মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়
কি ঘটেছিল সেদিন পারসোনায়? কেন এমন করলেন ডাক্তার দম্পতি? কিই-বা ছিল তাদের উদ্দেশ্য? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সৌন্দর্য-পিপাসুদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান পারসোনার স্বত্বাধিকারী কানিজ আলমাস খানের মনে। শুক্রবার পারসোনার বনানী শাখায় ‘স্পা’ রুমে গোপন ক্যামেরা নিয়ে এই ডাক্তার দম্পতি লঙ্কাকাণ্ড ঘটান সেখানে। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। এরপর সবার মনেই প্রশ্ন দেখা দেয়, আসলে কি ঘটেছিল পারসোনার বনানী শাখায়? এসব বিষয়ে প্রখ্যাত বিউটিশিয়ান কানিজ আলমাস খানের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন, সবার মতো আমার মনেও নানা প্রশ্ন। কেন সেদিন তারা এমন করলেন? এর পেছনে রহস্য কি? আমি এর উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি।
তিনি বলেন, পারসোনার বনানী শাখায় কোন ‘স্পা’ নেই। আর যেখানে স্পা নেই সেখানে গোপন ক্যামেরা থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, যে দম্পতি এমন অভিযোগ আনলেন, এমনকি পুলিশও ডেকে আনলেন, তারা তাদের এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি, কোন মামলা দায়েরও করেননি। থানা থেকেও তাদের মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা করতে রাজি হননি।
কারণ একটাই- পারসোনার বনানী শাখায় ‘স্পা’ নেই। ফলে গোপন ক্যামেরার বিষয়টিও তারা প্রমাণ করতে পারবেন না। তাছাড়া পারসোনার ৭টি শাখায় নিরাপত্তার কারণে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু এ ক্যামেরাগুলো মহিলাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষের বাইরে অবস্থিত এবং এ সব ক্যামেরার একটি মনিটর শুধু আমার কক্ষে থাকে, সেখানে একজন করে সৌন্দর্যকর্মী পালাক্রমে ডিউটি করেন গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য। সেখানে পারসোনার মতো প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে তাতে আমি এবং আমাদের পারসোনার ৩৫০০ সৌন্দর্যকর্মী হতভম্ব।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রথম দিন যে সব পত্রিকা এ সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের কেউই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়োজন মনে করেননি। তারা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তাহলে আমি বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারতাম, পারসোনার ইমেজ নিয়ে আমাকে এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না।
কানিজ আলমাস খান, বাংলাদেশের সৌন্দর্য-পিপাসু নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে একজন বিউটি আইকন হিসেবে পরিচিত। পারসোনার প্রধান অফিস ধানমন্ডিতে বসে মানবজমিন-এর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন কানিজ আলমাস খান। তিনি বলেন, খুবই ছোট্ট একটি ঘটনাকে রঙচঙ মাখিয়ে অনেক বড় করা হয়েছে।
ওই দম্পতি কেন এমনটি করেছেন, কি উদ্দেশ্যে করেছেন আমার জানা নেই। কারণ যে ভদ্রমহিলা অভিযোগ করেছেন তিনি আমার ৭-৮ বছরের গ্রাহক। নিয়মিত তিনি পারসোনায় আসেন, সৌন্দর্যচর্চা করেন। সেদিন সিসি ক্যামেরার টিভিতে তার মাথাটা দেখা গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখনই উনার স্বামীকে ফোন করেন।
উনার স্বামী একজন ডাক্তার। কিন্তু ভদ্রলোক এসে এমন আচরণ করলেন, যা ভাবাই যায় না। উনি সিসি ক্যামেরার ডিস্ক নিতে চাইলেন। এ সময় পুলিশ ডেকে আনলেন। পুলিশ ডিস্ক নিয়ে গিয়ে তদন্ত করে দেখে সেখানে কিছুই নেই।
তারপরও পুলিশ তাদের মামলা করতে বললে তারা রাজি হননি। ছোট্ট একটি ঘটনা। কানিজ বলেন, আমরা সুন্দর নিয়ে কাজ করি। মানুষের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে আমাদের ব্রত। অসুন্দর বিষয়টি কখনওই আমাদের মধ্যে কাজ করে না।
একজন নারী হিসেবে আমি নারীদের অসম্মান করার কথা চিন্তাও করতে পারি না। তাছাড়া পারসোনার নারীদের জন্য রক্ষিত কক্ষে কোন সিসি ক্যামেরাও থাকে না। যদি কারও সন্দেহ হয় তাহলে তারা আমাদের ৭টি শাখাই ঘুরে আসতে পারেন। নিজের চোখে দেখে আসতে পারেন যে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ কিভাবে পারসোনার ৩৫০০ সৌন্দর্যকর্মীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। কানিজ বলেন, আত্মবিশ্বাস আমার প্রধান সম্পদ।
আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রমাণ করবো পারসোনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পারসোনাকে তিলে তিলে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছি। আজ পারসোনা একটা ঐতিহ্যের নাম। দেশের স্বনামধন্য অনেকেই আমাদের নিয়মিত গ্রাহক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি আমার প্রতি সপ্তাহের গ্রাহক।
সপ্তাহের অন্তত একদিন তিনি আসেন পারসোনায়, সেবা নেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান বিষয়টি শুনে আমাকে ফোন করে বলেছেন, আপনি জোরালোভাবে এর প্রতিবাদ করুন। দেশের অনেক প্রখ্যাত মডেল, চিত্রতারকা আমার গ্রাহক। তারা ফোন করে আমাকে সাহস যুগিয়ে বলেছেন, প্রতিবাদ করতে, সংবাদ সম্মেলন করতে, তারা আমার পাশে থাকবেন। কানিজ আলমাস খান বলেন, সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জোরালোভাবেই প্রতিবাদ করবো। তার আগে পারসোনার ৩৫০০ বিউটিশিয়ানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে থানায় ডায়েরি করবো। তিনি বলেন, যদিও আমি আমার এবং পারসোনার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত নই, তারপরও আমাকে এসব করতে হবে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন পারসোনার ইমেজ, মানসম্মান নিয়ে খেলা করতে না পারে। তিনি বলেন, আমার দিক দিয়ে আমি খুবই পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। হয়তো সামান্য ঝড় এসেছে।
কিন্তু মিথ্যার বাতাস দিয়ে সৃষ্ট এই ঝড় আমাদের তিলে তিলে গড়া ইমেজকে নষ্ট করতে পারবে না- এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। তাহলে কি কাউকে সন্দেহ করছেন? কানিজ আলমাস খান বলেন, এ পেশায় যারা আছেন তারা সবাই সুন্দর মনের, সুন্দরের পূজারী। এদের মধ্য থেকে কেউ এমন জঘন্য কাজ করতে পারেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে তিনি নিজেদের ক্ষতিই করলেন বলে আমি মনে করি। আজকে পারসোনা কিংবা একজন কানিজ আলমাস খানের ক্ষতি হলে অনেক ছোট ছোট পার্লার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মানুষ বিশ্বাস হারাবে।
তিনি বলেন, সৌন্দর্য চর্চার মতো শিল্পকে সুন্দরভাবে চলতে দেয়া উচিত। কারণ আমাদের পারসোনা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণী বিদেশে চাকরি করছে। অনেক তরুণী ডাক্তারি পাস করেও এখানে এসে সৌন্দর্যচর্চার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অর্থাৎ এটি একটি সম্মানজনক পেশায় রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, পারসোনার মেয়েদের জন্য শাখা রয়েছে ৭টি, পুরুষদের জন্য ৪টি।
ধানমণ্ডি, গুলশান ১ ও ২, বনানী, উত্তরা, মিরপুর এবং চট্টগ্রামে পারসোনার শাখা রয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছরের সাধনা আর গ্রাহকদের ভালবাসায় বড় হয়ে ওঠা পারসোনাকে কখনওই এই রকম বিব্রতকর বিষয় স্পর্শ করেনি। কখনও করতে পারে- এমনটি ভাবতেও পারিনি। তিনি বলেন, আমাদের কাজের সমালোচনা হতে পারে। আমাদের কাজ কারও ভাল না-ও লাগতে পারে।
কিন্তু এত নোংরা একটা অভিযোগ, কল্পনাও করতে পারছি না। তারপরও মাত্র দু’জন মানুষ কেন এমন করলেন? আমরা তাদের কি ক্ষতি করেছি? আমি মনে করি- না জেনে, সত্যের সন্ধান না করে, মিথ্যার পিছনে ছুটে কাউকে এমন কষ্ট দেয়া উচিত নয়। কানিজ আলমাস খান বলেন, আমি কষ্ট পেলেও আমার মনোবল নষ্ট হয়নি। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগে পারসোনার গ্রাহক কমে যাবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তার কিছুই হয়নি।
আমাদের গ্রাহকরা ফোন করে এসএমএস দিয়ে, ফেসবুকে কমেন্ট দিয়ে লিখেছেন, আমরা পারসোনাকে মায়ের কোলের মতো নিরাপদ মনে করি। আমাদের ৩৫০০ কর্মী আমাকে বলছেন, আমরা পারসোনার সঙ্গে আছি, আমাদের কষ্ট আর পরিশ্রমে গড়া এই প্রতিষ্ঠান কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। মানুষের আস্থা আর ভালবাসা না পেলে এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। গ্রাহকের আস্থা আর ভালবাসাই আমাদের প্রধান শক্তি। তারপরও আমরা সতর্ক রয়েছি।
পারসোনা মানুষের সৌন্দর্য নিয়ে কাজ করে। এই পারসোনার বিরুদ্ধে কারও অসুন্দর ভূমিকাকে আমরা প্রশ্রয় দেবো না। তবে এ ঘটনার নেপথ্যে কি ছিল তা আমরা উদঘাটন করেই ছাড়বো। আমার বিশ্বাস সত্য চিরদিনই সত্য এবং সেটি প্রমাণিত হবে শিগগিরই।
লিঙ্ক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।