মা মাটি মানুষকে ভালোবাসি-এই মিথ্যে কথাটা বলতে আর ভালো লাগে না! অনুচ্চাকাঙ্ক্ষী, দৃঢ়, সত্য প্রকাশে অনঢ়... ঢাকা রেজেন্সি হোটেল প্রিমিয়ার ক্লাবের প্রোগ্রাম ম্যানেজার। এর আগে ওয়েস্টিন এবং হোটেল শেরাটনেও কর্মরত ছিলো সে। পুরো নাম জামিল হোসাইন। তার ম্যানেজারগিরির নমুনাও দেখার মতো। এক পাশে ভদকা, আরেক পাশে নারী।
হোটেলের লবিতে টেম্পটেশন নাইটের প্রতিটা ডিজে পার্টিতে তার উদ্দাম নৃত্য, পাশ্চাত্যের নগ্ন আবহ আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় এক অন্য বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। যেখানে বাংলাদেশের নারীরা বিদেশী অতিথিদের সাথে নাচে-গায়, তাদের ব্যক্তিগত কামরায় যৌনচাহিদার খোরাক যোগায়। ব্যাপারটাকে হয়তো আমরা স্বাভাবিকভাবেও নিতে পারি। একজন বিদেশী আমেরিকান তার মু্ক্ত যৌনতা চর্চার (ওপেন সেক্স) দেশ থেকে বাংলাদেশে আসলেও কলগার্ল খুঁজবে সেটা স্বাভাবিক। তবে আশ্চর্য তখনই হতে হয়, যখন সে এ টাইপের বেশ কয়েকজনকে পেয়ে যায় পাঁচতারা হোটেলের লবিতে বা জামিল হোসাইনদের মতো কুলাঙ্গারদের সহায়তায়, যারা বিদেশি অতিথিদের যত্ম-আত্তির ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতায় ২৪ ঘন্টা তাদের দুয়ার খোলা রেখেছেন।
এর সাথে জড়িত রয়েছে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট ব্যক্তিত্ববৃন্দ যাদের নরক-ছোবলে সংস্কৃতির সাথে সাথে ডুবে যাচ্ছে আমাদের পুরনো এথিকসগুলো। জামিল তার বান্ধবী(স্ত্রী নয়) নাতাশা ফৌজিয়া মালিককে দিয়েও বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কাজ করিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। প্রায় প্রতিটি পার্টিতেই অনিন্দ্য সুন্দরী এই নারী উপস্থিত থাকে এবং আনন্দের খোরাক যোগায়।
বিদেশি অতিথিদের খেদমতে তৃপ্ত দালাল জামিল হোসাইন
ঢাকা রিজেন্সি হোটেল
শহরের প্রায় সব ধরণের (বিশেষত নারী ডিজে) উপস্থিত থাকে মিউজিক্যাল এফেক্ট এর জন্য। পার্টি হয়।
মধ্যরাত অবধি পার্টি চলে। মদ-ইয়াবা সহযোগে চলে পার্টি। পার্টি শেষে অবাধে অবৈধ কার্যকলাপ চলে(এমন না যে পার্টির সময় কিছু হয় না!)। তবে সবাই বেশ উন্মুক্ত। স্বাধীন।
সমাজ অনেক আগেই বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল ভোগ করবে, খাবে-দাবে, মলত্যাগ করে চলে যাবে। আরেকদল সেই মল-মূত্র পরিষ্কার করবে। কোনো অঘটন ঘটলে পুলিশ আসবে। মন্ত্রী-এমপির নির্দেশে পুলিশও এদের পা চাটা দিয়ে চলে যাবে।
জামিল ও তার বান্ধবী
অপরাধ সনাক্ত করতে প্রমাণ লাগে। যখন সবাই ইচ্ছা করেই সেক্স জিনিসটাকে বিজনেস এর পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তখন এখানে অপরাধ টা কোথায়?
আছে। অপরাধ হলো, এ ধরণের পার্টিতে গিয়ে যদি কোনো ভদ্রঘরের মেয়ে কোনোভাবে বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয়। কিংবা জোরপূর্বক যদি কাউকে হাই-সোসাইটির কল গার্লের কাজ করাতে বাধ্য করানো হয়। এসব পাঁচতারা হোটেলের সাথে অভিনেত্রী-মডেলদের যে অন্তঃসংযোগ রয়েছে সেটা তো আর নতুন কিছু না! মিডিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী অনেকেই চলে আসছে এ ব্যবসায়।
কম পরিশ্রম, আয় বেশি- এ ধরণের কথা আমস্টারডাম, পাতাইয়া বা লাস ভেগাসের বারবনিতারা বলে। বাংলাদেশের এই পেশার সাথে যারা জড়িত তারাও কী একই মন-মানসিকতার? জানা নেই্। শুধু এটুকু জানা আছে এইসব জামিল হোসাইনদের অবৈধ কীর্তিকলাপ বন্ধ করতে হবে। এইসব নগ্ন সংস্কৃতি আমাদের সাথে যায় না। তার মানে এই না গান-বাজনা বন্ধ করে দিতে হবে, পার্টি চলবে না।
তার মানে এই যে, বেশ্যার দালালি বন্ধ করে দিতে হবে। মাদকব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে এসব জায়গায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সাদা পোশাকে যেন কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরণের বেশ কিছু পার্টি থেকে ইয়াবা, আইস পিল পাওয়া গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার এসব জায়গায় সাদা পোশাকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে (সূত্র : সাপ্তাহিক ২০০০)।
কলগার্ল এর লিস্ট জব্দ করেছে। পরে কী হয়েছে? জানা নেই... টাকা-পয়সা-ঘুষ...
আপনারা কি বলেন? যদি এ ধরণের আগ্রাসন আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে এই প্রতিবেদকেরও ড্যাম কেয়ার হয়ে থাকাটাই শ্রেয়। কিন্তু এসব যে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না, সমাজে-সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে না, মাদক-ব্যবসা বৃদ্ধি করে না, এর গ্যারান্টি কি আপনি দিতে পারবেন? হোটেল পূর্বাণীর মালিক জয়নাল সম্পর্কে কেউ ভেবেছিলো যে সে একজন ড্রাগ কিংপিন? RAB এর হাতে জয়নাল-নিকিতা গ্রেপ্তার হবার পর আমরা ইয়াবার সেই ভয়ংকর অধ্যায় জানতে পেরেছিলাম। এখন গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়। সবকিছুর পেছনেই কি একটা অদৃশ্য সরকারি হাত থাকে? যে কারণে এরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে....
সত্যিই সেলুকাস! বিচিত্র এই বাংলাদেশ!
তথ্যসূত্র :
ঢাকা রেজেন্সি হোটেলের টেম্পটেশন নাইট পার্টিতে অংশ নেয়া একদল তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে সংগৃহীত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।