ক্ষেতা পুড়ি তোর ভালবাসার- ফিরিয়ে দে আগের সহজ জীবন আমার। ।
আরিফ জেবতিক এই চিঠিটা লিখেছেনঃ শাপলা চত্বরের এক নাম না জানা তরুণের কাছে শাহবাগ চত্বর থেকে খোলা চিঠি
আসসালামু আলাইকুম আরিফ জেবতিক।
আলহামদুলিল্লাহ্ ভাই আমি তোমার লেখা চিঠিটা পেয়েয়েছি, আশা করছি তুমি সহি-সালামতেই আছ।
ভাই তুমি বলেছ যে, আমি যখন মহাখালিতে নামি তখন আমার চোখে যে ভয় খেলা করেছে তা তুমি দেখেছ।
সত্যি ভাই ভয় ছিল আমার চোখে, এমন কি আমার অন্তরেও। তোমরা যে হাজার হাজার মেটাল বুলেট কিংবা জেল-রিমান্ড আমাদের জন্যে রেডি রেখেছিলে- ভয়টা সে জন্য ছিল না। ভয়টা ছিল না জানি আমি এই ঈমানী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে যাই। সামান্য এই “জীবন-প্রেম”টাই না আবার “রসূল প্রেম” থেকে বড় হয়ে দেখা দেয়। ভাই আমার কাছে আমার বিশ্বাস (ঈমান)টা সব থেকে বড়-এই জীবন থেকেও।
তাই তো সরকার প্রধান যেদিন তোমার উপর রুষ্ট হল, সেদিন তুমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পালিয়ে গেলে। আর আমি সরকারের রক্ত চোখ উপেক্ষা করে, তোমার মুরুব্বিদের হরতাল, তোমার অবরোধ উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছি তোমাদেরি বুলেটের সামনে।
ভাই তোমারা ব্লগ লেখ, তোমারা মক্তমনা ও মুক্ত মুখের ভাষার অধিকারী, আমি আকাট মুর্খ। কিন্তু দেখ তুমি কত কম জান। আমাদের অনেকেরই পিতা মাতা বেচে আছেন (আল্লাহ তাদের হায়াত বৃদ্ধি করুক)।
আমারা তাদের জন্য প্রতি নামাযের পর দূয়া করি আল্লাহ আমার পিতা মাতা আমাকে শৈশবে যেমন আদর করে লালন পালন করেছে আপনি তাদের তেমন করে লালন পালন করুন। কিন্তু দেখ ভাই তুমি কত কম জান। আমাদের সবাইকে তুমি নিতান্তই এতিম বানিয়ে দিয়েছ। তোমরা বড় হয়েছ প্রাচূর্যে, আর আমারা খূদ-চিড়া, ভিক্ষায় চাল খেয়ে। কিন্তু দেখ ভাই তুমি কত কম জান।
তুমি বলেছ তোমার বাবাকে তারা মেরেছে পুকুর পাড়ে। আর তারা আমার দাদাকে মেরেছে জায়নামাজে কোরআন পড়ারত অবস্থায়। ঘর থেকে টেনে নিয়ে গেছে আমার সোমত্ত ফুফুকে। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে সেই অগ্নি ঝরা একাত্তরে আমি যেমন আসছিলাম ঢাকাতে আমার ছোট চাচাও তেমন আসছিলেন বাড়িতে আমার মত তাকেও তল্লাশি করা হয়। তারপর আমার চাচাকে মেরে ফেলে হায়না পাকিস্তানি বেজন্মাগুলোর সহযোগী রাজাকাররা।
দেখ ভাই তুমি কত কম জান। তোমার তাদের সাথে ৮৬ তে না কবে জানি জোট করলে কবে জানি ক্ষমতায় যাবার আন্দোলন করলে, কিন্তু আমারা কিন্তু তাদের জন্মের পর থেকেই ঘৃনা করাতাম।
এই ফেব্রুয়ারিতে তোমারা যখন শাহাবাগে সমেবেত হলে আমারা কিন্তু তোমাদের বাধা দেই নাই। বরং দোয়া করেছি। দাড়ি-টুপি নিয়ে আমাদের অনেকে কিন্তু সেখানে গিয়েছিল।
তোমার চোখ মনে হয় সেদিকে যায়নি। তোমারা তখন আকাশে উরছিলে মাটিতে চোখ যাবে কেমন করে?
তারপর তোমাদের অইখানে আমরা যখন কিছু কালপ্রিটকে দেখালাম একাত্তরের রাজাকারদের মত আমারা বললাম তোমরা তাদের বের করে দাও, কিন্তু তোমরা তা করলে না। তাদের বাচাতে এগিয়ে এলে। আমরা বারবার বললাম যে তোমাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নাই, আমারাও যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। তারপরো তোমরা তাদের সজ্ঞ ছাড়লে না।
তোমরা কি এতই দূর্বল, যে তাদের ছাড়া তোমরা অচল হয়ে পড়তে। বাংলার সব মানুষ ছিল তোমাদের সাথে। তোমরা অপরের কাদা নিজের গায়ে লাগিয়ে আনন্দ পেলে, তোমাদের ফেইসবুকে-ব্লগে হাসাহাসি শুরু করলে মুর্খ গরিব ভুখা নাঙ্গা এতিমরা তোমাদের নাস্তিক বলেছে। তোমরা নিলে একে ক্রেডিট হিসেবে।
ভাই তোমরা আলোচনা করতে চেয়েছিলে কিন্ত একবারও তো সে কালপ্রিটদের যারা তোমাকে আমাকে মুখোমুখি দাড় করিয়েছে তাদের প্রতি ঘৃনা জানালে না।
বরং আপ্রান চেষ্টা করলে তাদের সাধু প্রমান করতে। তবে তোমাদের সাথে আমরা আলোচনা করি কিভাবে। একবার খালি তাদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করতে দেখতে এই মুর্খ গরিব ভুখা নাঙ্গা এতিমরা তোমাদের জন্য কী করত।
ভাই তোমরা যেমন চেয়েছ সোনার বাংলাদেশ গড়তে তেমন আমিও চেয়েছি। মনে হয় তোমার থেকে বেশি করেই চেয়েছি।
কারন তুমি ইচ্ছা করলে চলে যেতে পারবে অন্য কোন দেশে (তোমাদের অনেকে অলরেডি চলে গেছে), সে সামর্থ তোমার আছে, আমার নেই।
তোমার মত করে আমিও চেয়েছি আমার পিতৃপুরুষের সন্মান। আমি চাইনি আমার আমার দাদার মত জায়নামাজে আমার পিতার মৃত্যু হক কিংবা তার জায়নামাজে বসা নিয়ে কেউ হাসি-তামাশা করুক। ভাই আমি তোমার অসমাপ্ত কাজটিই পূর্ন করতে চেয়েছি মাত্র।
কিন্তু তুমি কি করলে আমাকে তালেবান, যুদ্ধাপরাধীর দোসর, ধর্মগাধা কত কী বানাতে চাইলে।
চেষ্ট্রা করলে দূর্বল করতে আমার বিশ্বাস। ভাই আমার তোমাদের মত মুক্তমনা নই। আমার মনটা ছোট। আমাদের সাধ্য নেই তোমাদের মত নাইট ক্লাব, বারে যাবার, আমরা ব্লগ পড়িনা-লিখি না, চটি লিখি না। আমাদের পৃথিবীটা ভীষন ছোট।
আর এই ছোট মন আর পৃথিবীটা জুড়ে আছে আল্লাহ-নবীর প্রেম। তাই সকল অপপ্রচারে রইলাম অটুট। আমার দৃঢ় মনোবল দেখে তুমি আমাকে প্রতিরোধের ডাক দিলে। তোমার সরকারি ক্ষমতা দিয়ে আমার গাড়ি বন্ধ করলে, আমাকে দাড় করালে এনে নগ্ন বুলেটের সামনে।
ভাই তোমরা অনেক বুঝ।
কোরআন হাদিস নাকি ,আমাদের থেকেও বেশি গবেষনা কর, ফেইসবুকে তা নিয়ে লেখ। ভাই তবে বল একে কি মুনাফেকী বলে না?
ভাই বলে ডেকেছ, কিন্তু দেখ তোমার সমস্ত চিঠি জুড়ে রয়েছে আমার প্রতি নিদারুন অবজ্ঞা। আমারা গরিব তোমার মত প্রাচুর্য পাইনি। তবে আমার আবার আন্দোলনের অধিকার কী?- ব্যাপারটা যেন এমনই। ভাই তবে বল একে কি মুনাফেকী বলে না?
ভাল থেকো ভাই।
ফী-আমানীল্লাহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।