ওয়াসিকুজ্জামান অনি
মেট্রিক পাশ না করলে নাকি গাড়ীর লাইসেন্স দেয়া হবেনা এমন করে নিতীমালা করা হচ্ছে শুনলাম। তার সাথে নানা কারন নির্নয় করা হয়েছে যা মুখ্য ভুমিকা রাখে সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে। সব মানলাম কিন্তু মনে হচ্ছে আসল জায়গাটা খুব চতুরতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হলো, সব দোষ চালকদের বা গাড়ীমালিকদের ওপর চাপানো হলো। আমি দীর্ঘদীন ধরে নিজে গাড়ী চালাই, তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় চালক মালিকদের সাথে এই ত্রুটীগুলো বরং সড়ক দুর্ঘটনায় আরো বেশী প্রভাবক হয়ে দাড়িয়েছে-
১. ভালো ব্রেকিং এর জন্য যে অমসৃণ রাস্তা তৈরী হচ্ছে তা শুধু ট্রাক বা বাসের মত বড় থ্রেডের চাকার জন্য ভালো, ছোট চাকার গাড়ী যেমন কার বা মাইক্রবাসের এত বড় থ্রেড হয়না ফলে আকষ্মিক ব্রেক করলে গাড়ী স্কীড করে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
২. দেশের সব হাইওয়ে টুওয়ে, যা প্রায়শই দুটি গাড়ীকে মুখোমুখী করে দেয় এবং এতে ওভারটেকিং খুবি ঝুকিপূর্ন।
৩. হাইওয়ের পাশে যত্রতত্র দোকানপাট, বাজার গড়ে ওঠার ফলে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এর সাথে যেখানে সেখানে ট্রাক বা বাস পার্কিং করে রাখার ফলে রাস্তা সরূ হয়ে দ্রুতগামী গাড়ীকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
৪. হাইওয়েতে নির্দ্বিধায় রিকশা, ভ্যান, পাওয়ার টিলার, টেম্পু ইত্যাদি ধীরগতির যানবাহন চলছে যার ফল্র দ্রুতগামী যানবাহন চালানো খুব দুস্কর হয়ে যাচ্ছে।
৫. প্রতিটি মোড় বা রেল ক্রসিং ইত্যাদিতে সাধারন যানবাহন যেমন বাস, টেম্পু ইত্যাদি রেখে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা রেখে দুরপাল্লার যানবাহনকে অযথা দেরী করিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং এর ফলে চালকেরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন ।
৬. ট্রাকগুলোর ওজন মাপার ব্যবস্থা চিরকাল নষ্ট করে রাখার ফলে ৫/৭ টন বহন করার কথা থাকলেও ট্রাকগুলো নিম্নে ১০টন এবং উর্ধে ২২/২৩ টন পর্যন্ত বহন করছে।
অবধারিত ভাবে রাস্তা এই পরিমান লোডের কথা ভেবে তৈরী না হবার ফলে প্রতিটি জেলা শহর হতে বেরুবার রাস্তায় দেখা যায় বাম দিকের রাস্তা ভেঙ্গে গেছে বা ডেবে গেছে। এই ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দুর্ঘটনা ঘটার পিছনে অন্যতম একটি কারন।
৭. দেশের সব হাইওয়েতে দেখা যায় যে অসংখ্য পুল, কালভার্ট ও ব্রীজ রয়েছে, এবং এর প্রতিটি এপ্রোচ এমনভাবে তৈরী যে রাস্তার থেকে তা অসমান বা গ্যাপ রয়েছে যার ফলে গাড়ীগুলো এখানে উঠতে গিয়ে হঠাত ব্রেক করতে হয় এবং প্রায়শই দুর্ঘটনায় পড়ে, এছাড়া এগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে যে বড় আকারের দুটো গাড়ী কোনভাবে ক্রস করে তাই সামান্য ভুলচুক হলেই ঘটে বড় দুর্ঘটনা।
৮. রাস্তায় যত্রতত্র স্পীড ব্রকার তৈরী করা হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় উঁচু এবং তাতে না আছে কোন সাইন বা আলাদা রঙ করা। ফলে অনেকসময় দ্রুতগড়ীর গাড়ী বেকায়দা অবস্থায় পড়ে এবং অবধারীত ভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে।
৯. বিশ্বের সব দেশে রোডসাইনগুলো খুব গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু আমাদের দেশে হাইওয়েতে রোডসাইনের তেমন কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে হয়না। অপ্রতুল রোডসাইন চালককে রাস্তার ব্যাপারে সম্যক ধারনা দিতে পারেনা।
১০. বিশ্বের সব দেশে অতিবৃষ্টি বা কুয়াশার সময় রাস্তায় ফ্লুরোসেন্ট রঙ্গে মধ্য রেখা ও দুই পার্শে ফগলাইন দেয়া হয় যা অল্প আলোতে বা বাধাপ্রাপ্ত ভিশনেও গাড়ী চালাতে প্রচন্ড সহায়তা করে। আমাদের দেশেও এটা দেয়া হয়, কিন্তু রাস্তা তৈরীর সময় দেয়া হয় যা আর পরবর্তীতে রিপেয়ার করা বা নতুন করে দেয়া হয়না যার ফলে হাইওয়েতে গাড়ীগুলো লেন মেইন্টেন করতে বা কিনারার ঝুকীপুর্ন এলাকা বুঝতে পারেনা, এর ফলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
১১. রাতে চলা দুরপাল্লার বাস বা ট্রাকেরা দুইটি হেডলাইটের স্থলে ৩ থেকে ৬ টি হেডলাইট ব্যবহার করে, যার ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা ছোট গাড়ী রাস্তার কিছুই প্রায় দেখতে পায়না, আন্দাজের উপর চালাতে হয় তখন, এমনবস্থায় যদি হঠাত ভাঙ্গা রাস্তা বা সামনে কোন মানুষ বা কিছু পড়ে তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
১২ . আমাদের দেশের হাইওয়েতে যত্রতত্র মানুষ বা গরূছাগল, কুকুর ঘুরে বেড়ায়, এদের কারনে যে কত দুর্ঘটনা ঘটে তার কোন ইয়াত্তা নেই। দুর্ঘটনা হলে চালক এর বা মালিকের সাজা হয়, গাড়ীর ক্ষতি হয় কিন্তু কখনোই হাইওয়েতে নিজের বাড়ীর উঠান মনে করে ঘুরে বেড়ানো মানুষ বা গরুছাগল মালিকের সাজা হয়না।
এছাড়াও এধরনের আর নানা কারনে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে, যার জন্য আসলে শুধু চালক বা মালিক একাই দায়ী নন। তাই এসব ব্যাপারে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব, আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ এসব জিনিষ খেয়াল করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।