বাধ ভাইঙ্গা যায় আওয়াজের ঠেলায়! চারিদিকের অস্হিরতার জীবনটা মাঝে মাঝে হতাশ করে ফেলে। একটা সময় চিন্তা করতাম যদি তিনবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে পুরো জীবনটা পার করার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় তাহলে এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়ার আর কি থাকতে পারে। অনেক কষ্ট করে দু বেলা অন্নের যোগান হবার পর স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম সবাইকে নিয়ে এক ছাদের নীচে থাকবার নিরাপত্তা। যখন সেই নিশ্চয়তা থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে, তখন মনে হলো একটা সুখের জীবন যেখানে তিন বেলা আহারের পর প্রতি ছুটিতে হাতির ঝিল বা টিএসসি আর ঈদের ছুটিতে দেশের বাড়ি নাহলে সিলেট।
মানুষের চাহিদার প্রস্হ দিগন্ত ছাড়িয়েও চলে যায়, সুখের উপকরনের অভাব যেমন নেই পৃথিবীতে তেমনি সেই সুখকে জয় করবার জন্য সাগর সমান চোখের জল ফেলতে হয়, ক্ষত বিক্ষত হয়ে ট্রাজেডী কিং হতে হয়।
ডায়েরীর পাতা উল্টানোর বদলে সময় এসেছে অনলাইনে ব্লগ লেখার। মানুষ আর পরিশ্রমী হতে চায় না। তাই উপরে উঠবার সিড়ির খোজে যখন মানুষ সর্বস্ব খুইয়ে সেই পথে পা দেয়, তখন যদি কোনো ঝড় এসে উপড়ে ফেলে, এরপর খুব কম মানুষই উঠে দাড়াতে চায়।
রহিম চলে গেছে ৬ দিন। মেসটা খালি।
যাবার আগে নতুন বাসার ঠিকানা দিয়ে গেছে লিখে গেছে একটা চিঠি। অসংখ্য বানান ভুল চিঠিটা কেন জানি মনে দাগ কেটে যায়, নিজের অক্ষমতায় নিজেকেই কষ্ট দিতে মন চায়।
ভাই
আপনেরে আমার নিজের ছোট ভাইয়ের মতোই পেয়ার করি। আমার যখন বয়স ১৪ তখন ছোট ভাইটার টাইফয়েড হয়। ডাক্তার ৩০০ টাকার ঔষুধ দেয়।
বাপজান গন্জ্ঞে থালা বাসন বিক্রি কইরা ঔষুধ আইনাও ভাইটারে বাচাইতে পারে নাই। তারপরের থিকাই মনে হইছিলো এই কাগজের টাকা আমি কামামু না, টাকা আমারে কামাইবো।
সবকিছু গুছাই আনছিলাম। ২ লাখ টাকার সামানা চুরি গেছে এইটা কোনো ব্যাপার না, ব্যাপারটা হইলো মানুষের মন ভাইঙ্গা যাওয়া। আমি পাপ করছি।
মিলন চুরি করে নাই, ওর ওপর জুলুম করছি। তার শাস্তি দেখেন পরের দিন আল্লাহ দিয়া দিছে।
হিসাব কইরা দেখলাম সংসার টিকলো না বদরাগের কারনে, মনটা ভাংলো অবিশ্বাসের লিগা। নতুন বাসায় পারলে নিজের বাবা মারে নিয়া উইঠেন। ভালো চাকরী করেন, বিয়া করেন।
আমার মতো ভুল কইরেন না। আপনেরে দেখলে নিজের ছোট ভাইটার কথাই মনে হয়।
আমার খোজ কইরেন না, আমারে পাইবেন না। মন ঠিক হইলে ফোন দিমুনে। অনেকদিন ধইরা সাগর দেখি না, পাহাড় দেখি না, নীল আকাশের নীচে শুইয়া বাতাস শরীরে লাগাই না।
দোয়া রইলো।
ইতি
রহিম মোল্লা
দু'দিন ছুটি নিয়েছিলাম। বাসাতেও মন টিকছে না। ফ্যানটা যতক্ষন ঘোরে ততক্ষন ফ্যানটার দিকে থাকি। যেখান থেকে চলতে শুরু করেছে সেখানেই ফিরে আসছে।
অদ্ভুত এক বৃত্তে আটকা পড়ে আছে এই ফ্যানটা। আমাদের মতো হতভাগাদের জীবনটাও অনেকটা সেরকমই। বৃত্ত ভাংতে চাই, সুখি হতে চাই। পারছি না।
প্রচন্ড পরাক্রমশালী কেউ আমাদেরকে সে বৃত্ত ভাংতে দিচ্ছে না, প্রতিদিন সকাল বেলা উঠে নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করতে চাই, আশার আলো বুকে নিয়ে এগিয়ে যাই, দিন শেষে যেখান থেকে শুরু করেছিলাম পথচলা, সেখানেই ফিরে আসি।
গতকাল স্বর্না এসেছিলো এ বাসায়। কিভাবে ঠিকানা খুজে পেলো বুঝতে পারলাম না, এইচআরের সিভিতে এসএম ইন্টারন্যাশনালের ঠিকানা দেয়া। বাসায় এসে সবকিছু গুছালো, রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের চুলা জ্বললো না। বাইরে থেকে খাবার আনালো। এক সাথে শপিং এ গেলাম।
গিফট হিসেবে পেলাম শার্ট। জিজ্ঞেস করলাম,"কাহিনী কি?"
উল্টো আমাকে বলে ডুব না দিতে। বড় বড় সাতারূ হারিয়ে গেছে এই মায়াজালে।
তাকে আমি কিভাবে বলি সাতারূ হতে হলে পানিতে নামতে হয় আর আমি এমনি এক অভাগা যে যেখানেই তাকাই সেখানেই সাগর শুকায়।
আমি জানি রহিম ভাই কোথায় আছে, মিলন কোথায় আছে।
আমি জানি ওরা একদিন ফিরে আসবে, সব আগের মতোই হয়ে যাবে, অবশ্যই হতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।