অনেক টাকা খাওয়ার পরই এ ধরনের যৌথ বিবৃতি সম্ভব-
রূপচর্চার প্রতিষ্ঠান পারসোনার বনানী শাখার ‘আলোচিত ঘটনা’কে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন সেবাগ্রহীতার স্বামী ও পারসোনা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার পাঠানো বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, এটা নিছক ভুল-বোঝাবুঝির ফল।
এদিকে পারসোনার বনানী শাখা থেকে উদ্ধার করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করে আপত্তি করার মতো কোনো কিছু পায়নি বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। পুলিশের গুলশান বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল অভিযোগটি তদন্ত করছে।
গত শুক্রবার বিকেলে পারসোনার বনানী শাখায় স্পা করাতে আসা এক নারী পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে একটি সিসি ক্যামেরা দেখতে পান।
এরপর তিনি বিষয়টি পারসোনা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে জানান। পরে তাঁর স্বামী এসে সেখানে কর্মীদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করেন। এরপর সেবাগ্রহণকারী ওই নারী চিকিৎসক পারসোনার সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে তাঁর বাসায় নিয়ে যান।
জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, পারসোনা থেকে উদ্ধার করা কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে কী রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। এতে আপত্তি করার মতো কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।
তবে এ ঘটনায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারায় থানার উপপরিদর্শক মেহেদী মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রূপচর্চা কেন্দ্রে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট, বাংলা ব্লগসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এতে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার ব্যবহার ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (প্রাইভেসি) রক্ষার বিষয়গুলো সামনে চলে আসছে।
পারসোনার বনানী কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা ওই নারী গ্রাহকের স্বামী গতকাল দুপুরে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিনের ঘটনাটি ভুল-বোঝাবুঝি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে আমিও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ থাকলে তো থানায় গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মামলা করতাম। কাউকে হেয় করার ইচ্ছা আমার নেই, ছিলও না। ’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পত্রিকায় নানা কথা লেখা হয়েছে।
তবে আমরা কোনো পত্রিকার সঙ্গে কথা বলিনি। আমার নামে তারা নানা মন্তব্য প্রকাশ করেছে। ঘটনার দিন রাগে-ক্ষোভে তাৎক্ষণিকভাবে আমি পুলিশ এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ফোন করেছিলাম। পরে আমার মনে হয়েছে, রাগ-উত্তেজনা এবং ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিষয়টি এত দূর গড়িয়েছে। অতিরঞ্জিত যা বলা হচ্ছে, তা আসলে ঠিক নয়।
কারণ, চাওয়ামাত্র পারসোনা কর্তৃপক্ষ ওই কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক আমাদের দিয়ে দেয়। ’
পারসোনার দুজন পুরুষ কর্মচারী ফুটেজ কপি করে পেনড্রাইভে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে ওই গ্রাহকের স্বামী বলেন, ‘না, না, এ রকম কিছু হয়নি। আমি দাবি করায় তাঁরা হার্ডডিস্ক খুলে আমাদের দিয়ে দেন। আমরা সেটি বাসায় নিয়ে আসি এবং রাতে পুলিশকে দিয়ে দিই।
’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে যে রকম ভেবেছিলাম, সে রকম কিছু ছিল না হার্ডডিস্কে। আসলে শুরুতে আমরা বুঝতে পারিনি। আমি তো ভাবছি, এখন একটা বিবৃতি দেব, এটি আসলে পুরোটাই ভুল-বোঝাবুঝি। ’
গত রোববার পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানিজ আলমাস খান তাঁর ধানমন্ডির কার্যালয়ে বলেন, ‘গ্রাহকের অসম্মান হয়—এমন কিছু কখনোই করব না আমি। গ্রাহকই আমাদের সব।
কিছু করলে শুধু যে আমার সম্মানহানি হবে তা নয়, এর সঙ্গে আরও তিন হাজার মেয়ে জড়িত। তাদের সম্মানটা দেখাও আমার দায়িত্ব। গ্রাহকের সম্মান মানেই আমার সম্মান। ’
কানিজ আলমাস খান আরও বলেন, ‘বনানী শাখায় কোনো পরিপূর্ণ স্পা নেই। এই শাখা চালু করার সময় আমাদের ওয়েবসাইটে বলেছিলাম বটে, কিন্তু পরিপূর্ণ স্পা এখনো চালু করতে পারিনি।
শুধু স্পা ফেসিয়াল করা হয় ওই শাখায়। ’ তিনি বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার শুরু থেকেই ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। সেবা নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় গ্রাহক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন। পরে তাঁর স্বামী ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের চাহিদামতো আমরা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে দিই।
কিন্তু কোথা থেকে এত কিছু হলো, বুঝতে পারলাম না। আমার সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। ’
পারসোনাপ্রধান বলেন, ‘এখনো নিয়মিত গ্রাহকেরা পাশে থেকে আমাদের সহযোগিতা করছেন। অন্যায় কোনো কাজ করলে এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত না। রূপচর্চাসেবাকে একটা শিল্পের পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছি।
পেশাদারির একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। তাহলে আমি কেন এখানে নিচুমনের পরিচয় দেব?’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ব্যবহারবিধি নিয়ে আমাদের দেশে কোনো নীতিমালা নেই। অবশ্যই এর জন্য নীতিমালা করা দরকার। ’ তিনি বলেন, ‘যত দিন নীতিমালা হবে না, তত দিন প্রতিষ্ঠানকেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। উন্নত বিশ্বে এ বিষয়ে নীতিমালা আছে।
ক্যামেরা কোন জায়গায় রাখবে, কতটুকু ধারণ করবে, সেটির ব্যবহারবিধিও নীতিমালায় থাকতে হবে। ’
সারা হোসেন বলেন, যে প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করবে, তাদের অবশ্যই উচিত গ্রাহকদের তা জানিয়ে দেওয়া। গ্রাহকের অধিকার আছে এ বিষয়ে জানার। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বা নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া ক্যামেরায় ধারণকৃত অংশ সংরক্ষণের বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।
গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। সে কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাস্তায়ও সিসি ক্যামেরা থাকলে কোনো চিহ্ন দিয়ে তার উপস্থিতি বুঝিয়ে দিতে হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কানিজ আলমাস খান বলেন, পারসোনায় লিখিতভাবে দেওয়া আছে, এটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে বউ সাজানোর আগে ক্যামেরার প্রসঙ্গটি জানানো হয়। কেননা, তাঁরা দামি গয়নার নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান।
’ ভবিষ্যতে গ্রাহকসেবা দেওয়ার আগে গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবেন বলে জানান তিনি।
যৌথ বিবৃতি: গত রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে সেবাগ্রহীতার স্বামী ও পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, এটা নিছক ভুল-বোঝাবুঝির ফল। বিষয়টি ঘটনাস্থলেই মীমাংসা হয়ে যায়। দুই পক্ষ এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকায় কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। কিন্তু পরের দিন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে তাঁরা বিস্মিত, মর্মাহত ও বিব্রত হয়েছেন।
এ নিয়ে যাতে আর কোনো ভুল-বোঝাবুঝি না হয়, সে জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।