প্রাসাদোপম এই অট্টালিকা ঘিরে সাধারণ মানুষের অনেক কৌতূহল৷ হোটেল, তবে সাধারণ হোটেল নয়- এটা সবাই জানে৷ দেশের প্রথম পাঁচতারা হোটেল- ঢাকা শেরাটন৷ আগে নাম ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্ট� �ল৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস নিরাপত্তা জোন ঘোষণা করে একে৷ দেশী-বিদেশী সাংবাদিক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আশ্রয় দিয়েছিলেন এখানে৷ স্বাধীনতার পর এ হোটেলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান থেকেছেন, থাকছেন৷ হোটেলটির নানা দিক নিয়ে লিখেছেন নিজামুল হক নিজাম শেরাটন হোটেল৷ দেশ বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী, অন্যান্য ৰেত্রে গুরম্নত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত যে হোটেলটি অনেকের কাছে এখনও স্বপ্নের মতোই৷ স্বপ্নের মত, তবে অলৌকিক কিছু নয়৷ দেশের প্রথম ফাইভ স্টার হোটেল৷ এখানে কারা আসেন, কারা থাকেন, কি খান, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের অনত্ম নেই৷ শাহবাগের কাছে যে নয়নাভিরাম হোটেলটি নজর কাড়ে সেটি হোটেল শেরাটন৷ এক দিকে রমনা গ্রিন, পাশে জাতীয় জাদুঘর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, বাংলাদেশ বেতার (পুরাতন) ভবন৷ একটু দূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ এসব গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছেই প্রাসাদোপম অট্টালিকা-শেরাটন হোটেল৷ স্টার উড হোটেল এন্ড রিসোর্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের (ইন) একটি অন্যতম ব্রান্ড হোটেল ঢাকা শেরাটন৷ এটি বাংলাদেশের প্রথম ফাইভ স্টার হোটেল৷ হোটেলে প্রবেশের পর থেকেই শেরাটনের জমকালো, বিশাল দেয়াল বাতি এবং কারম্নকার্যে অলংকৃত লবি দেখলে যে কেউই মোহিত হবে৷ এখানে রয়েছে ৫১টি স্বতন্ত্র ক্লাব যেখানে ব্যবস্য সংক্রানত্ম সেবাসহ অন্যান্য দরকারি সুবিধা প্রদান করা হয়৷ বিলাসবহুল কৰ হোটেলের ওয়েস্ট উইং-এর ৩য় তলা থেকে এবং ইস্ট উইং ৪র্থ তলা থেকে ১১ তলা পর্যনত্ম রয়েছে আবাসিক কৰ৷ ২৭২ টি আবাসিক রম্নম সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ প্রত্যেকটি রম্নমই বিলাস বহুল৷ ব্রডব্যান্ড নেট সংযোগ, টেলিভিশনে বিশ্বে সেরা চ্যানেলের সংযোগ, ব্যবসায়িক লেনদেনের সু ব্যবস্থা৷ রম্নমগুলোর সাথে প্রতিটি বেডে রয়েছে স্বনামধন্য শেরাটন সুইট িপার বিছানা৷ আছে ২৪ ঘন্টা রম্নম সার্ভিস, মিনি বার হেয়ার ড্রেসার, লন্ড্রি, দেশী বিদেশী সংবাদপত্র৷ রম্নমের মধ্যে শিশুদের জন্য রয়েছে একটি মিনি রম্নম৷ ২৭২টি কৰকে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে৷ এগুলো হলো- ডিলাক্স, প্রিমিয়াম ডিলাক্স, জুনিয়র ডিলাক্স, এক্সিকিউটিভ ডিলাক্স, স্টার সু্যট, প্রেসিডেন্সিয়াল৷ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল সু্যট৷ গুরম্নত্ব অনুযায়ী রম্নমের ব্যবস্থা করা হয় এখানে৷ কারা আসেন শেরাটন হোটেলে বিদশেী পর্যটক, বিদেশী ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় দল, কোন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, রাষ্ট্র দূত বা সমপর্যায়ের কোন অতিথি আসেন এ হোটেলে৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি বেস্নয়ার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পাকিসত্মানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এসেছেন এ হোটেলে৷ গত বছরের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় দৰিণ এশিয়ার সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিদেশী সাংবাদিকরা ছিলেন এ হোটেলে৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসা ভারতীয় ক্রিকেট টিম উঠেছে এই হোটেলে৷ শেরাটন হোটেলের ১০ম ও ১১ তলা ফ্লোরের পূর্ব অংশে বিশেষ লাউঞ্জ তৈরি করা হয়েছে যা বাংলাদেশে প্রথম৷ এ লাউঞ্জগুলোতে সার্বৰণিক চা, কফি, বিস্কুট, ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে৷ ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রেন্ট এ-কার, কুরিয়ার সার্ভিস, বিশ্বের যে কোন দেশের স্টার উড হোটেলের যে কোন ব্রাঞ্চ হোটেল রিজার্ভ করতে পারবেন এখানে বসে৷ ২৪ ঘন্টা চিকিত্Aসা ব্যবস্থা, ফ্রি পাকির্ং৷ এছাড়াও রয়েছে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধের সুযোগ৷ রয়েছে সুইমিং পুল, স্কোয়াস কোট, টেনিশ কোট৷ হোটেলের বিজনেস সেন্টার সেক্রেটারিয়াল কাজে সহযোগিতার জন্য রয়েছে টেলেক্স, ই-মেইল, ফ্যাক্স, কম্পোজ, ফটোকপি, এবং স্পাইরাল বাইন্ডিং সুবিধা৷ এছাড়া বিজনেস সেন্টারে ১০ জনের মিটিং করার জন্য সুযোগ রয়েছে৷ টি লাউঞ্জ সুবিশাল লবির এক প্রানত্মে রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের ক্যাফে৷ এখানে পেষ্ট্রি, কেক, ক্যপুসিনো, চা পাওয়া যায়৷ এটি সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যনত্ম খোলা থাকে৷ লবি, ক্যাফে জমজমাট থাকে বাঙালিদের পদচারণায়৷ বিদেশীরাও ভিড় জমান৷ এগুলো সবার জন্য উম্মুক্ত৷ হালকা আলোয় বন্ধুদের নিয়ে এখানের হালকা নাসত্মা করার মজাটাই আলাদা৷ এখানে ডেনিস পেস্ট্রি, পেস্নন কেক , ফ্্রুট কেক পাওয়া যায় ৮০ টাকা করে৷ এ ছাড়া ক্রিম কেক ১৪০ টাকা, ফ্্রুট সালাদ-১২০ টাকা৷ নানা রকম চা মেলে এই ক্যাফেতে৷ ব্রেক ফাস্ট টি ১২০ টাকা, দার্জিলিং টি ১২০ টাকা, গ্রিন টি ১২০ টাকা, অলিম্পিক টি ১৮০ টাকা, আইস টি ১৪০ টাকা, আইসড কফি ১৫০ টাকা, কফি লিজিরো ২০০ টাকা৷ হালকা স্নাকসের মধ্যে ব্রেড ফিস ৩৩০ টাকা, প্রিং রোল ১৫০ টাকা, সবজি এবং মাংস সমুচা ২৪০ টাকা, ফ্রেস ফ্্রাউস টমেটো সস-১৫০ টাকা৷ বন্ধুর জন্মদিনে অভ্যর্থনা জানাতে এ স্থানের তুলনা নেই৷ ইতালিয়ান বার ট্রপিক্যাল স্টাইলে সজ্জিত এই ক্যাফেতে রয়েছে ইতালিয়ান কিইসান, পাসত্মা, পিজা, গ্রিল চিকেন৷ পিজা হাউজ হিসেবে শহরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার৷ প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যনত্ম খোলা থাকে৷ দি বার সঙ্গীর সাথে একানত্মে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এটি উত্Aকৃষ্ট স্থান৷ বিশ্বের নামি-দামি ওয়াইন পাওয়া যায় এখানে৷ শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ১১ থেকে ৩টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্য রাত পর্যনত্ম খোলা থকে৷ বাঙালির আনাগোনা এখানে কম নয়৷ বিথীকা রেসত্মোরাঁ সকালের নাসত্মা, লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য দেশী-বিদেশী খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে৷ প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যনত্ম খোলা এটি৷ বিথিকা রেসত্মোরাঁ খাবার মেনু্যতে রয়েছে ১০০ প্রকার খাবার৷ শুধু বিদেশী নয় বাংলাদেশীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এ রেসত্মোরাঁ৷ খাবার মূল্য হোটেলের অন্যান্য রেসত্মোরাঁ বা বারের চেয়ে সসত্মা হওয়ায় এখানের ভিড় একটু বেশি৷ নূ্যনতম ১১০০ টাকায় লাঞ্চ এবং একই দামে পাওয়া যায় ডিনার৷ আবাসিক অতিথি বাদে নিয়মিত প্রচুর বাঙালি আসেন এ রেসত্মোরাঁ৷ এখানে বিথিকা ব্রেড এন্ড ডিপসের দাম ২০০ টাকা, সু্যপ-৩০০ টাকা, সবজি মিশ্রিত ফিস কেক ৫৫০ টাকা, সালাদ ৪৯০ থেকে ৮৫০ টাকা, কারি হাউজ ৮৫০- ৯০০ টাকা, পেসত্মা এন্ড নুডুলস ৭০০-১২০০ টাকা, গ্রিল ৮৫০-১৫০০ টাকা, আইসক্রিম ও ফল মিশ্রিত ডিসাটর্ ৩০০-৪০০ টাকা৷ ভিনটেজ রেসত্মোরাঁ সাজ-সজ্জা আর খাবারের মাঝে এটি শুধু শেরাটন নয় এটি রাজধানীর মধ্যে লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য নামকরা৷ এখানে আমদানিকৃত মাংস ও ওয়াইন পরিবেশন করা হয়৷ দি ভিনটেজ রেসত্মোরাঁ ব্যয়বহুল৷ সাধারণত বাঙালির প্রবেশ ঘটে না৷ প্রধানত বিত্তবান বিদেশীরাই আসেন এখানে৷ হাফ বেবি চিকেন ১৫০০ টাকা, ম্যারিনেটেড ল্যাম্ব র্যাক ১৯০০ টাকা, সিরেড স্যামন ১৫০০ টাকা, প্রতিদিনকার মাছ ১৫০০ টাকা৷ ডানহীল লাউঞ্জ এক্সিকিউটিভ ক্লাস ফ্লোরের গেষ্টরাই শুধু এই লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন৷ এখানে ধুমপায়ীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রিমিয়াম সিগারেট সরবরাহ করা হয়৷ এছাড়া এখানে রয়েছে বার, ইটালিয়ান কফি, পস্নাজমা টিভি এবং ইন্টারনেট সার্ভিস৷ উইন্টার গার্ডেন এটি শেরাটনের একটি পরিচিত স্থান৷ এটি কনভেনশন সেন্টার নামে পরিচিত৷ এখানে এক সাথে ৭০০ লোক বসে খাওয়া দাওয়া করতে পারে৷ বিয়ের অনুষ্ঠান বা বড় কোন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এখানে৷ ১২০০ লোক একত্রে বসে কোন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে৷ ভিইপি লাউঞ্জ শেরাটনের সাথে চুক্তিবদ্ধ এয়ারলাইন্সের ১ম শ্রেনী ও বিজনেস শ্রেণীর যাত্রীরা এখানে উঠতে পারে৷ বল রম্নম এখানে ৩০০ লোক এক সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করতে পারেন৷ এছাড়া ৫০০ লোক একত্রে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন৷ আনত্মজার্তিক সেমিনার, পারিবারিক অনুষ্ঠান, বিবাহ অনুষ্ঠান, মেলা-এর জন্য রয়েছে কনফারেন্স, AAAAAAAAAAAAAAAAAAAAAশন এবং বেনকুইট সম্পণ্ন কৰ৷ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এ কৰ গুলোতে৷ এগুলো হলো বকুল, চামেলী, ডালিয়া ,শিমুল, পলাশ৷ এছাড়া রয়েছে এয়ারপোর্টের কাজ সমাধানের জন্য যাতায়াতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা৷ শেরাটন হোটেলের মধ্যে রয়েছে গিফট আইটেম, চিত্র কর্ম, বইয়ের দোকান, পত্রিকার স্ট্যান্ড, সেলুন৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে হোটেলে বিশ্বে নামী-দামী ব্যক্তরা আসেন সে হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে তা বলার অপেৰা রাখে না৷ তবে রাষ্ট্র প্রধানরা আসলে এ সময় এস এস এফের সহযোগিতা পায় শেরাটন হোটেল৷ এমনিতে সার্বৰণিক নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা৷ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ খাবারের তালিকা বিশ্বে ৯৫টি দেশে স্টার উড হোটেল এন্ড রিসোর্টের শাখা রয়েছে৷ মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার লোক কর্মরত রয়েছে এসব হোটেলে৷ ঢাকা শেরাটন হোটেলে ৬২৩ জন কর্মরত রয়েছেন৷ এর মধ্যে ২ জন বিদেশী৷ বাকি সবাই বাংলাদেশী৷ ঢাকা শেরাটন হোটেলের প্রধান জেনারেল ম্যানেজার ট্রিভর ম্যাকডোনাল্ড৷ তিনি অষ্ট্রেলীয় অধিবাসী৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।