আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । সহিংস আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এ ব্যবস্থা
Å চিকিত্সা না পেয়ে মারা যাচ্ছে বহু রোগী
Å বিপুল টাকার বিল এড়াতে লাশ নিয়ে যেতে সহিংসতার
কৌশল
রোগী মারা গেলে অবহেলা কিংবা ভুল চিকিত্সার অভিযোগে চিকিত্সকদের উপর হামলা ও হাসপাতাল ভাংচুর শুরু করে দেয় রোগীর স্বজনরা। ইতিমধ্যে এই ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতাল ভাংচুর, হামলায় চিকিত্সক, নার্স ও কর্মচারী আহত এবং গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। কোন কোন হাসপাতাল অর্থদণ্ড দিয়েছে। এখন কোন রোগী মারা গেলে ভাংচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। এটা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে বেশ কিছু দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর মারা গেলে রোগীর অভিভাবক চিকিত্সা অবহেলা ও ভুল চিকিত্সার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে মোটা অংকের বিল না দিয়ে চলে যায়।
নামি-দামি বেসরকারি হাসপাতালে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। এর প্রভাব পড়ছে মুমূর্ষু রোগীদের ওপর। জরুরি বিভাগে মুমূর্ষু রোগীদের তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে পথে বিনা চিকিত্সায় মারা যাচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীদের চিকিত্সা প্রদানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সকরা হামলা ও ভাংচুরের কারণে ভীত সন্ত্রস্ত।
কোন ধরনের দায়-দায়িত্ব না নিয়ে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিভাগ কিংবা স্পেশালাইজড হাসপাতালে রেফার করে দেন। তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা না পাওয়ায় মৃত্যুই মুমূর্ষু রোগীদের ভাগ্যে নির্ধারিত হয়ে যায়। রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি ১০টি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিত্সক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপকালে তারা উক্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিস্তারিত তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মোঃ সিফায়েত উল্লাহ বলেন, চিকিত্সা অবহেলায় কিংবা ভুল চিকিত্সায় কোন রোগী মারা গেলে জড়িত চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। হামলা ও ভাংচুর কাম্য নয়।
ভুল চিকিত্সা কিংবা অবহেলার সঙ্গে জড়িত চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের শক্তিশালী বডি বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) রয়েছে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায় বিচারের জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। রোগীদের সুচিকিত্সার বৃহত্তর স্বার্থে কথায় কথায় হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুর করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মহাপরিচালক। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, হামলা ও ভাংচুরের শিকার হচ্ছে বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল। অপরদিকে হাসপাতালের বিল না দিয়ে হামলা করার প্রবণতা বেড়ে গেছে বেশি।
এ কারণে বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিত্সকরা জানান, হামলা ও ভাংচুরের এবং গ্রেফতার ও নানা হয়রানির ভয়ে এখন থেকে মুমূর্ষু রোগী গেলে তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে কিংবা স্পেশালাইজড হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। অনেক রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন কিংবা কোন জরুরি চিকিত্সা দিলে হয়তো রোগী জীবন ফিরে পেতে পারে। জরুরি বিভাগে তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা সেবা দিলে কোন রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে কিংবা অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। আবার চিকিত্সাবস্থায় রোগী মারা যায়। অনেক রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় জরুরি বিভাগে আসে।
তখন বিবেকের তাড়নায় কর্তব্যরত ডাক্তার রোগী রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। ঐ সময় রোগী মারা গেলে অবহেলা কিংবা ভুল চিকিত্সায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে চিকিত্সক, নার্স ও কর্মচারীকে মারধর এবং ভাংচুর শুরু করে দেয়। এ কারণে গত দুই সপ্তাহ যাবত্ সরকারি হাসপাতাল কিংবা বেসরকারি জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সকরা আগত মুমূর্ষু রোগীদের তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকছেন। ঘটনা দুর্ঘটনায় মাথা আঘাত, হাত ভাঙ্গা, বুকে গুলিবিদ্ধ, হার্টএ্যাটাক কিংবা অজ্ঞান হয়ে গেলে, নানা কারণে গুরুতর অসুস্থ ও আহত হয়ে জরুরি বিভাগে গেলে তাত্ক্ষণিক রেফার করে দেন। এ সব মুমূর্ষু রোগীকে ওয়ার্ডে নিতে কিংবা অন্য হাসপাতালে যানজটের মধ্যে যেতে গিয়ে রাস্তায় বিনা চিকিত্সায় অনেকে মারা যাচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সকরা একই মতামত পোষণ করে তারা ভয়ে তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। চারটি নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীকে আইসিইউ ও সিসিইউতে ভর্তি করে চিকিত্সা সেবা দেয়ার সপ্তাহখানেক কিংবা এক দুই দিন পর রোগী মারা যায়। ভুল চিকিত্সা অথবা চিকিত্সায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হামলা ও ভাংচুর করে বিল না দিয়ে রোগীর লোকজন চলে যায়। দুই সপ্তাহে কয়েক কোটি টাকারবিল থেকে এ সব হাসপাতাল বঞ্চিত হয়েছে। একদল যুবক কোন হাসপাতাল রোগী মারা যায় তা খোঁজ রাখে।
সেখানে গিয়ে তারা হাজির হয়। অভিভাবকদের চিকিত্সায় ভুল ও অবহেলার অভিযোগ করার জন্য প্রভাবিত করে। যা আদায় করা হবে তার অর্ধেক মৃত ব্যক্তির অভিভাবক ও বাকি অর্ধেক উক্ত যুবকরা ভাগাভাগি করে নেয়। এ চুক্তিতে রোগী মারা গেলে অবহেলা ও ভুল চিকিত্সার অভিযোগ তুলে হামলা ও ভাংচুর শুরু হয়ে যায়। এ হামলার ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের গচ্চা দিয়েছেন।
এটা এখন একটি মহলের ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। চিকিত্সা ব্যবস্থা বিদেশমুখী করার কিংবা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ হামলা, ভাংচুর কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জানিয়েছেন। তিনটি সরকারি হাসপাতাল পরিচালক একই মতামত পোষণ করে বলেন, এ হামলা ও ভাংচুর বন্ধ না হলে মুমূর্ষু রোগীদের মৃতের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়তে থাকবে। রাজধানীসহ সারাদেশে দুই সহস্রাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। এদেশে গড়ে ২৫ লাখ লোকের জন্য মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক।
চাহিদার তুলনায় জনবল সীমিত। তারপরও হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন চিকিত্সা সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। হামলা ও ভাংচুরের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, কলেজ অসুস্থ শিক্ষক কিংবা ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করতে এখন চিন্তা-ভাবনা চলছে এমন তথ্য জানা যায়। বিএমডিসির অবস্থা যেন এক কালেক্টরের অফিস। চিকিত্সা অবহেলার অভিযোগ তদন্ত কিংবা কোন ব্যবস্থা ঐ প্রতিষ্ঠান নেয়নি।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ভুল চিকিত্সা ও অবহেলার অভিযোগে মাত্র তিনজন ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে। বিএমডিসির সচিব ডা. জাহিদুল হক বসুনিয়া বলেন, বিএমডিসির জনবল নেই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযোগ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। বর্তমান সরকার বিএমডিসি’র অ্যাক্ট সংশোধন করেছে। এখন সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
বেসরকারি হসপিটাল এন্ড ক্লিনিক ও নার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, সরকারি চিকিত্সা সেবার পাশাপাশি বেসকারি চিকিত্সা সেবার খাত অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় অনেক এগিয়ে গেছে।
কিডনি ও লিভার সংযোজন, বাইপাস সার্জারিসহ জটিল চিকিত্সা ও অপারেশন সফলভাবে হচ্ছে। কোন কোন অপারেশনে বিদেশে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা ব্যয় হয়। এদেশে মাত্র কয়েক লাখ টাকায় অনেক চিকিত্সা সম্ভব। এরফলে বিদেশগামী রোগীদের মধ্যে ৭০ ভাগ এদেশে চিকিত্সা সেবা গ্রহণ করছে।
বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে রোগী মারা যাবে এবং হাজার হাজার রোগী সুস্থ হবে। এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে চিকিত্সা অবহেলা ও ভুল হলে জড়িত চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে তারা একমত।
কথায় কথায় হাসপাতালে হামলা, ভাংচুর, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং চিকিত্সাধীন শত শত রোগীর চিকিত্সা ব্যাহত করা কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে সকলকে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান। বিএমএ সাম্প্রতিককালে চিকিত্সকদের ওপর হামলা, ভাংচুর, গ্রেফতার, হয়রানি ও কিডনি বেচাকেনার সঙ্গে চিকিত্সকদের জড়ানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ভুল চিকিত্সা কিংবা অবহেলার সঙ্গে জড়িত চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা নিয়ে বিএমএ দ্বিমত পোষণ করে না। তবে হাসপাতালে ভাংচুর ও হামলা করা কোন অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না।
এ অবস্থা চলতে থাকলে চিকিত্সা সেবায় বড় ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। রোগীদের প্রাণহানী ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এই সকল, বিষয়ে সকলকে ধৈর্য্য ও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।