আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপারেশান ফ্লাইং ফ্ল্যাগস - অবরুদ্ধ ঢাকায় প্রথম বাংলাদেশী পতাকা

এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুই রকমের মানুষ আছে। ভালো মানুষ যারা ভালো কাজ করে। আর খারাপ মানুষ যারা খারাপ কাজ করে। এটাই মানুষদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য। আর কোন পার্থক্য নেই... আমি ভাল মানুষ...☺☺☺ আগস্ট ১৯৭১।

ঢাকার অভ্যন্তরে ক্র্যাক প্লাটুনের অপরাশানে দিশেহারা পাকিস্তানী বাহিনী। রাত-দিন সর্বত্র ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে গ্রেনেড বা বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে রাতে এই ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ না শুনলে ঘুমই আসতো না মুক্তিকামী জনতার। এরই মাঝে এগিয়ে আসতে থাকে ১৪ই আগস্ট ১৯৭১, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তানী ও রাজাকাররা এই দিনে গর্বের সাথে ওড়াবে পাকিস্তানী পতাকা, দেখাতে চাইবে বিশ্বকে বাংলাদেশের অবস্থ স্থিতিশীল, কিন্তু ক্র্যাক প্লাটুনের দূর্ধর্ষ যোদ্ধারা থাকতে তা কি হতে পারে কোনো ভাবে? তাই এবার তারা পরিকল্পনা করলেন এক অন্যরকম যুদ্ধের।

পাকিস্তানী পতাকাকে ম্লান করে অবরুদ্ধ ঢাকার আকাশে তারা ওড়াবেন বাংলাদেশী পতাকা। কিন্তু কীভাবে করবেন এই দুঃসাধ্য কাজ? প্রতিকূলতা যে প্রচুর। সাথে সাথেই তাদের মাথায় এলো এক জিনিয়াস আইডিয়া। বেলুনে বেঁধেই ঢাকার আকাশে তারা ওড়াবেন বাংলাদেশী পতাকা। যেই ভাবনা সেই কাজ।

একসাথে এত লাল-সবুজ কাপড় কিনলে সন্দেহ হতে পারে পাকিস্তানী বাহিনীর। তাই শাহাদাত চৌধুরী সদরঘাট থেকে কিনে আনেন অনেকগুলো সবুজ লুঙ্গী আর লাল রঙ্গের পুরনো কাপড়। বীর প্রতীক হাবিবুল আলম নিউমার্কেট থেকে কিনে নেন অনেক হলুদ রঙ্গের কাপড়। কাপড় তো হলো এবার পতাকা বানানো যায় কীভাবে? এগিয়ে এলেন বীর প্রতীক হাবিবুল আলমের পরিবার। তার তিন বোন আসমা, রেশমা, শাহনাজ মিলে রাত ভর শুরু করেন বাংলাদেশী পতাকা বানানো।

বাদ যায়নি চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও তার পরিবার। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই নিঃস্বার্থভাবে গেরিলাদের সহায়তা দিয়ে যাওয়া এই চিত্রশিল্পী ও তার পরিবারও বানিয়েছিলেন অনেক পতাকা। দিলু রোডের অনেক মেয়েও অংশ নেন এই পতাকা বানানোর মিশনে। সব মিলিয়ে প্রায় পাওয়া যায় আড়াই শতাধিক পতাকা। এদিকে আরেক গেরিলা চুল্লু ধোলাইখাল থেকে যোগাড় করেন একটি গ্যাস সিলিন্ডার, সেই সাথে পুরনো ঢাকা থেকে যোগাড় করেন প্রচুর বেলুন।

সব যোগাড় করে রাখা হয় ধানমন্ডীতে। অবশেষে নির্ধারিত দিনে ১৪ই আগস্ট ১৯৭১, পাকিস্তানী ও অন্যান্য পাকীপ্রেমিকরা যখন ব্যস্ত তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে, ঠিক তখনই সকাল সাড়ে ন'টার দিকে ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করে এক অবাককরা ঘটনা। মৃত্যে পাকিস্তানী পতাকা থাকলেও তীব্র বিস্ময়ে তারা তাকিয়ে দেখে আকাশ ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশী পতাকায়। প্রতিটি পতাকার সাথে দু'কোনায় বাঁধা দু'টি বেলুন, আর তার উপর ভর করে গর্বের সাথে আয়েশী ভঙ্গীতে উড়ে চলছে বাংলাদেশী পতাকা। একটি দু'টি নয়, শত শত পতাকা উড়ে বেড়াচ্ছে শরতের আকাশে।

গর্বে ফুলে ওঠে বাঙ্গালীদের হৃদয়, মুক্তির সংগ্রামে সহায়তায় আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় তারা। এই অপরাশেনার উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী নিধন নয়, অবরুদ্ধ ঢাকার আটকে পড়া বাঙ্গালিদের আশা দেওয়া, মুক্তি আসছে শীঘ্রই। আর বোকা পাকিস্তানীরা কিছুক্ষণ পরই আকাশের দিকে গুলি করতে থাকে পতাকা লক্ষ্য করে। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ পরেই তারা বুঝতে পারে, এই দেশের মাটি আর বাতাসের সাথে মিশে আছে এই অগণিত পতাকার অস্তিত্ব, সামান্য গুলিতে তা নিশ্চিহ্ন করা যাবে না কখনোই। - - - - - - - - - - - - - - - - - - মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন A Page totally based on liberation war 1971 ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।