https://www.facebook.com/tanvir.mh উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা "মহসিন"।
অফিসে যাওয়ার জন্য আজ খুব তাড়াহুড়া তার। তার বউ "কেয়া" যেতে মানা করলো।
-আজ না গেলে হয়না? ছেলেটার জে এস সি পরীক্ষা চলছে।
-না আজ জরুরী মিটিং আছে।
এমাদ রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করছে। সে আমার বাইকে যাবে।
-আচ্ছা যাও। কিন্তু খেয়ে যাও। আমি ভাত বসাচ্ছি।
-তুমি বাচ্চার দিকে খেয়াল রেখো আমি এসে খাবো।
-কেন এমন করো? খেতে তো ১০ মিনিট লাগবে।
কেয়ার আকুতি মিনতিতে অল্প কিছু ঠাণ্ডা ভাত খেল সে। কিন্তু ভাত রান্না করতে পারেনি খুব খারাপ লাগছে কেয়ার।
বাইক স্টার্ট দিতেই এমাদের চিৎকার।
-কি ব্যপার এত দেড়ি কেন?চাকরি তো থাকবেনা।
-আরে দেড়ি হয়ে গেলো একটু খেতে গিয়ে।
২জন মিলে অফিসের দিকে ছুটছে। মহসিনের মাথায় অনেক দুশ্চিন্তা। ছেলেটার পরীক্ষা,অফিসের ঝামেলা সহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে।
একটা সিএনজির পিছু পিছু তার বাইক চলছে। আস্তে আস্তেই বাইক চালায় মহসিন। পেছন থেকে এমাদ কি যেন বলছে একটু পর পর তা আর কানে আসছেনা মহসিনের। হয়তো সে আরও দ্রুত যেতে বলছে। অনেক্ষন সিএনজির পেছনে থেকে সময় অপচয় হচ্ছে মনে করে সিএনজিকে ক্রস করে সামনে যেতেই আচমকা সামনে এসে পরে যায় একটা বাস।
যা সে খেয়ালই করেনি। বাসের ধাক্কা আর নিজের বাইক এর চাপে ২ জন ছিটকে রাস্তায় পরে যায়। বাসের ড্রাইভার বাসসহ ভয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। মহসিনের একটি পা মোটামূটি শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। ২জনই আহত অবস্থা পরে থাকে অনেক্ষন।
আশেপাশে অনেক গাড়ি যায় মানুষ যায় কিন্তু কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনা। সবার মনে ভয় "যদি আমার সমস্যা হয়?"।
৩০মিনিট রাস্তায় পরে থাকে ২ টি দেহ। আহত পাখির বাচ্চার মত একটু আশ্রয় চাচ্ছিলো। একটু সাহায্যের আশায়,একটু বেচে থাকার তাগিদে।
কিন্তু মানবতাবাদী কোন মানুষও হাত বাড়ায়নি একটু সাহায্যের।
বাসের ড্রাইভার না হয় জানের ভয়ের পালিয়েই যাবে। তাই বলে বাসের ভেতর থেকে কেউ বাসটি থামিয়ে এগিয়ে আসতে পারলনা?
শেষমেশ একটু স্কুলের ছেলে দৌড়ে আসে। মহসিন তার মোবাইলটি ছেলেকে দিয়ে একজনকে ফোন দিতে বলে,আর বলে আমাকে একটু পানি এনে দাও।
তখনও মহসিন কথা বলতে পারছিলো।
স্কুলের ছেলেটির সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ২ জনকেই। অনেক রক্তক্ষরণের কারণে মহসিনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। ঐদিকে এমাদের অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক। ততক্ষণে মহসিনের অফিসের সব স্টাফ,পরিবার সবাই জেনে যায়। ডাক্তার বলে রক্ত লাগবে অনেক।
রক্ত দেয়ার লোকের অভাব হয়না। একজনের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মহসিনের শরীরে দেয়ার সাথে সাথেই নিভে যায় মহসিনের প্রান।
(এটি একটি সত্যি ঘটনা। গত মাসের ৩১ তারিখে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহসিন আগরপুর বাস স্ট্যান্ড এর কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। )
কিছু কথা না বল্বলেই নয়।
বাইক আমরা অনেকেই চালাই কিন্তু কয়জন সাবধানতা অবলম্বন করি? একজন মানুষ একটা বটগাছের মতই,তার আশেপাশে অনেকগুলি মানুষ জড়িয়ে থাকে। নিজে বিদায় নিয়ে নিলেও আপন মানুষগুলি বেচে থাকে কষ্ট নিয়ে। আর মানুষ কি আসলেই মানুষের জন্য নাকি এ কেবলই গানের কলি? মহসিন কে যদি খুব দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যেতো তবে হয়তো সে বেচে থাকতো। কিন্তু না, একটি জীবন বাচাতে সামান্য একটু ঝামেলায় ও কেউ জড়াতে চায়না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।