আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাকড়শা’র জালে আঁটকা পড়ছে বিএনপি

বিএনপি এখন মেরুদন্ডহীন একটি দলে পরিণত হয়ে, খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। দলটির ভারসাম্য রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে এখন। দুর্বল নেতৃত্ব, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মামলা-মোকদ্দমা আর আভ্যন্তরীন দলীয় কোন্দলে কোনঠাসা বিএনপি। নতুন করে জেগে উঠার শত চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে বারবার। আওয়ামী সরকারের চরম ব্যার্থতার মাঝেও, গত কয়েকটি সরকার বিরোধী আন্দোলনের ফলাফল দেখে, এমনটাই মূল্যায়ন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

বিগত কোন আন্দোলনে দাড়াতেই পাড়েনি বিএনপি। অথচ দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী সরকারের উপর, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত চরম হতাশ। যুদ্ধাপরাধ প্রশ্নে বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতৃত্ব জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে বিদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও মনে হয় ভাবতে শূরু করেছিল বিকল্প কিছু। দেশবাসীও মনে প্রাণে আশা করেছিল, বিএনপির এবার মনে হয় বোধোদয় হবে।

কিন্তু জামাত মনে হয় বিষয়টি আঁচ করতে পেড়েছে। খুব সম্ভবত সেই কারণেই তারা বিশেষ কৌশল অবলম্ভন করেছে। আর ঐ কৌশলের অংশ হিসাবে, ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের শক্তির মহড়া প্রদর্শনের মাধ্যমে, বিএনপিকে হয়তো বুঝাতে চেয়েছে আমরা ফেলনা নই। গত আড়াই বছরে আওয়ামীলীগের শত ব্যার্থতার মাঝেও, একটি আন্দোলনও তোমরা জমাতে পাড়নি। আর আমরা কি করতে পারি দেখ।

আমাদের ছাড়া তোমরা অচল। জামাত ১৯ সেপ্টেম্বর আচম্কা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, তা রাজনৈতিক মেরুকরণে, জামাতের নতুন রূপ। জামাতের এই রূপ বাঙ্গালী জাতি আগে কখনও দেখেনি। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্য দিয়ে জামাত বিএনপিকে ধ্বংসাত্বক রাজনৈতিক দর্শনের দিকে ডাইভার্ট করে ফেলছে। তারই প্রমাণ মিলে ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ডাকা হরতালে।

বিএনপি সহসাই ধ্বংসাত্বক রাজনীতিতে যাবেনা এই রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও জামাতের শক্তি প্রদর্শনের সাথে সাথেই বিএনপি হরতালের ডাক দিল। তাহলে কি বিএনপি জামাতের শক্তির উপর ভর করেই হরতাল আহ্বান করল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ঘটনাটা আচমকা নয়, পূর্ব পরিকল্পিত। তাই যদি হয়, তাহলে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী এখানে ব্যার্থতার পরিচয় দিল। তারা কোন পূর্বাভাসই সরকারকে আগে দিতে পারলনা। নাকি পূর্বাভাস দিয়েছিল কিন্তু, মস্তকবিহীন জামাতকে দুর্বল ভেবে সরকার তা আমলে নেয়নি, সেটা আমার জানা নেই।

এমনটি হওয়াটা অশ্বাভাবিক নয়। আপাত দৃষ্টিতে এটা সরকারের ব্যার্থতা মনে হলেও, এই ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে আওয়ামীলীগই লাভবান হবে বেশি। কারণ এখন বিএনপি জামাতকে আর ত্যাগ করার কথা সহজে ভাববে বলে মনে হয় না। জামাত জোটে থাকলে তরুণ প্রজন্মের ভোট হারাবে বিএনপি, এতে সন্ধেহের কোন অবকাশ নেই। আর তরুণ প্রজন্মের ভোট ছাড়া বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবে, এটার সম্ভাবনা খুবই কম।

তাছাড়া বিএনপির সাম্প্রতিক পরিকল্পনা- বৃহত্তর জোট গঠনে জামাত এখন চরম বাঁধা। পরবর্তী টার্মে যদি জোট ক্ষমতায় যায়ও, গতবারের চেয়ে এবার জামাতের দাবী দাওয়ায় বিএনপির কাছ থেকে বিশাল একটি হিস্যা যে তারা আদায় করে নেবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাপ যেমন তার শরীরের আকৃতির চেয়েও বড় খাদ্যকে গিলতে থাকে ধীরে ধীরে, আবার ক্ষমতায় গিয়ে কঠিন মারপ্যাচে জামাতও বিএনপিকে ঐরকম গিলে খাবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ বর্তমান টার্মে যুদ্ধাপরাধী বিচার কার্য শেষ করবে বলে মনে হয়না। পরবর্তী টার্মের জন্য ঝুলিয়ে রেখে যাবে।

আর জামাতের চাপে ঐ ঝুলন্ত বিচারকার্য তখন কোন দিকে নেবে বিএনপি। সেটাইতো আওয়ামী লীগ কামনা করবে। কারণ এর চেয়ে বড় আন্দোলনের হাতিয়ার আর কি হতে পারে? অন্যদিকে জামাত নির্ভর আন্দোলনে কখনও পাবলিক সমর্থন জোড়ালোভাবে বিএনপির পক্ষে আসবে বলে মনে হয়না। বিএনপি যতই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিকনা কেন, সবই জামাতের কারণে যুদ্ধাপরাধী বিচার কার্য বাধাগ্রস্থ করার কালীমা হিসাবে লেপ্টে যাবে বিএনপির কপালে। এই কালীমা বিএনপি দূর করবে কিভাবে? জোট সরকারের গত টার্মে বিএনপি মজে ছিল দুর্নীতি, লুটতরাজ আর আখের গোছানোর কাজে।

কিন্তু জামাত মজে ছিল তাদের সত্যিকার আখের গোছানোর কাজে। তাদের দুর্নীতি কোথায় বিএনপি গুণাক্ষরেও টের পায়নি। টাকা তাদের প্রয়োজন ছিলনা। তাদের টাকার অভাব নেই, এই কথা সবারই জানা। তাই তারা টাকার পেছনে ছুটেনি।

তারা ফিট হয়ে গেছে জায়গামতো। দেশে এমন কোন সেক্টর নাই, যেখানে যথাস্থানে জামাতের লোক ফিট করা হয় নাই। তারা কচ্ছপের গতিতে ঠিকই এগিয়ে চলেছে তাদের লক্ষ্যে। এটাকি বিএনপি জানে? এখন শত চেষ্টা করলেও বিএনপি জামাতকে ত্যাগ করতে পারবেনা। জামাতের মাকড়শার জালে আষ্টে-পিষ্ঠে আটকে গেছে বিএনপি।

বাঘ আর ব্রাহ্মনের গলল্পটা সবারই জানা- খাঁচায় বন্দী বাঘের মধুর আকুতিতে গলে গিয়ে, বেচারা ব্রাহ্মন বাঘকে মুক্ত করে দেওয়ার পর ঐ ব্রাহ্মনকে যেমন করে বাঘ খেতে আসে, ঠিক তেমনি করে বিএনপিকে খাবে জামাত। সেই দিন আর বেশি দূরে নেই।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।