নামে কি সত্যিই কিছু যায়-আসে? হয়তো আসে। হয়তোবা নয়। বিশেষত রাজনৈতিক দলের নাম। নামেই পরিচয় এবং উদ্দেশ্য প্রকাশিত। নীতি কী, কর্মপন্থা কী নামেই নিহিত।
জামায়াত নিশ্চয়ই সেক্যুলার দেশ চাইবে না। গ্রিন পার্টি বন কেটে বসত বানাবে না। সিপিএম মার্কিনপন্থি হবে না। শিবসেনা গান্ধীবাদ পছন্দ করবে না। কোন দল কী চায়, কেন চায়, পার্টির নীতিমালায় উলি্লখিত।
তবে বিশ্বরাজনীতিতে আজ বিস্তর ওলটপালট। মার্কিনি ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান কিংবা ইংল্যান্ডের টোরি, লেবার পার্টির চেহারা-চরিত্র এখন প্রায় এক। তফাত নেই খুব। একই কথা জার্মানির সিডিইউ (ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন), এসপিডি (সোসালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি) সম্পর্কে। ইউরোপের সব বড় দলের মূল নীতিমালা যাই থাক গণতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের বেলায় একাট্টা।
দুই জার্মানির একত্রীকরণের কুড়ি বছর এখন আর আলোচ্য নয়। আজকের প্রজন্ম, বয়স যাদের কুড়ি থেকে পঁচিশ_ জার্মানি বিভক্ত ছিল কি ছিল না, জানে না। জানতেও অনাগ্রহী। এমনকি থার্ড রাইখ, নাৎসির উত্থান, হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়েও খুব জানে না। তবে এটুকু জানে, নাৎসি পার্টি এ দেশকে ছারখার করেছে, হিটলার ছিল জার্মানির জন্য, দুনিয়ার জন্য ভয়ঙ্কর বদমাইশ।
নিধনযজ্ঞের কারিগর। নিও নাৎসি পার্টি (এনপিডি) ভোট পায় না ঠিকই, কিন্তু বহাল-তবিয়তে আছে। নিষিদ্ধ করা হয় না গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে। 'ভোট পায় না', এটাই-বা কী করে বললাম। জার্মানির উত্তরাঞ্চলের রাজ্য মেকালনবার্গ (কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির অধীনে ছিল) পার্লামেন্টে যথারীতি তেরটি আসন দখল করেছে।
জার্মানির সাংবিধানিক নিয়ম, পাঁচ ভাগ ভোট পেলেই সংসদে সংখ্যা অনুযায়ী আসন পাবে।
দুই জার্মানির একত্রীকরণের আগে পশ্চিম জার্মানিতে চারটি রাজনৈতিক দল ছিল মূল স্রোতে। অবশ্য দুটি দল এসপিডি, সিডিইউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই। ষাটের দশকে গজিয়ে ওঠে এফডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) এবং গ্রিন পার্টি। বাইয়ার্ন রাজ্যের (রাজধানী মিউনিক) সিএসইউর (ক্রিস্টিয়ান সোস্যালিস্ট ইউনিয়ন) জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে।
১৯৪৬ সালে। সিএসইউ আসলে সিডিইউর সিস্টার পার্টি (সহোদরা-দল)।
গত সপ্তাহে (১৮.৯.২০১১) বার্লিন নির্বাচনে ভয়ঙ্কর ঘটনা। বার্লিন যেহেতু রাজধানী, বার্লিন নির্বাচনে গোটা জার্মানির এবং ইউরোপের চোখ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ইউরোপের প্রিন্টিং/ইলেকট্রনিক মিডিয়া বার্লিন নির্বাচন নিয়ে এতটাই মশগুল হয়, কভারেজ দেয় কল্পনাতীত।
কারণ একটিই। এফডিপির ভবিষ্যৎ কী এবং মার্কেলের কোয়ালিশন পার্টনারের মূল্যায়ন। বার্লিন নির্বাচনে দুই ভাগও (১.০৮) ভোট পায়নি এফডিপি। কী কাণ্ড! এসপিডি দশ বছর ধরে শাসন করছে বার্লিন। এবারের নির্বাচনে দুই পারসেন্ট কমলেও বিজয়ী।
সিডিইউর দেড় ভাগ ভোট বাড়লেও বার্লিন শাসন ভাগ্যে নেই। অন্য দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করেও নয়।
লিঙ্কে পারটাইর (বাম দল, মূলত কমিউনিস্ট পার্টি) বিপর্যয় কেন স্পষ্ট হচ্ছে। ভোট কেটেছে পিরাটেন পারটাই। যদিও এগারো ভাগ ভোট পেয়েছে (লিঙ্কে) এবং বিধানসভায় (বার্লিন পার্লামেন্টে) সতের আসনের অধিকারী, কিন্তু দাপট যে কমছে (আগের নির্বাচনে ভোট পেয়েছিল ১৬ ভাগ)।
কারণ, এই প্রজন্মের ভোটাররা কমিউনিজমে বিশ্বাস করছে না। স্বপ্নেও ভাবেনি আঠারো ভাগ ভোট পাবে।
শুরু করেছিলাম 'নামে কী যায়-আসে' বাক্যমালায়। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। বাম দল তথা লিঙ্কের সাপোর্টার।
আড়াই দশকের বেশি বার্লিনে বাম। এক যুগ আগে কানে আসে 'পিরাটেন পারটাই'র নাম। তত্ত্বতালাশ করি। 'পিরাটেন' মানে 'পাইরেট। ' বাংলায় জলদস্যু।
আমরা বলি 'বোম্বেটে দল'। নামেই 'পিরাটেন' (পাইরেট)। কিন্তু দলের নীতিমালা চমকপ্রদ। 'প্রত্যেক বিদেশিকে জার্মান নাগরিকের সমমর্যাদা দিতে হবে। ডিসক্রিমেশন চলবে না।
জার্মান নাগরিকের সুবিধা দিতে হবে। পৃথিবীর যে কোনো মানুষ জার্মানিতে আশ্রয় চাইলে দিতে হবে। বিশ্বে কোনো সীমান্ত থাকবে না। ওয়ান ওয়ার্ল্ড। '
গত দুই নির্বাচনে (জাতীয়) পিরাটেন পারটাই (পার্টি) আড়াই ভাগের বেশি ভোট পেয়েছিল।
তার মানে, জার্মানের জনসংখ্যার ১৮ লাখ। বার্লিন নির্বাচনে ভোট পেয়েছে প্রায় ৯ ভাগ (৮.০৯)। বার্লিন সিনেটে (সংসদে) ১৯ আসন। জলদস্যু তথা বোম্বেটেরা হতবাক। দলের নেতাকর্মীর বয়স কারোর পঁয়ত্রিশের বেশি নয়।
রাজনীতিতে ফ্রেশ।
জার্মানির ডাকসাইটে সাপ্তাহিক 'ডিৎসাইট' পত্রিকার রাজনৈতিক ভাষ্য লেখক ইয়র্গ লাউ লিখেছেন, 'বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ' তার ভাষ্য পড়ে মনে হলো, বাংলাদেশের কোনো যথার্থ গণতান্ত্রিক দল যতই ছোট হোক_ সঠিক এজেন্ডা, নীতিমালা তৈরি করতে পারলে আওয়ামী লীগ, বিএনপির আখেরে খবর আছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।