আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন……

“আমি নিরালায় একা খুজেঁ ফিরি তারে, ‍স্বপ্নবিলাসী, কল্পনাপ্রবণ আমার আমিরে.........” অনেকক্ষন ধরে আমি ওকে লক্ষ্য করছিলাম। নারীদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের বর্ণনা আমি কখনই দিতে পারি না, সে চেষ্টাও তাই করবো না। মেডিকেল কলেজে প্রথম দিন এসে আমার এই সহপাঠিনীকে দেখে আগামী পাঁচটা বছর খুব কম সময় মনে হচ্ছিল। কিভাবে কথা বলা শুরু করা যায় চিন্তা করছিলাম। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! হঠাৎ দেখি সে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে!! আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম কিনা বুঝতে পারছিলাম না!!! আমার মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন।

ভর্তি হয়েছিলাম জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। আমার বাবা-মা দুজনেই তখন দেশের বাইরে। সকালবেলা যখন আমার ছোট বোন আর খালার সাথে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন হতে এগারসিন্দুর ট্রেনে উঠে বসি তখনও ভাবিনি এত সুন্দর ক্যাম্পাসে আসবো। দুপুর একটায় বাজিতপুরে নেমে যখন কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকলাম, আমার মনটা জুড়িয়ে গেলো। আমি যেন এক সবুজের সমারোহের মধ্যে চলে আসলাম।

আমার ক্যাম্পাস, আমার ভালোবাসা অফিসে ঢুকতে গিয়েই দেখি আরো কয়েকজনের মতো সে-ও অপেক্ষা করছে। আমার মন তখন বাক-বাকুম করছিল কি না জানি না, শুধু মনে আছি সম্বিত ফিরে পেলাম ওর কথায়, “আমি শিফা, তুমি?” আমার নামটা মনে হয় ঠিকঠাকমতোও বলতে পারিনি তখন, চোখের সামনে রঙ্গিলার ঊর্মিলাই ভাসছিল। অফিসের কাজ শেষ করে হোস্টেলে আসলাম। আমার প্রথম হোস্টেল জীবন, প্রথম রুম নম্বর ১০৮ আর প্রথম রুমমেট ফয়েজ। ফয়েজ-সেও ঢাকা থেকে আসা, প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা ( অবশ্যই শিফার মতো নয়)।

আমার বোন আর খালাকে বিকালের ট্রেনে বিদায় দিয়ে যখন রুমে আসি, ফয়েজের প্রথম কথাই ছিলো আমার কাজিনের সাথে আমার সম্পর্ক কত দিনের। অনেক কষ্টে বোঝাতে পারলাম সে আমার আদরের আপন ছোট বোন (পরে জানতে পারলাম প্রথম ছয় মাস ফয়েজ আমার কথা বিশ্বাসই করেনি)। আছরের নামাযের কিছু আগে আমাদের রুমে এক কিম্ভুতকিমাকার ছেলে ঢুকলো, তার কথাবার্তার কিছুই ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না, খুব ছটফটে, সে বাংলাই ঠিকমতো বলতে পারছিল না। খুব ভয় পেয়ে গেলাম, ভাবলাম সব সিনিয়র ভাইরা যদি এরকম হয়, তাহলে খবরই আছে। হঠাৎ করে সে বলল, চল নামায পড়তে যাই।

বড় ভাইয়ের কথা, ফেলা বড় দায়, তাও আবার প্রথম দিন? হোস্টেলের মসজিদে নামায পড়তে গিয়ে দেখি সেই বড় ভাই নেই। নামায শেষ করে যেই বের হবো-শুনলাম আজ গ্রাস্তের দিন, অতএব চরম ক্লান্তি সত্ত্বেও মাগরিব পর্যন্ত মসজিদে থাকতে হলো। মনে মনে সেই বড় ভাইয়ের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছিলাম। রাতে একব্যাচ সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের সবাইকে তাঁদের একজনের রুমে ডাকলো, আমাদের সাথে নাকি পরিচিত হবে। সেখানে গিয়ে দেখি, বিকালের সেই বড় ভাই দাঁড়িয়ে বলছে, “ আমি আশিক, আমেরিকা থেকে এসেছি”(আমেরিকান-বাংলাদেশী, ফরেন কোটায় পড়তে এসেছিলো)।

আমি পারলে তখন ওকে কাগজের টুকরার মতো ছিঁড়ে ফেলি। আমাদের পরিচয়ের পালা শেষ হবার পর একজন ভাইয়া বললো, “তোমাদের সাথে আমার এক বান্ধবী ভর্তি হয়েছে, এক বছর ড্রপ দিয়ে”। আমরা সবাই বুঝতে পারলাম-এটা একটা সতর্কবার্তা, যাতে সেই মেয়েটার কাছে কেউ প্রেমপত্র না দেয়। আমাদের অনেকেই একটু নড়াচড়া করে ঠিকমতো বসলো। আর আমার মাথায় আশিককে কিভাবে শায়েস্তা করবো সে চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

হঠাৎ করে শুনতে পেলাম ভাইয়া মেয়েটার নাম বলছে, “শিফা”! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.