আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হঠাৎ করেই রাজনীতিতে সংঘাতের পূর্বাভাস। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার একটি চমৎকার বিবরন। লেখাটি ভাল লাগল, তাই শেয়ার করলাম।

ব-দ্বীপ মানে বদ্‌ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক। হঠাৎ করেই রাজনীতিতে সংঘাতের পূর্বাভাস। সমঝোতা নয়, বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে সরকার ও বিরোধী দল।

সরকারি পুলিশ বাহিনী ও বিরোধী দল মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াতের অ্যাকশনের পর শাসকদলও রাজপথ দখলে নিতে মাঠে নেমেছে। শুরু থেকেই সরকার পুলিশকে দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনের পথ নেয়। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও এ চিত্র দেখা গেছে। এতে ফের অগি্নগর্ভ হচ্ছে রাজনীতি ও রাজপথ।

পল্টনে ২৭ সেপ্টেম্বর চার দলের মহাসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আগেই সোমবার জামায়াত-পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ, অগি্নসংযোগ, গুলি, টিয়ার গ্যাস, পুলিশকর্তাসহ শতাধিক আহতের ঘটনা রাজনীতিতে লু হাওয়া এনে দেয়। রাত গভীর হতে না হতেই জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচির সিদ্ধান্ত রাজনীতি উত্তপ্ত করে দিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, বিএনপি ইস্যুবিহীন হরতাল ডেকেছে। কঠোর হাতে দমন করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাধা এলেই আরও কঠোর কর্মসূচি।

হরতাল কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজপথে মুখর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ। আজ নগরীতে মহানগর আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। তারা মাঠে ও নামবে হরতালের দিন। তাই সর্বত্র আশঙ্কা ফের অশান্ত সংঘাতময় হচ্ছে রাজপথ। সহিংস হবে নাতো? উদ্বিগ্ন মানুষের প্রশ্ন।

এদিকে সবার মনেই নাটকীয়ভাবে জন্ম নিল নতুন শঙ্কা। রাজনীতি কি তবে সংঘাতের পথেই হাঁটতে যাচ্ছে? মহাজোট সরকারের শুরু থেকেই দমননীতির মুখে পতিত যে জামায়াত রাজপথেই নামতে পারেনি, তারা সেদিন সংগঠিত হয়ে নেমেই বাধা ভেঙে রীতিমতো টানা দুই ঘণ্টা ঢাকা নগরীতেই পুলিশি আক্রমণ প্রতিরোধ গড়ে লড়াই করল। পুলিশ প্রতিবারের মতো তাদের নামতে না দেওয়ার নীতিতে অটল থাকলেও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সংগঠিত জামায়াতের কৌশল আগাম জানতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর জনদুর্ভোগের বেহাল অবস্থা মিলে অস্থিরতায় দেশ। রবিবার ভূমিকম্পের ঘাম ঝরানো আতঙ্ক শেষ হতে না হতেই সরকারের তরফ থেকে আচমকা জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী যখন অসহায়ের মতো বলছেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী বিপর্যয় প্রতিরোধে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই; তখন আরেকদিকে সিএনজি গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও যানজটে অচল-অস্থির নগরবাসীর জন্যই নয় দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অসন্তোষ বয়ে এনেছে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, হঠাৎ করে না বাড়িয়ে দফায় দফায় বাড়াতে পারত সরকার। কিন্তু কে শোনে কার কথা অবস্থায় চলছে সরকার ও দেশ। সরকারের এই সিদ্ধান্তের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামই বাড়েনি, এতে প্রভাব পড়েছে পরিবহন সেক্টর ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ কাঁচাবাজারের ওপর।

সোমবারই তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ ঢাকা-সিলেট সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদে নামে। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কাঁচাবাজারের মাছ-সবজির দামে আগুন সাধারণ মানুষকে ঘর্মাক্ত করে দিচ্ছে। অসহায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী মানুষ মাসের হিসাব মেলাতে পারছে না দেশজুড়ে আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, শেয়ারবাজারে ৩২ লাখ বিনিয়োগকারীর ক্রন্দন এখন মতিঝিল পাড়ায় প্রতিবাদ-অবরোধ গড়ে তুলেছে। জ্বলছে আগুন। প্রতিদিন হচ্ছে বিক্ষোভ।

এখনো শেয়ার ব্যবসার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তদন্তে প্রমাণ হয়েছে আমিনবাজারে নিহত ছয় ছাত্র ডাকাত ছিলেন না। কাল মায়া বলেই ফেললেন, আজ থেকে রাজপথে যাত্রা শুরু হলো। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা মানুষ ও পুলিশের মধ্যে বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র কাদেরের ওপর বর্বর নির্যাতন, প্রতিদিন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানিয়ে দিচ্ছে কেউ ভালো নেই, কেউ স্বস্তিতে নেই।

নৌপথ, সড়কপথ, রেলপথ_ কোনো পথই চলাচলের জন্য নিরাপদ নয়। অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখছে নিয়ত। ব্যর্থ মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি উঠছে হরহামেশা। সরকারের সমালোচনায় বিরোধী দলের চেয়ে এগিয়ে আছেন খোদ মহাজোট নেতারা। মন্ত্রিসভায় রদবদলেরও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগও নেই। আছে মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন অতিকথন। তবু সরকার তেত্রিশ মাসের শাসনকাল কাটিয়ে দিচ্ছে নানা আশার বাণী শুনিয়ে আর বিগত সরকারগুলোর ওপর ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে। এতে মানুষের অস্থিরতা-অসন্তোষ কমছে না বাড়ছে। যানজটে ঢাকা এখন অচল নগরী।

মানুষ কোথায় যাবে, কতটা জনদুর্ভোগের দহন সইবে তা-ও জানে না। প্রধান বিরোধী দল সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। সংসদ সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া দূরে থাক সরকারের জবাবদিহিতার কাঠগড়াও হতে পারেনি। মানুষের হয়ে সেখানে গিয়ে বিরোধী দল কথা বলে না। এখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ২৭ সেপ্টেম্বর পল্টন থেকে চার দলকে একমঞ্চে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে তাদের শরিক জামায়াতে ইসলামী সোমবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের গাড়িসহ যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিতর্ক শেষ হতে না হতেই নির্বাচন কমিশনে নতুন নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সরকার হাঁটছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে গণরায় নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে। বিএনপি বলে দিয়েছে দলীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা এইচ এম এরশাদ ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অস্থির সময় পার করছেন।

পর্যবেক্ষরা বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ছাড়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ওয়ান-ইলেভেন উত্তর টর্নেডোর কবল থেকে মহাজোট শাসনামলের ঝড়ের কবলে পতিত খালেদা জিয়া ও তার ছেলেরা এবং বিএনপি রীতিমতো রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে। এ অবস্থায় তারাও দলীয় শক্তি যাই থাকুক তাই নিয়েই আক্রমণভাগে নামছেন। এমনি অবস্থায় চারদিকে জন-অসন্তোষ ও অস্থিরতার মুখে শাসক বনাম বিরোধী দল মুখোমুখি হলে রাজনীতি সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মন্ত্রীদের অতিকথন সরকারের জনপ্রিয়তায় বাড়তি বিপর্যয় এনেছে। মানুষের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যতটা না দাঁড়িয়েছে তার চেয়ে মহামান্য আদালত দাঁড়িয়েছেন বেশি। যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ হবেই_ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরেও উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রতীকী বিচার মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই বিচার ছাড়াও একুশের বর্বরতম গ্রেনেড হামলা এবং পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারও সরকারের হাতে বড় ইস্যু। জাতীয় রাজনীতিতে সমঝোতার সব পথই যেন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বিএনপিও এতদিন জামায়াতসহ শরিকদের আড়ালে রাখলেও এবার আর রাখঢাক ছাড়াই ২৭ তারিখ একমঞ্চে উঠতে যাচ্ছে। বেসরকারি টেলিভিশনের ওপর সরকার সেন্সরশিপ আরোপ করতে যাচ্ছে_ এমন সংবাদেও মুক্তচিন্তার মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজপথে ২৭ তারিখের আগেই জামায়াত-পুলিশের অ্যাকশনে আচমকা অগি্নগর্ভ হওয়ার আলামত দেখা দেবে এমনটা কেউ ভাবেননি। মুল লেখাটি এখানে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।