের মাঝ দিকে তীব্র ব্যথা সৃষ্ট হতে পারে, সাথে প্রচুর বমি হতে পারে, এবং ব্যথা পেটে হওয়ার সাথে সাথে পিঠেও হতে পারে। এবং এতই ব্যথা সৃষ্ট হবে যে রোগিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তাছাড়া যেকোনো বিপদ হতে পারে। ৪ পিত্তথলিতে ক্যান্সার – যদিও পিত্তথলিতে ক্যান্সার অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় কম হয়। কিন্তু পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার জন্য পরবর্তিতে সেখানে ম্যালিগন্যান্সি তথা ক্যান্সারও হতে পারে কিভাবে হয় – অনেকদিন পাথর থাকার জন্য পিত্তথলির লাইনিং যেটা কিনা কলামনার এপিথেলিয়াম দিয়ে হয়, সেটা মেটাপ্লেসিয়া এর মাধ্যমে বদলে গিয়ে স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াম হয়ে যেতে পারে। আর যেকোনো মেটাপ্লেসিয়াই প্রিম্যালিগন্যান্ট, তাই যে কোনো মুহূর্তে সেটা ম্যালিগন্যান্সি তথা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

এখন যারা সিদ্ধান্থীনতায় ভুগছেন যে, পিত্তথলিতে পাথর এর জন্য অপারেশান করাবেন কি করাবেননা, তারা আশাকরি দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন! ফেসবুক-এ আপডেট পেতে ফলো করুন – Dr. N. H. Sarja টুইটার-র আপডেট পেতে ফলো করুন – @drnhsarja স্বাস্থ্য ব্লগ – http://drsarja.wordpress.com/ ………………………………………………………………… কোনো প্রশ্নবা সাজেশানথাকলে এখানে কিংবা ফেসবুক পেজ বা টুইটারে করতে পারবেন! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।