আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারফিউম বিষয়ক কোড থাকা জরূরী

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে আছে, আমাদের পাশের বিল্ডিংয়েই সম্ভবতঃ, এক ভদ্রলোক এসেছিলেন, বিদেশ ফেরত। শুধু সেইযুগে কিনা জানিনা, তবে বিদেশ ফেরত মানুষেরা দেশের আর বাকী দশজনের চেয়ে সম্ভবতঃ নিজেকে আলাদা ভাবার চেষ্টা করতেন, সেরকম আচরণ করতেন, যেটাকে আমরা বলতাম "ফুটানি দেখানো"। ফুটানির কারণেই কিনা জানিনা, এই ভদ্রলোকও যখন বাসা থেকে বেরুতেন, তখন আর দশজনের চেয়ে তিনিখতেন সম্পূর্ণ আলাদা, কারণ, কমসেকম একবোতল পারফিউম একবারেই গায়ে মেখে বেরুতেন তিনি। হয়তো এমনও হতে পারে যে ভদ্রলোকের পারফিউমের ব্যবসা ছিলো, অথবা বিদেশে পারফিউমের দোকানে তিনি কাজ করতেন। যেটাই হোক, ভদ্রলোক যখন রাস্তায় বেরুতেন তখন আমরা বন্ধুরা না দেখেও বলে দিতে পারতাম যে তিনি বের হয়েছেন, ভুরভুর পারফিউমের ঘ্রাণে চারদিক ভরে যেতো, আমরা বলতাম, "মিস্টার সেন্ট আইতাছে"।

মিস্টার সেন্ট যেহেতু তাঁর ভুরভুরে পারফিউমের ঘ্রাণ রাস্তায় বিতরণ করতেন, তাই আমরা সেটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতামনা, বরং কিছুক্ষণের জন্য মিষ্টি একটা ঘ্রান ছড়াতো আশপাশে -- খারাপ কি! তবে ভদ্রলোক যদি কখনও এক ঘরে আড্ডা দেয়ার প্রস্তাব দিতেন, তবে তখন না হলেও এখনকার আমি যতই রূঢ় শোনাক, প্রত্যাখ্যানই করতাম। এরকম একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিলো একবার গাড়ীতে, এক বন্ধুর গাড়ীতে উঠেছিলাম এক রেস্টুরেন্টের পার্টি শেষে; হঠাৎ দেখতে পেলাম একটু দূর থেকে দুই মরোক্কান মেয়ে ছুটে আসছে একই গাড়ীতে উঠতে, তাদেরকেও পথে নামিয়ে দেয়া হবে। খানিকটা পুলকিত বোধ করলেও, যেই না এই দুজন গাড়ীর দরজাটা খুললেন, যেন কয়েক মণের এক ভয়াবহ ধাক্কা খেলাম! ভকভক করে পারফিউমের গন্ধে (এটাকে আমি কোনভাবেই ঘ্রাণ বলবোনা, মেরে ফেললেও না) পুলক-টুলক তো উড়ে গেলোই, সেটা যেন গাড়ীটাকে দৈত্যের মতো গ্রাস করে ফেললো; মনে হলো এরা পারফিউমের বোতল না, একেবারে ড্রামে ডুব দিয়ে পার্টিতে এসেছে! সেদিন কোনভাবে গাড়ীতে ঘন্টা আধেক সহ্য করেছি, তবে এরপর কখনও এদের দুজনের কাউকে বাসে উঠতে দেখলে আমি সচেতনভাবে সেই বাস এড়িয়েছি। গাড়ীর স্পীডের সাথে শীতের মধ্যে জানালা খুলে তাও সহ্য করা যায়, মন্থরগতির বাসে বসে ঝাঁকুনি খেতে খেতে এই গন্ধ আধাঘন্টা সহ্য করা সম্ভব না!! সেই দুঃসহ স্মৃতি আবার ফিরে আসবে ভাবিনি। অথচ মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক, হায়! ম্যান প্রপোজেস, গড ডিসপোজেস।

খুব বেশীদিন না, অফিসে এক ভদ্রমহিলা ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন, গণযোগাযোগ বিভাগে, অনেক অভিজ্ঞ, ২০-২৫ বছর ধরে কাজ করছেন হয়তো। সবাই দেখি খুব সমীহ করে কথা বলে। কিন্তু সমস্যা হলো ইনিও ড্রাম না হোক, পেপসির বোতল সমপরিমাণ পারফিউম মেখে অফিসে আসেন, যেদিকটা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন, "একটা দাগ রেখে যাচ্ছেন"। তবে সেই দাগ অন্যরা কতদিন সহ্য করবে সেটাই ভাবছি। মনে হচ্ছে, শীগগগিরই কোম্পানীর আইডিয়া ব্যাংকে প্রস্তাব দিতে হবে, ড্রেসকোডের মতো পারফিউম কোডও শুরু করতে, যেমন ধরুন, কত সিসির বেশী পারফিউম একবারে ব্যবহার করা যাবেনা -- এসব নীতিমালা।

অবশ্য সিসি'র চেয়ে আলোর পরিমাণ (লুমেন) বা শব্দের পরিমাণ (ডেসিবেল)'র মতো গন্ধের পরিমাণেরও কোন একক প্রস্তাব করা গেলে আরো ভালো। বাস-ট্রেনের বেলায়ও একই নিয়ম করা লাগবে, একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বেশী পারফিউম মাখা লোকজনকে জোর করে নামিয়ে দেয়া দরকার। অনেক সহ্য করেছি, আর না!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।