অতি সাধারণ। লাবণ্যদের এই চারতলার ফ্ল্যাট থেকে আড়াআড়িভাবে বেকে যাওয়া ব্যস্ত মোড়টা স্পষ্ট দেখা যায়। সারাক্ষণ সেখানে হইচই ব্যস্ততা লেগেই থাকে। লাবণ্য তাই এপাশের বারান্দায় খুব একটা আসে না। লাবণ্য’র বাবা রহমান সাহেব সরকারী চাকুরী থেকে রিটায়ার্ড করার পর প্রতিদিন বিকেলে এই বারান্দায় বসে চা খান।
এই বারান্দার বিশেষ দিক হল,এই বারান্দা থেকে সামনের খোলা আকাশটা খুব ভাল দেখা যায়। লাবণ্য’র ঐ খোলা আকাশটা খুব ভাল লাগে। কিন্তু এ বারান্দাটি রাস্তার খুব পাশে হওয়ায় বাবার নিষেধ এখানে বেশিক্ষণ না দাঁড়ানো। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় লাবণ্যের খুব মন খারাপ,তাই বারান্দায় খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবণ্য কোন এক বইতে পড়েছিল,খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মন ভাল হয়ে যায়।
লাবণ্য মাস্টার্স শেষ করেছে অনেকদিন হল। ছোট-খাটো একটি ফার্মে চাকুরী করছে কিছুদিন। কিন্তু ওর সাথের সব বান্ধবীরা বিয়ে-শাদী করে এখন ঘর-সংসার করছে। ওর বাবা,রহমান সাহেবের প্রধান অভিযোগ এটি। মা মারা যাবার পর থেকে দু-ভাই বোনকে রহমান সাহেব মানুষ করলেন।
ছেলেটা বিদেশে পড়তে গিয়ে ওখানেই সেটল হল। এখন মেয়েটাকে নিয়েই রহমান সাহেবের যত চিন্তা। তাই রহমান সাহেব আজ এ বিষয়ে আবার কথা বলার জন্য লাবণ্য অফিস থেকে ফিরলেই ডেকেছিলেন। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল,বাবা বলে গেলেন আর মেয়ে শুনে গেল আর চোখের পানিতে বুক ভাসাল।
লাবণ্য যখন সবেমাত্র ভার্সিটির কোঠায় পা দিয়েছে তখন থেকেই শাহেদের সাথে লাবণ্যের পরিচয়।
শাহেদ ছাত্র হিসেবে ভাল হওয়াতে লাবণ্যের মন জয় করে নেওয়ার জন্য খুব বেশি কষ্ট হয়নি। দীর্ঘ চার বছর ওদের সম্পর্ক,সবকিছু ভালই যাচ্ছিল। অনার্স শেষ হওয়ার পর শাহেদ স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেল। যাওয়ার আগে লাবণ্যকে শাহেদ কথা দিয়েছিল মাস্টার্স শেষ হলেই দেশে ফিরে বিয়ে করবে ওরা। ছ’মাস সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু তারপর শাহেদ হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিল।
লাবণ্য অনেক চেষ্টা করেও শাহেদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না। তারপর ওর অনেকদিন মনে হয়েছে শাহেদ হয়তো কোন কারণে ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা। কিছুদিন আগে ওর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বান্ধবীর কাছে জানতে পারল ওখানে শাহেদ এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে।
লাবণ্য এই ঘটনার জন্য পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ জাতিকে বিশ্বাসঘাতক বলতে চায়,কিন্তু পারে না। মা মারা যাবার পর ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করতে পারতেন,পারতেন মায়ের সব স্মৃতিগুলোকে ধুয়ে-মুছে নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে।
কিন্তু তিনি তা করেন নি,ছেলে-মেয়ে দুটোকে আগলে রাখলেন সারাটা জীবন। তাই সমগ্র পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করা শোভা পায় না।
লাবণ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে যখন এসব চিন্তাগুলো মনে-মনে আওড়াচ্ছিল ঠিক তখনই ওদের সামনের মোড়টায় কিছু মানুষের হইচই আর জটলা দেখতে পেল। দেখল কয়েকজন মানুষ ওর বাবাকে ধরাধরি করে ওদের বাসার দিকে নিয়ে আসছে। দেখেই লাবণ্য তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নিছে নেমে গেল।
ড্রইং রুমে এনে ওর বাবাকে শুইয়ে দেওয়া হল। পাশের বাসার ডাক্তার আংকেল এসে বাবার নাড়ি পরীক্ষা করে দেখে বললেন খুব,দেরি হয়ে গেছে। লাবণ্যর বুঝতে আর বাকি রইল না,ওর বাবা আর বেচে নেই। লাবণ্য কিছুক্ষণ আগে ওর বাবার জন্য সারা পৃথিবীর পুরুষদের বিশ্বাসঘাতক বলতে পারেনি। এখন ওর বাবা আর বেচে নেই,এখন কি ও পারে না বিশ্বাসঘাতক বলতে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।