আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগার সেলিম জাহাঙ্গীরের প্রতিঃ হাদীস অবশ্যই মানতে হবে।

আপনার বেশ কয়েকটি লেখায় দেখেছি আপনি হাদীসের প্রয়োজন নেই বলতে চান। কেউ একজন একটি লেখার মন্তব্যে যখন প্রশ্ন করে যে হাদীস না থাকলে নামায রোযা যাকাত এসবের নিয়ম কিভাবে জানা যাবে? কারণ কুরআনে এইসবে বিস্তারিত বলা নেই। উত্তরে আপনি বলেছিলেন যে হাদীস না থাকলেও সমস্যা হবে না। কিন্তু হাদীস না মানলেই যত সমস্যা। কারণ এবার ব্যাখ্যা করি।

আপনার মতে হাদীস ছাড়াও দীর্ঘদিন মুসলিমরা নামায রোযা এসব নিয়ে সমস্যায় পড়েনি। তাছাড়া আমরা সবাই জানি যে হাদীসের গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছে রাসূল(স) এর মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর। আপনার মূল বক্তব্য হল তারা অর্থাৎ তৎকালীন মানুষরা বংশানুক্রমে এসব নিয়ম জানতে পেরেছেন। তাই বুখারী মুসলিম এসবের প্রয়োজন নেই। আমার প্রশ্ন হল তারা এসব নিয়ম কার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন? নিশ্চয় তাদের পূর্ববর্তীদের মাধ্যমে, এই পূর্বপরবর্তীরা জানতে পেরেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের থেকে।

এভাবে সবাই রাসূল(স) এর থেকে জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু এভাবে যদি অলিখিত হাদীসের উপর নির্ভর করতে হয় তবে আশঙ্কা থাকে যে এসব হাদীস হয়তো বিকৃত হয়ে যাবে। এই আশঙ্কা যে মিথ্যা নয় তার প্রমাণ হল নবীজীর মৃত্যুর বেশ কিছুকাল পরই তাঁর নামে জাল হাদীস প্রচার করা শুরু হয় যার প্রেক্ষিতে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ হাদীস সংকলনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কেউ একজন এসে বলল নবীজী(স) এই কথা বলেছেন আর আমরা তার কথা বিনা দ্বিধায় মেনে নিলাম এটা যুক্তিপূর্ণ কাজ হবে না। আমাদেরকে তার কথার সত্যতা যাচাই করে দেখতে হবে।

কারণ সে তো মানুষকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যেও এই কথা বলতে পারে। আর সত্যতা যাচাইয়ের এই কাজটিই করেছেন তৎকালীন মুহাদ্দিসগণ। তারা প্রাপ্ত হাদীসগুলোর শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। তারপর সেগুলোকে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যাতে ভবিষ্যতের মানুষ সহজে সেগুলো থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। ভেবে দেখুন যদি হাদীস লিপিবদ্ধ না থাকত তবে আজ নবীজি(স) এর মৃত্যুর ১৪০০ বছর পর আমরা কিভাবে বুজতাম কোনটা সহীহ, কোনটা জয়ীফ আর কোনটা জাল হাদীস।

এতদিন পর কে কার থেকে হাদীস জেনেছে তার সূত্র বের করাটা এককথায় অসম্ভব হত। আপনি যে রাসূল(স) কে মহৎ চরিত্রে মানুষ বলেন তা কিন্তু তার কর্মগুলো জানার কারণেই। আর এই কর্মগুলোই হল হাদীস। হাদীস যে কেবল নামাজ রোযার কাজে লাগে তা না। মুসলিমের জীবনে এর প্রয়োগ বহুবিধ।

আইন, দন্ডবিধি, চুক্তি এসব বিষয়েও হাদীসের প্রয়োজন রয়েছে। আপনার কথা যদি হয় তৎকালীন মানুষ তো বাপ দাদার কাছ থেকে হাদীসের বই ছাড়াই ইসলাম শিখেছে তাহলে হাদীস গ্রন্থের কী প্রয়োজন তবে আমার কথা হল তারা বাপ দাদার কাছ থেকে কী শিখেছে? নিশ্চয় আইনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো শিক্ষা করেনি, নিশ্চয় কোন অপরাধের কী শাস্তি তা শিক্ষা করেনি। কারণ এসব বিষয় আমজনতার কাজে লাগে না। তারা খালি দৈনন্দিন কাজে লাগে এমন মাসয়ালা মাসায়েলগুলো শিক্ষা করত। উপরোক্ত বিষয়গুলো শিক্ষা করতেন এসব বিষয়ের পন্ডিতরা যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিসহ আরো অনেকেই।

তারা ছিলেন আইনবিদ বা ফকীহ। তাদের কাজের জন্য হাদীসের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এভাবে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নবীর বাণীর প্রয়োজন। তাই হাদীস প্রয়োজন নেই এই কথা বলা বোকামী। আপনি কুরআন মানেন।

সেই কুরআনেই বলা হচ্ছে "বলো,'আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও'। " (সূরা ইমরান, আয়াত ৩২)। আল্লাহর আদেশ জানার জন্য তিনি কুরআন দিয়েছেন। আর তা কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তার জন্য রাসূল(স) কে পাঠিয়েছেন। রাসূলের আনুগত্য করতে হলে তার কর্মগুলো জানতে হবে।

তার কর্ম জানার রাস্তা হল হাদীস। তাই হাদীস ছাড়া পরিপূর্ণ ইসলাম মানা অসম্ভব। মূল কথা হল, আপনি যে যুগের কথা বলছেন অর্থাৎ যে যুগের মানুষ হাদীস গ্রন্থের সাহায্য ছাড়াই ইসলাম পালন করত সেই যুগের মানুষও কিন্তু হাদীস মানত কিন্তু হাদীস তখন অলিখিত ছিল। আর এই যুগের মানুষও হাদীস মানে কিন্তু এখন হাদীস লিখিত রূপে আছে। সবকথার শেষ কথা হল, আপনি নিজেও আসলে হাদীস অস্বীকার করেন না।

আপনি যদি কিছু অস্বীকার করেন তবে তা হল হাদীসের লিখিত রূপ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.