আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মওদুদ সুবিধাবাদী রাজনীতিক

সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে ২০০৫ সালের ১১ মে ওয়াশিংটনে একটি তারবার্তা পাঠান ঢাকাস্থ তত্কালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস। মার্কিন সরকারের কাছে পাঠানো ‘গোপনীয়’ শ্রেণীভুক্ত ওই তারবার্তায় খালেদা জিয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ‘অকার্যকর সিস্টেম’ বলে উল্লেখ করা হয়। তারবার্তায় বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া খালেদার ‘ইনার’, ‘মিডল’ এবং ‘আউটার’ এই তিন সার্কেলের কয়েকজন মানুষের কব্জায়। এই তিন শ্রেণীর মানুষগুলোর নামও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।

সংক্ষেপে তাদের সম্পর্কে কিছু বর্ণনাও পাঠান। অন্যান্যদের সঙ্গে তত্কালীন আইন মন্ত্রী মওদূদ আহমেদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লেখেন, এই আইনজীবী ভদ্রলোক রাজনৈতিক সুবিধাবাদী একজন লোক। আর তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান সম্পর্কে তিনি লেখেন, খালেদার এই কুখ্যাত পুত্রই তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি। বিশ্বব্যাপী তোলপাড় ফেলে দেয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস যে আড়াই লাখ তারবার্তা ফাঁস করে দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এই তারবার্তাটিও আছে। তারবার্তায় তত্কালীন আইনমন্ত্রী মওদূদ আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘আউটার সার্কেলের’ মানুষ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়।

মওদুদ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে এতে লেখা হয়, সরকারের বিভিন্ন বিতর্কিত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এই সুবিধাবাদী রাজনীতিকের উপর নির্ভর করা যায়! সেটা হতে পারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ইনিয়ে বিনিয়ে জায়েজ করার চেষ্টা কিংবা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার কাজ অনির্দিষ্টকাল ঝুঁলিয়ে রাখা! আইনের খসড়া তৈরী ও সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারে তার ভূমিকাই মুখ্য। তার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যায়। আমাদের প্রতি সহযোগীতার মনোভাবসুলভ আচরণ করে থাকেন। ‘ইনার সার্কেল’ শ্রেণীভুক্ত তারেক রহমান সম্পর্কে ওই তারবার্তায় লেখা হয়, তিনি খালেদার কুখ্যাত জ্যেষ্ঠ পুত্র। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের ক্রেডিট তাকে দিতেই পছন্দ করে তার অনুগতরা।

তিনি নিষ্ঠুর, ভাবনার অতীত দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, স্বল্পশিক্ষিত। তবে স্তুতিকারীদের মতে তিনি স্মার্ট, প্রাণবন্ত এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের একটি ‘মুখোশ’ পেয়েছেন তার মায়ের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকার সুবাদে। হাওয়া ভবন থেকে তিনি ছায়া সরকার চালাচ্ছেন। বিশেষ করে সরকারি নিয়োগ এবং দরপত্র ‘ক্লিয়ারিং’ হয় তার মর্জিমতো।

তার ব্যবসায়িক চলার পথে কেউ কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে তার প্রতি তিনি নির্মম হতে পিছপা হন না। তারবার্তার ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার সরকারের ইনার সার্কেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, হারিছ চৌধুরি, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাঈদ ইস্কান্দার, লুত্ফুজ্জামান বাবর, কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, সাইফুর রহমান এবং তত্কালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন। বার্তায় খোন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে উল্লেখ করা হয়। খালেদা জিয়ার ‘মিডল সার্কেল’ সম্পর্কে লেখা হয়, এই শ্রেণীতে আছেন রিয়াজ রহমান, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ হায়দার, মীর নাসিরউদ্দিন এবং মতিউর রহমান নিজামী। মোসাদ্দেক আলী ফালু সম্পর্কে তারবার্তায় লেখা হয়, ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ত্যাগ করার পর তিনি ‘ইনার সার্কেল’ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।

২০০৪ সালের ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন সম্পর্কে লেখা হয়, ওই নির্বাচন ছিল ‘কারচুপির মহোত্সব’। অন্যদিকে, তারবার্তা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ‘আউটার সার্কেলের’ সদস্যরা ছিলেন মওদুদ আহমেদ, মান্নান ভূঁইয়া এবং মোরশেদ খান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।